রংপুরের মিঠাপুকুরে আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠেয় সপ্তম দফার ইউপি নির্বাচনে এক ইউপি সদস্য পদপ্রার্থীকে জিতিয়ে দিতে সাড়ে ৪ লাখ টাকায় চুক্তিবদ্ধ হওয়া সেই উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আব্দুল হান্নানকে স্ট্যান্ড রিলিজ করে কুড়িগ্রাম জেলায় সংযুক্ত করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের নির্দেশে ওই কর্মকর্তাকে তাৎক্ষণিক রিলিজড করা হয়। একইসঙ্গে জেলার পীরগাছা উপজেলার নির্বাচন কর্মকর্তা শোয়েব সিদ্দিকীকে মিঠাপুকুরের অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওেয়া হয়েছে।
বুধবার (২ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় একডি অডিও ক্লিপ সময় নিউজের হাতে আসে।
ওই ক্লিপে শোনা যায় রফিকুল ইসলাম নামে এক প্রার্থীকে জয়ী করতে ভোটকেন্দ্র থেকে প্রতিপক্ষের লোকজনকে বের করে দেওয়া এবং ভোটের আগে অন্তত ৩০০ ব্যালট পেপার সরবরাহের চুক্তি করেন ওই নির্বাচন কর্মকর্তা। ক্লিপে সাড়ে ৪ লাখ টাকা লেনদেন এবং পুরো পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করতেও শোনা যায় তাদের।
উপজেলার বালারহাট ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে সদস্য পদে ফুটবল প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী রফিকুল ইসলাম গোপন চুক্তির বিষয়টি প্রকাশ হওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করেন। তবে দুই দফায় নিবার্চন কর্মকর্তা আব্দুল হান্নানকে সাড়ে ৪ লাখ টাকা দেওয়ার কথা স্বীকার করেন তিনি। প্রথম দফায় এক লাখ ও আরেক দফায় তাকে সাড়ে ৩ লাখ টাকা দিয়েছেন বলে জানান রফিকুল ইসলাম।
বুধবার অডিও ক্লিপের বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কর্মকর্তা আব্দুল হান্নান বলেন, এত কথা শোনার সময় নেই। বরং সময় নিউজকে তার বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ দেওয়ার পরামর্শ দেন।
আব্দুল হান্নানের এই ঘটনার বিষয়ে আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা এসএম সাহাতাবউদ্দিনকে অবগত করা হলে, তাৎক্ষণিকভাবে তিনি জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ফরহাদ হোসেন ও ইসি সচিবালয়কে অবগত করেন।
মহামান্য রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সহকারী সচিব আব্দুল্লাহ আল মোতাহসিম একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেন। প্রজ্ঞাপনে ৩ ফেব্রুয়ারির (বৃহস্পতিবার) মধ্যে দুই কর্মকর্তাকে বর্তমান কর্মস্থল থেকে অবমুক্ত করা এবং জনস্বার্থে অবিলম্বে এই আদেশ কার্যকরের নির্দেশ দেওয়া হয়
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ফরহাদ হোসেন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, এরইমধ্যে আব্দুল হান্নানকে অবমুক্ত করার পর শোয়েব সিদ্দিকীকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে কথা বলতে অভিযুক্ত আব্দুল হান্নানের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। অপরদিকে, ফোন বন্ধ পাওয়া যায় ইউপি সদস্য পদপ্রার্থী রফিকুল ইসলামেরও।
এদিকে নিজের জয় নিশ্চিত করতে টাকার বিনিময়ে নির্বাচন কর্মকর্তার সহায়তা গ্রহণের কথা গণমাধ্যমের কাছে স্বীকার করলেও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দীতাকারী রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণের কথা উল্লেখ করা হয়নি প্রজ্ঞাপনে। তবে স্থানীয়ভাবে আচরণবিধি ভঙ্গের জন্য স্থানীয়ভাবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা।