গাজীপুর: গাজীপুর মহানগরীর পৃথক স্থানে গত ২৪ ঘন্টায় আলাদা ঘটনায় ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় হাইসিউকিউরিটি কারাগারে বন্দি মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত এক আসামী, মহানগরীর পূবাইল থানায় সড়ক দূর্ঘটনায় অজ্ঞাত এক নারী রয়েছে। এছাড়া মহানগরীর কাশিমপুরে দুইজন, কোনাবাড়ীতে একজন, টঙ্গীতে ৩ জন এবং জয়দেবপুর থানা এলাকায় একজনসহ মোট ৭ জনের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
কাশিমপুর কেন্দ্রীয় হাইসিকিউরিটি কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মো: গিয়াস উদ্দিন জানান, ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত কয়েদী আবুল কালাম (৪০) ২০১৬ সাল থেকে কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে বন্দি ছিলেন। তিনি একটি হত্যা মামলার আসামি ছিলেন। বৃহস্পতিবার সকালে বুকে ব্যথা অনুভব করায় তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাকে কারা হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসা জন্য গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত্যু ঘোষণা করেন।
তিনি আরো জানান, আবুল কালাম পাবনা জেলার আতাইকোলা থানার তেলি গ্রামের ইউসুফ আলীর ছেলে। মৃত কালামের লাশের ময়না তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। আইনি প্রক্রিয়া শেষে লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
এদিকে, গাজীপুর মহানগরীর পূবাইল থানার এসআই শরীফ জানান, পুবাইল ধানাধীন রেলগেইট এলাকায় বৃহস্পতিবার সকালে অজ্ঞাত গাড়ী চাপায় মানসিক ভারসাম্যহীন এক নারীর (৫০) মৃত্যু হয়েছে। তার মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তার নাম পরিচয় পাওয়া যায়নি।
গাজীপুর মহানগরীর কাশিমপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহবুবে খোদা জানান, হাসানুজ্জামান (৩৮) মহানগরীর জিরানী বাজার এলাকায় পল্লল প্রিন্টিং প্রেসে সহকারী ম্যানেজার হিসাবে কাজ করতেন। এ কারখানায় ১৭/১৮ জন লোক কাজ করে। গত বুধবার দুপুরে সবাই দুপুরের খাবারের জন্য বাইরে গেলে হাসানুজ্জামান কারখানার দোতলায় ভীমের সাথে ঝুলে আত্মহত্যা করেন। পরে খবর পেয়ে বিকালে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে। একই থানার এলাকার বারান্দা সুবজ কানন এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন আলমগীর (২০)। একই দিন বিকালে নিজ ঘরের আড়ার সাথে ঝুলে আত্মহত্যা করেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘরের দরজা তার লাশ উদ্ধার করে।
গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গী পূর্ব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাভেদ মাসুদ জানান, গত বুধবার বিকালে তৈরী পোশাক শ্রমিক নীপা আপক্তার (২১) মহানগরীর দত্তপাড়া এলাকায় ভাড়া বাসায় ঘরের আড়ার সাথে ঝুলে আত্মহত্যা করেছে। তিনি আরো জানান, বৃহস্পতিবার ভোরে একই থানা এলাকার গাজীপুরায় নিজ বাড়ীতে ঘরের ভিতর ঝুলে আত্মহত্যা করেন নাঈম আহমেদ (২১)। একই থানাধীন এরশাদ নগরের ভাড়া বাসায় হীরা আক্তার তন্বি (২০) ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। তিনি পোশাক কর্মী ছিলেন। তিনি আরো জানান, স্বজনরা খবর দিলে পুলিশ সবগুলো লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়না শেষে মরদেহ স্বজনদের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে।
মহানগরীর কোনাবাড়ী থানার এসআই ইমতিয়াজ জানান, কোনাবাড়ী থানা এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন নাজিম উদ্দিন-রাবেয়া দম্পতি। রাবেয়া স্বাসকষ্টসহ বার্ধক্য জনিত নানা রোগে ভূগছিলেন। বৃহস্পতিবার ভোরে ঘুম থেকে ওঠে নাজিম উদ্দিন ফজরের নামাজ আদায় করতে মসজিদে যান। নামাজ শেষে ফিরে এসে বাড়ীর বারান্দায় ধর্নার সাথে রাবেয়ার (৮০) ঝুলন্ত দেহ দেখে ডাকাডাকি করলে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে লাশ নামায়। পরে খবর পেয়ে খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে লাশ উদ্ধার করে মার্গে পাঠায়।
গাজীপুর জেলার জয়দেবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহতাব উদ্দিন জানান, সদউপজেলার বাড়ীয়া এলাকায় মুদি দোকানদার কাশেম কাজী (৪০) অজ্ঞাত কারণে ইদুরের বিষপান করলে স্বজনরা তাকে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এবিষয়ে বৃহস্পতিবার থানায় অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। পরে স্বজনদের আবেদনের প্রেক্ষিতে বিনা ময়না তদন্তে লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে।
মৃতদের স্বজনরা জানায়, ঘরের ভেতর ঝুলন্ত মৃতদেহ দেখে পুলিশে খবর দেয়ার পর খবর পেয়ে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে আসে। তবে কি কারণে আত্মহত্যা করেছে তা জানা যায়নি। অন্যদিকে পুলিশ বলছে, স্বজনদের মাধ্যমে খবর পেয়ে পুলিশ মরদেহ গুলো উদ্ধার করা হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে নিহত স্বজনদের কাছে মরদেহ হস্তান্ত করা হয়েছে।