আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বর্তমান ও সাবেক ৭ কর্মকর্তার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের দেয়া নিষেধাজ্ঞার পর নতুন শঙ্কা দেখা দিয়েছে পোশাক খাতে। যুক্তরাজ্যের ক্রেতারা নিষেধাজ্ঞার কারণ দেখিয়ে আমদানি-রপ্তানিতে ব্যবহার হওয়া ঋণপত্রে (এলসি) বিশেষ একটি ধারা যুক্ত করে দিচ্ছেন। অতি সম্প্রতি যুক্তরাজ্যভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে এমন ধারাযুক্ত ঋণপত্র পাঠানো হয়েছে দেশের একজন গার্মেন্ট ব্যবসায়ীর কাছে। যুক্ত হওয়া ধারাটির কারণে বিদেশি ক্রেতাদের সঙ্গে অর্থ আদান-প্রদানে জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।
গত রোববার বিশেষ ধারা সংবলিত ঋণপত্রটি পান বাংলাদেশ গার্মেন্টস বায়িং হাউজ এসোসিয়েশনের (বিজিবিএ) সভাপতি কাজী ইফতেখার হোসেন। ধারায় ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে ক্রেতা প্রতিষ্ঠান বলেছে- জাতিসংঘ, ইইউ, যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ও সংস্থাগুলোর দ্বারা আরোপিত নিষেধাজ্ঞার কারণে এ ডকুমেন্টারি ক্রেডিট সম্পর্কিত লেনদেনে অক্ষম হতে পারি। নিষেধাজ্ঞার লঙ্ঘন ঘটলে আমরা কোনো দায়বদ্ধতা গ্রহণ করবো না এবং উদ্ভূত কোনো ক্ষতি ও অর্থ প্রদানে বিলম্ব হলে দায়ী থাকবো না।
বিজিবিএ সভাপতি বলেন, যুক্তরাজ্যের ক্রেতার পক্ষ থেকে যে ঋণপত্র পেয়েছি, সেখানে বলা হচ্ছে, আমেরিকা বা ইউএন যদি কাউকে স্যাংশন দেয়, সেই ঋণপত্র কেউ যদি গ্রহণ করে এবং পণ্য রপ্তানি করে, তাহলে তার পেমেন্ট দেয়ার জন্য সেই ব্যাংকগুলো বাধ্য না। যে কারণে যার যার ওপর নিষেধাজ্ঞা হবে এবং কেউ যদি এটি লঙ্ঘন করে তাহলে সেই পেমেন্ট দেবে না। এমনকি নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা কারও সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা পেলেও এর প্রভাব পড়তে পারে।
কাজী ইফতেখার হোসেন বলেন, এখন উচিত সবাইকে সচেতন করা, যাতে এই খাতটি কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেজন্য কাজ করা।
নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা কোনো ব্যক্তি যদি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকে, তাহলে পুরো খাতটি ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যাবে। ধরুন যে সাত জনের ওপর নিষেধাজ্ঞা এসেছে, তাদেরই পরিবারের কেউ একজন রপ্তানির সঙ্গে জড়িত, এখন এটি যদি তারা জেনে যায় তাহলে তারা পেমেন্ট দিতে অপারগতা প্রকাশ করবে। কারণ, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা হয় ডলার দিয়ে এবং ডলারের বাজারটাই হলো আমেরিকা।
গত ডিসেম্বরে দেশের র্যাব ও এর বর্তমান এবং সাবেক সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। এতে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করেছিলেন সংশ্লিষ্টরা। তবে বিশেষ এই ধারা যুক্ত হওয়ায় পোশাক খাতের ব্যবসায় কোনো সমস্যা তৈরি হবে না বলে মনে করেন পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ নেতারা। যদিও গত ৫ই জানুয়ারি বিজিএমইএ’র সভাপতি ফারুক হাসান এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে ব্যবসায়ীরা চিন্তিত। কারণ আমরা কোনো বাজার হারাতে চাই না। বিজিএমইএ’র সহ-সভাপতি শহিদুল্লাহ আজীম বলেন, নিষেধাজ্ঞার কারণে পোশাক খাতের জন্য সমস্যা হবে না। তবে ঋণপত্রে ধারা যুক্ত হওয়া নিয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি। এ ছাড়া কয়েকজন গার্মেন্ট মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে এ নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি কেউ।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বর্তমান নিষেধাজ্ঞার কারণে সামনের দিনগুলোয় ইইউসহ আরও কয়েকটি দেশ থেকে অগ্রাধিকার বাণিজ্য সুবিধা (জিএসপি) থেকেও বঞ্চিত হতে পারে। তারা আরও বলছেন, বাংলাদেশের মোট রপ্তানির ৬৩ শতাংশই যায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউতে। সেখানে এই ধরনের নিষেধাজ্ঞাকে ইঙ্গিত করে ঋণপত্রে বিশেষ ধারা যুক্ত করে দেয়াটা দেশের পোশাক খাতের জন্য বড় সতর্ক বার্তা।
আপনার মতামত দিন