রাজধানীর এভারকেয়ার হাসাপাতালে চিকিৎসাধান বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় ফিরছেন। মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে তিনি হাসপাতাল ত্যাগ করবেন বলে বিএনপির একাধিক সূত্র সমকালকে নিশ্চিত করেছে। তার শারীরিক অবস্থা অনেকটাই স্থিতিশীল হওয়ায় এবং তিনি নিজে বাসায় ফিরতে উদগ্রীব হওয়ায় চিকিৎসকরা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
বিএনপি সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে খালেদা জিয়াকে বাসভবন ফিরোজায় কর্মরত সবার করোনা টেস্ট করা হয়েছে। পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে পুরো বাসভবন। সংশ্নিষ্ট চিকিৎসকরা জানান, লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত বিএনপি চেয়ারপারসনের রক্তক্ষরণ আপাতত বন্ধ রয়েছে। তাই তাকে বাসভবনে রেখেই চিকিৎসার চিন্তাভাবনা করা হয়েছে। এ জন্য তার বাসাতেই চিকিৎসার প্রাথমিক ব্যবস্থা করা হয়েছে।
জানা গেছে, খালেদা জিয়া নিজেও এখন আর হাসপাতালে থাকতে চাচ্ছেন না। এভারকেয়ার হাসপাতালে প্রায় আড়াই মাস রয়েছেন তিনি। চিকিৎসকরাও মনে করছেন, বাসায় পারিবারিক পরিবেশে রাখতে পারলে খালেদা জিয়া শারীরিক ও মানসিকভাবে আরও শক্ত হতে পারবেন। অন্যদিকে হাসপাতালে প্রতিনিয়ত করোনা রোগীর আগমন ঘটছে। এতে খালেদা জিয়াও আক্রান্ত হতে পারেন বলে তারা আশঙ্কা করছেন। এর আগে তিনি হাসপাতালে থেকেই দ্বিতীয়বার করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন।
গত ১৩ নভেম্বর রক্ত বমির পরপরই খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ারে ভর্তি করা হয়। ওই হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে ১০ জনের একটি বিশেষ মেডিকেল টিম তার চিকিৎসাসেবা দিচ্ছে। ৭৭ বছর বয়সী সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী অনেক বছর ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, ফুসফুস, চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতায় ভুগছেন।
হাসপাতালে ভর্তির পরও তার রক্ত বমিসহ রক্তক্ষরণ হতে থাকে। এতে তার রক্তের হিমোগ্লোবিন মাত্রাতিরিক্ত কমে যেতে শুরু করে। হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ঠিক রাখতে রক্ত দিতে হতো তাকে। লিভারের সমস্যার কারণে তার অরুচি, ওজন হ্রাস, জ্বর জ্বর ভাব, শরীরে পানি আসা, খনিজে অসমতাসহ বহু সমস্যা দেখা দেয়। তার শরীরে প্রধান ইলেকট্রোলাইট অর্থাৎ সোডিয়াম, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও ক্লোরিন উপাদানের পরিমাণ কমে যেতে থাকে। তার ডায়াবেটিসও অনিয়ন্ত্রিত ছিল। কিডনির ক্রিটিনিন বর্ডার লাইনও খারাপ পর্যায়ে চলে যায়।
গত ২৮ নভেম্বর খালেদা জিয়ার মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা সংবাদ সম্মেলন করে বলেছিলেন, লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হওয়ায় খালেদা জিয়ার রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। তিনবার এই রক্তক্ষরণ সামাল দেওয়া গেলেও চতুর্থবার হলে বিপদ ঘটতে পারে। চিকিৎসকরা বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর শারীরিক অবস্থা নিয়ে তারা অসহায় বোধ করছেন। বাংলাদেশে এ ধরনের রক্তক্ষরণ সামাল দেওয়ার কারিগরি সুযোগ নেই। চিকিৎসকরা তাকে দ্রুত দেশের বাইরে নেওয়ার সুপারিশ করেন।
তারা যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র বা জার্মানির বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসার সুপারিশও করেন। পরিবারের পক্ষ থেকেও বিদেশে চিকিৎসার জন্য সরকারের অনুমতি চাওয়া হয়। সরকার বলেছে, আইনি বাধ্য-বাধকতায় তাকে দেশের বাইরে যেতে দেওয়া সম্ভব নয়। তবে বিএনপির পক্ষ থকে বলা হয়, সরকার রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় সুচিকিৎসায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে।
খালেদা জিয়ার মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা বলেন, এখনও খালেদা জিয়া ঝুঁকিমুক্ত হননি। যে কোনো সময় আবারও নতুন বা পুরোনো উৎস থেকে রক্তক্ষরণ শুরু হতে পারে। তাই দ্রুত বিদেশে উপযুক্ত চিকিৎসার জন্য তাকে নেওয়া দরকার এবং বর্তমান পরিস্থিতিতে লিভার ট্রান্সপ্লানটেশনই একমাত্র উপায় বলে চিকিৎসকদের অভিমত।
খালেদা জিয়ার মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবিতে বিভাগীয় শহরসহ বহু জেলায় সমাবেশ করেছে দলটি। এর আগে মানববন্ধন, দোয়া ও মিলাদ, স্মারকলিপি পেশ, অনশনের মতো কর্মসূচি পালন করেন দলটির নেতাকর্মীরা। এ কর্মসূচি এখনও অব্যাহত রয়েছে। তবে করোনার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় এবং সরকারের বিধিনিষেধের কারণে সমাবেশের মতো কর্মসূচি স্থগিত রাখা হয়েছে।