কাওরান বাজারের চিঠি গায়েবি ভোট এবং চুমু কাহিনী

Slider বিচিত্র


কে বলে এদেশের মানুষ ভোট নিয়ে আগ্রহ হারিয়েছে! হ্যাঁ, এটা সত্য ভোট কেন্দ্রগুলোতে আগের মতো ভিড় নেই। সকাল সকাল নেই লম্বা লাইন। প্রিয় প্রার্থীর জন্য কেউ মানত করেছেন এমনটাও শোনা যায় না। তাই বলে ভোট নিয়ে যে আলোচনা নেই তাতো নয়। ভোট এবং ভোট কমিশন এখনও শিরোনাম হয় পত্রিকায়!

বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ প্রায় শেষ। তবুও তাদের নিয়ে বড় বড় খবর হচ্ছে। তাদের আমলে কেমন নির্বাচন হয়েছে তা সবারই জানা। ইতিহাস নিশ্চিতভাবেই তাদের মনে রাখবে।
পত্রিকার কার্টুন দেখেও তা বুঝা যায়। আসল নির্বাচনের যখন এই অবস্থা তখন চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচন এবার বিপুল আলোচনার জন্ম দিয়েছে। টিভি চ্যানেল, পত্রিকার এবং অনলাইনের ফেসবুক পেজ, ইউটিউব চ্যানেল রাতদিন এ ভোটের খবর প্রচার করেছে। ফেসবুক পেজ বা ইউটিউব চ্যানেল থেকে আয়ের বিষয়টি ছিল। কিন্তু তার বাইরেও জনতা এ ভোটের ব্যাপারে নিজেদের একধরনের রায়ও দিয়েছে। ভোটে লড়াইয়ে ছিল দুটি প্যানেল। সম্ভবত সবচেয়ে আলোচনায় ছিলেন জায়েদ খান। তিনি জয়ী হলেও সভাপতি পদে জয়ী হয়েছেন অপর প্যানেলের ইলিয়াস কাঞ্চন। কিন্তু জায়েদ খানের জয় নিয়ে এরইমধ্যে বড় প্রশ্ন ওঠেছে। ১৩ ভোটের ব্যবধানে এই জয়ের পেছনে কারচুপি ছিল বলে অভিযোগ করেছেন পরাজিত প্রার্থী নিপুণ। এবারের নির্বাচনে যার সরব উপস্থিতি দেখা গেছে। সংবাদ সম্মেলনে তিনি মোটাদাগে তিনটি অভিযোগ করেছেন। ১. নির্বাচনের দিন প্রধান নির্বাচন কমিশনার পীরজাদা হারুণ তার কাছ থেকে ‘কিস’ চেয়েছিলেন। ২. জায়েদ খান ভোটের জন্য টাকা বিলি করেছেন। ৩. কোন এক ব্যক্তির সঙ্গে জায়েদ খানের কথোপকথন দাবি করে একটি স্ক্রিনশট প্রকাশ করেন তিনি। যেখানে নির্বাচন প্রভাবিত করার বিভিন্ন কথা ছিল।

জায়েদ খান এবং মুনমুন এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। কিন্তু সবচেয়ে আলোচনায় এসেছে পীরজাদা হারুনের বিরুদ্ধে করা অভিযোগ। বাংলাদেশের নির্বাচনগুলো নিয়ে অতীতে নানা অভিযোগ প্রকাশ্যে এসেছে। কিন্তু চুমু কাহিনী এবারই প্রথম এভাবে প্রকাশ্যে এলো। যা ভোটের ইতিহাসে একটা নতুন অধ্যায়ও বটে। নিপুণ বলেন, ‘পীরজাদা হারুন সকাল বেলা আমার কাছ থেকে দুই গালে দুইটা কিস চেয়েছে। আমার উচিত ছিল দুই গালে দুইটা চড় দিয়ে নির্বাচনটা বন্ধ করে দেয়া। আমি তা করিনি। এ সময় দুজন নারী প্রার্থী জেসমিন ও শাহানূর ছিল।’ এ অভিযোগের ব্যাপারে অনলাইন সংবাদমাধ্যম বিডিনিউজকে পীরজাদা হারুন বলেন, ‘এমন কোনো ঘটনা সেদিন ঘটেনি। এরকম কোনো কথাও বলিনি। সেখানে এসব বলার কোনো স্কোপ ছিল না। এটা আমি তাকে কেন বলতে যাব।’

এ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করতে চেয়েছিল নির্বাচন কমিশন। কিন্তু দুটি প্যানেলের পক্ষ থেকেই আপত্তি জানানো হয়। করা হয় কারচুপির আশঙ্কা। বাংলাদেশে বিভিন্ন সংগঠন-সংস্থায়ও নির্বাচন ব্যবস্থা কমে যাওয়ার খবর গত কয়েক বছর ধরে পাওয়া যাচ্ছে। নির্বাচনের আগেই একধরনের চাপে সমঝোতায় বাধ্য হন প্রার্থীরা। চলচ্চিত্র শিল্প সমিতির নির্বাচনেও গত কয়েকবছর শক্তিশালী একটি পক্ষ আলোচনায় রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে শক্ত প্যানেল দেওয়া কঠিনই ছিল। এবারের নির্বাচনে চিত্র ছিল কিছুটা আলাদা। ইলিয়াস কাঞ্চন ও নিপুণ দৃশ্যপটে পরিবর্তন আনেন। এখন এ নির্বাচনে যখন কারচুপির অভিযোগ ওঠলো তা নিয়ে স্বভাবতই বিপুল কৌতূহল তৈরি হয়েছে। ঢাকার একজন সিনিয়র রাজনৈতিক বিশ্লেষক হাস্যচ্ছ্বলে বললেন, তাহলে এখানেও কি কেয়ারটেকার সরকার লাগবে?

এটা সত্য মুক্ত মানুষের মধ্যে বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য ব্যালটই হচ্ছে সর্বোত্তম মাধ্যম। আশার কথা হচ্ছে, চলচ্চিত্র সমিতির নির্বাচনে কাউকে ভোট দিতে বাধা দেওয়া হয়নি। কিন্তু ব্যালটটা ঠিকমতো গণনা করা হচ্ছে কি-না তাও সমান গুরুত্বপূর্ণ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *