ঢাকা: কোটি কোটি টাকা খরচ করে দীর্ঘদিন ধরে সরকার যুক্তরাষ্ট্রে লবিস্ট ফার্ম পুষছে বলে অভিযোগ করেছেন সংরক্ষিত মহিলা আসনে বিএনপির সংসদ সদস্য (এমপি) রুমিন ফারহানা।
একটি ফার্মকে গত বছর সরকার ত্রৈমাসিক ৮০ হাজার ডলার করে দিয়েছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন।
রোববার (২৩ জানুয়ারি) জাতীয় সংসদের এ বছরের প্রথম অধিবেশনে দেওয়া রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে রুমিন ফারহানা এ অভিযোগ করেন। এ সময় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন।
রুমিন ফারহানা বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ মন্ত্রীরা প্রথমে খুব কড়া ভাষায় আমেরিকাকে আক্রমণ করলেও এখন গলার স্বর নিচু। এখন নিজেদের সমস্যা খতিয়ে দেখার আলাপ হচ্ছে। প্রয়োজনে লবিস্ট ‘ল’ ফার্ম নিয়োগের কথা হচ্ছে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ কোন নতুন বিষয় নয়। জনগণের করের কোটি কোটি টাকা খরচ করে দীর্ঘদিন ধরেই আমেরিকায় লবিস্ট ফার্ম পুষছে সরকার। একটি ফার্ম বিজিআরকে গত বছর সরকার ত্রৈমাসিক ৮০ হাজার ডলার করে দিয়েছে, বছরের যার পরিমাণ ৩ লাখ ২০ হাজার ডলার (আনুমানিক ২ কোটি ৭৮ লাখ টাকা)। বিজিআর ছাড়াও গত বছর সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্রিডল্যান্ডার গ্রুপের সঙ্গে ৪০ হাজার ডলারে এক মাসের জন্য একটি চুক্তি করেন ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শহীদুল ইসলাম। এছাড়া কোনওয়াগো কনসালটিংয়ের সঙ্গে বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের (বিইআই) মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকার এক মাসের জন্য আরেকটি চুক্তি করে। ৩৫ হাজার ডলার অগ্রিম দেওয়ার শর্তে চুক্তিটি হয়, যাতে সই করেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মত ২০০৫, ২০০৬ ও ২০০৭ সালে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ অ্যালক্যাড অ্যান্ড ফে নামের লবিং প্রতিষ্ঠানকে সাড়ে ১২ লাখ ডলারের (১০ কোটি টাকার বেশি) বেশি দিয়েছে।
বিএনপির এমপি রুমিন বলেন, পরিস্থিতি দেখে এটা স্পষ্ট–নিষেধাজ্ঞা এখানেই শেষ হচ্ছে না। বিশ্বের স্বনামধন্য ১২টি মানবাধিকার সংস্থা র্যাবের সদস্যদের জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীতে পদায়নের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে জাতিসংঘে জোর দাবি জানিয়েছে এবং জাতিসংঘও বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েছে। জনগণের করের টাকায় চলা একটি রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে দলীয় ক্যাডারের মত ব্যবহার করে তাতে কর্মরত অনেক নিরপরাধ মানুষ এবং তাদের পরিবারের জীবনে সংকট তৈরি করেছে সরকার। আমেরিকার নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পর এক মজার ঘটনা দেখা যাচ্ছে। এখন আর র্যাব গভীর রাতে সন্ত্রাসীদের নিয়ে অস্ত্র উদ্ধারে যাচ্ছে না কিংবা গোপন সংবাদ পেয়ে কোনো সন্ত্রাসীকে ধরতে গিয়ে আগে থেকে ওঁৎ পেতে থাকা সন্ত্রাসীরা পুলিশ বা র্যাবকে লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়ছে না। আর তারপর পালানোর সময় মারা যাচ্ছে না কোনো নির্দিষ্ট মানুষ। ঠিক যেমন সন্ত্রাসীরা সাধু হয়ে গিয়ে র্যাবকে গুলি করা বন্ধ করেছিল সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা রাশেদকে হত্যার পরপর।
এমপি রুমিন বলেন, এখন মার্কিন চাপে নানা দিকে তোড়জোড় শুরু করেছে সরকার। মজার ব্যাপার এখানেও আবার সঠিক পথে না গিয়ে উল্টো পথে হাঁটছে। গুম হওয়া বেশ কিছু মানুষের ব্যাপারে যেহেতু জাতিসংঘ তথ্য চেয়েছে, তাই সরকার ব্যাপারটির সমাধান করতে চাইছে গুম হওয়া মানুষদের পরিবারের ওপর নতুন করে নিপীড়ন চালিয়ে। তাঁদের স্বজনকে কেউ তুলে নিয়ে যায়নি এমন কথা লিখিত বিবৃতি দিতে আর সাদা কাগজে সই দিতে বাধ্য করছে পুলিশ।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে যে রাজনৈতিক বাস্তবতা তাতে বাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হল নির্বাচনকালীন সরকারটি কেমন। কমিশনে যদি ৫ জন ফেরেশতাও বসানো হয় তারপরও আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া অসম্ভব। সুতরাং এখনই সময় এই বিষয়ে একটি স্থির সিদ্ধান্তে আসা।