আন্দোলনে অচল সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যদের সংগঠন বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদ। গত বৃহস্পতিবার সংগঠনটির ভার্চুয়াল এক সভায় ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে সমর্থন জানিয়ে তারা বলেছেন, শাবিপ্রবির উপাচার্যকে যদি পদত্যাগে বাধ্য করা হয়, তাহলে তারাও পদত্যাগ করতে প্রস্তুত রয়েছেন।
দেশের অন্তত ৩৫টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা ওই বৈঠকে যোগ দেন। ওই বৈঠকে শাবিপ্রবির উপাচার্য ফরিদ উদ্দিনও উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে উল্লেখ করা হয়- এভাবে মুষ্টিমেয় কিছু মানুষ উপাচার্যকে অপমান করবে, ধাওয়া করবে- এভাবে চললে বিশ্ববিদ্যালয়ই চালানো যাবে না। সব বিশ্ববিদ্যালয়েই একই পরিস্থিতি হতে পারে। তাই ফরিদ উদ্দিনকে যদি পদত্যাগ করতে হয়, তাহলে অন্যরাও পদত্যাগ করতে প্রস্তুত আছেন।
বৈঠকে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আনোয়ার হোসেন অন্য উপাচার্যদের পদত্যাগের প্রসঙ্গটি তোলেন। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কথা তো অনেক হয়। তবে এ ধরনের প্রস্তাব গৃহীত হয়নি। আমরা চাই আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান হোক।’
এদিকে, অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনও। সংগঠনটি গত শুক্রবার এক বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, শাবিপ্রবির চলমান আন্দোলন দেশকে অস্থিতিশীল করার অব্যাহত চক্রান্তের অংশ। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখতে সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে তারা।
অন্যদিকে, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের একজন সাদিয়া আফরিন বলেন, ‘আমাদের আন্দোলন যৌক্তিক। একজন উপাচার্য কী করেছেন, সেটি যদি সবাই নিজের ঘাড়ে নিতে চান, তাহলে সবারই (বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যেরা) পদত্যাগ করা উচিত।’
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সূত্রপাত হয় ১৩ জানুয়ারি। ওই দিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষ জাফরিন আহমেদের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ তুলে তার পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন হলের কয়েকশ ছাত্রী। ১৫ জানুয়ারি সন্ধ্যায় ছাত্রীদের আন্দোলনে হামলা চালায় ছাত্রলীগ।
পরের দিন বিকেলে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি ভবনে উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করেন। তখন শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা ও তাদের লক্ষ্য করে শটগানের গুলি ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে পুলিশ। ওই দিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ও শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেয় কর্তৃপক্ষ।
তবে শিক্ষার্থীরা তা উপেক্ষা করে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। ওই হামলার প্রতিবাদে ঢাকা, রাজশাহী, জাহাঙ্গীরনগর, খুলনা, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ করছেন শিক্ষার্থী এবং বিভিন্ন নাগরিক ও রাজনৈতিক সংগঠন।