শাবিপ্রবি (সিলেট): শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত ও অনশনরত শিক্ষার্থীদের আলোচনা শেষ হয়েছে। মন্ত্রী শিক্ষার্থীদের নানা আশ্বাস দিলেও, অন্যতম প্রধান দাবি ভিসির পদত্যাগ নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি।
শনিবার (২২ জানুয়ারি) রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া আইআইসিটি ভবনে ভার্চুয়াল মাধ্যমে এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা শেষে রাত আড়াইটার দিকে সংবাদ সম্মেলন করেন আলোচনায় উপস্থিত থাকা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল।
নাদেল বলেন, ভিডিও কনফারেন্সে শিক্ষামন্ত্রী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে তিনি সবকিছু শুনেছেন। মন্ত্রী তাদের বিষয়টি বিবেচনা করার আশ্বাস দিয়েছেন। শিক্ষার্থীদের আইনগত ও অ্যাকাডেমিক সমস্যা যাতে না হয় সে আশ্বাসও তিনি দিয়েছেন। এছাড়ও শিক্ষার্থীদের মন্ত্রী অনুরোধ করেছেন তারা যেন অনশন ভেঙে আন্দোলন থেকে সরে যান। তিনি আলোচনায় প্রস্তুত বলেও জানিয়েছেন।
নাদেল আরও বলেন, রোববার (২৩ জানুয়ারি) শিক্ষার্থীরা যেন লিখিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়ে প্রস্তাবনা পাঠান। এরপর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। অনশন ভাঙার বিষয়ে ইতিবাচক কোনো কথা আসেনি। শিক্ষার্থীরা বলেছেন, সবার সঙ্গে কথা বলে কাল আমাদের জানাবেন।
আলোচনায় অংশ নেওয়া শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আবেদীন বলেন, ‘আমাদের দাবি আমরা শিক্ষামন্ত্রীকে জানিয়েছি। উনার সময় সল্পতার কারণে আমাদের সঙ্গে বেশিক্ষণ কথা বলতে পারেননি। তবে রোববার আমাদের সঙ্গে আবারো বসবেন বলে জানিয়েছেন। এতে আমাদের সব দাবি দাওয়া লিখিতভাবে তাকে পাঠাতে বলা হয়েছে’।
এর আগে, রাত পৌনে ১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় এবং স্থানীয় নেতারা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন দলটির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন। পরে আলোচনায় যোগ দেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিধান কুমার সাহা।
শনিবার রাতেই আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের আলোচনায় বসার অনুরোধ জানান শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চাই তারা (শিক্ষার্থীরা) অনশন প্রত্যাহার করুক, তারা আমাদের সঙ্গে আলোচনায় বসুক। এখন যদি অনশনরত অবস্থাতেও বসতে চায় তাও করতে পারে। যেকোনো সমস্যার একমাত্র সমাধান আলোচনা। কাজেই আমরা আলোচনার মাধ্যমেই সমস্যার সমাধান করতে চাই। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনার জন্য দ্বার সব সময়ই উন্মুক্ত। ’
পরে রাত সাড়ে ১১টার দিকে আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থী সাব্বির আহমদ জানান, শিক্ষামন্ত্রী শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে শনিবার রাতেই অনলাইনে আলোচনার বিষয়ে সম্মতি প্রকাশ করেন।
গত ১৩ জানুয়ারি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সূত্রপাত হয়। ওই দিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষ জাফরিন আহমেদের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ তুলে তার পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন হলের কয়েকশ’ ছাত্রী।
১৫ জানুয়ারি সন্ধ্যায় ছাত্রলীগ ছাত্রীদের আন্দোলনে হামলা চালায়। পরের দিন বিকেলে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি ভবনে উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করেন। তখন শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা ও তাদের লক্ষ্য করে শটগানের গুলি ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে পুলিশ। ওই দিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ও শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেয় কর্তৃপক্ষ। শিক্ষার্থীরা তা উপেক্ষা করে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন।