দেশে করোনার নতুন ধরন ওমিক্রমনের সামাজিক সংক্রমণ (কমিউনিটি ট্রান্সমিশন) হয়েছে বলে জানাচ্ছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। মাসখানিক আগেও দেশে করোনার সংক্রমণ ছিল সীমিত পরিসরে। কিন্তু ওমিক্রন ধরা পড়ার পর থেকে দেশে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে। যদিও জার্মানির দ্য গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ অন শেয়ারিং অল ইনফ্লুয়েঞ্জা ডেটার (জিআইএসএআইডি) তথ্য অনুযায়ী, দেশে ওমিক্রনে সংক্রমিত ৩৩ জন।
ওমিক্রনের সামাজিক সংক্রমণ, ২ সপ্তাহ সতর্ক না থাকলে বিপদ
স্বাস্থ্য বিভাগ দেশে ৫০০ করোনা শনাক্ত রোগীর মধ্যে মাত্র ১ জনের নমুনার জিন বিশ্লেষণ করে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এত কমসংখ্যক নমুনা বিশ্লেষণের মাধ্যমে কোন ধরন কী পরিমাণে ছড়াচ্ছে, তা বলা মুশকিল।
এরই মধ্যে সংক্রমণ পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। দুই সপ্তাহ ধরে দৈনিক শনাক্ত ও পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হার বাড়ছে। এক মাসের ব্যবধানে রোগী শনাক্ত প্রায় ১৫ গুণ বেড়েছে।
এমন পরিস্থিতি দেখে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনার ওমিক্রন ধরনের সামাজিক সংক্রমণ (কমিউনিটি ট্রান্সমিশন) হয়েছে। সারা দেশে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে সময় নেবে না। এখন ঢাকার পাশাপাশি ঢাকার বাইরেও ওমিক্রন শনাক্ত হচ্ছে।
দ্য গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ অন শেয়ারিং অল ইনফ্লুয়েঞ্জা ডেটার (জিআইএসএআইডি) তথ্য অনুযায়ী, দেশে ওমিক্রনে সংক্রমিত ৩৩ জনের মধ্যে রাজধানীর বাসাবোর বাসিন্দা ৪ জন ও মহাখালীর ৬ জন। ২০ জন ঢাকার বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা। তাদের অবস্থান সম্পর্কে নির্দিষ্ট করে আর কিছু জানা যায়নি। আর তিনজন যশোরের।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত এক মাসের সংক্রমণ পরিস্থিতি দেশে করোনা সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউ শুরুর ইঙ্গিত দিচ্ছে। আগামী দুই সপ্তাহ সংক্রমণ মোকাবিলায় সতর্ক না হলে এই ঢেউয়ে সংক্রমণ অনেক বাড়বে।
করোনার নমুনা পরীক্ষা সম্প্রসারণ নীতিমালা কমিটির প্রধান অধ্যাপক লিয়াকত আলী সংবাদমাধ্যমকে বলেন, পারিপার্শ্বিকতা ও অন্যান্য দেশের অভিজ্ঞতা বলছে, বর্তমান সংক্রমণ বৃদ্ধি ওমিক্রনের সামাজিক সংক্রমণের কারণেই। তবে এখনো সব জায়গায় এই সংক্রমণ ছড়াতে পারেনি। পরিস্থিতি বলছে, দেশে সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে করোনার জিনোম সিকোয়েন্সের কাজটি এখন পর্যন্ত সুসংগঠিতভাবে করা হচ্ছে না। তাই করোনার কোন ধরন বেশি ছড়াচ্ছে, সে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না।
তবে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মুখপাত্র মো. রোবেদ আমিন গত বুধবার বলেছিলেন, ওমিক্রনের পাশাপাশি ডেলটা ধরন- দুটিই বর্তমানে অবস্থান করছে। সংক্রমণ হঠাৎ মাত্রাতিরিক্ত হয়ে যাওয়ায় ধরে নিতে হবে করোনার নতুন যে ধরন (ওমিক্রন), তারই সংক্রমণ বেশি হচ্ছে।
করোনার ডেলটা ধরনের চেয়ে ওমিক্রনে আক্রান্ত রোগীর অসুস্থতা তুলনামূলক কম হলেও ওমিক্রন বেশি সংক্রামক। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলছে, যারা টিকা নেননি, তাদের জন্য ওমিক্রন ধরন বিপজ্জনক। অন্যান্য দেশের অভিজ্ঞতা বলছে, ওমিক্রনে পুরুষের চেয়ে নারীর আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা বেশি।
গত ৯ ডিসেম্বর জিম্বাবুয়ে ফেরত বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের দুই সদস্যের প্রথম ওমিক্রনে আক্রান্তের খবর জানা যায়। জিআইএসএআইডির তথ্য অনুযায়ী, দেশে এ পর্যন্ত ওমিক্রনে সংক্রমিত ৩৩ জনের মধ্যে ২১ জনই নারী। বাকি ১২ জন পুরুষ।