‘সমালোচকদের ওপর কঠোর বাংলাদেশ সরকার’

Slider বাংলার মুখোমুখি


ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার ২০২১ সালে স্পষ্ট করে বুঝিয়ে দিয়েছে, নিরাপত্তা বাহিনীর দ্বারা বিচারবহির্ভূত হত্যা, নির্যাতন এবং জোরপূর্বক গুমের মতো গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন মোকাবিলা করার কোনো ইচ্ছা তার নেই। সমালোচক, সাংবাদিক এবং এমনকি শিশু- যারা সরকারের সমালোচনা করেছে বা কোভিড-১৯ মহামারি নিয়ে প্রশ্ন তোলার সাহস করেছে তাদের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষ কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ‘ওয়ার্ল্ড রিপোর্ট-২০২২’-এ এসব কথা বলা হয়েছে।

রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশের প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর নেতা ছিলেন মহিবউল্লাহ (৪৬)। তিনি রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর অপরাধগুলো নথিভুক্ত করেছেন এবং আন্তর্জাতিক ফোরামে শরণার্থীদের অধিকারের পক্ষে কথা বলেছেন। তাকে কক্সবাজারের কুতুপালং ক্যাম্পে অজ্ঞাত বন্দুকধারীরা গুলি করে হত্যা করেছে সেপ্টেম্বরে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তিনি তার কাজের জন্য প্রাণনাশের হুমকির সম্মুখীন হন। পরবর্তী মাসে, বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ ক্যাম্পে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয় এবং ক্যাম্পের একটি ইসলামিক সেমিনারিতে হামলায় আরও সাতজন শরণার্থীকে হত্যা করা হয়।
অক্টোবরে, সরকার ভাসানচর দ্বীপে কার্যক্রম শুরু করার জন্য ইউএনএইচসিআর-এর সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে। সেখানে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ বসবাসযোগ্যতা, নিরাপত্তা, স্থায়িত্ব এবং সুরক্ষার প্রয়োজনীয়তার প্রযুক্তিগত মূল্যায়নের জন্য অপেক্ষা করার প্রতিশ্রুতি লঙ্ঘন করে প্রায় ২০,০০০ শরণার্থীকে ইতিমধ্যেই স্থানান্তরিত করে ফেলেছে।
মে থেকে আগস্ট পর্যন্ত, বাংলাদেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণের সবচেয়ে মারাত্মক রূপ দেখেছে।
হাসপাতালগুলোতে উপচে পড়া ভিড় ছিল এবং স্বাস্থ্যসেবা কর্মীরা পর্যাপ্ত চিকিৎসা সরঞ্জামের অভাবের কথা জানিয়েছেন।

অক্টোবরে, পুলিশ যখন বিক্ষুব্ধ জনতাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে গুলি চালায় সে সময় চারজন নিহত হন এবং বাংলাদেশের হিন্দু সংখ্যালঘুদের লক্ষ্য করে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার মধ্যে অন্তত আরও তিনজন নিহত হন। এই ঘটনায় শতাধিক আহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়।

গুম এবং আইনবহির্ভূত হত্যা: বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীগুলো দায়সারাভাবে জোরপূর্বক গুম এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকা- চালিয়ে যাচ্ছে। আগস্টে, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ২০০৯ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের অধীনে বাংলাদেশ নিরাপত্তা বাহিনী কর্তৃক জোরপূর্বক গুমের নথিভুক্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করার পর, সরকার তা প্রত্যাখ্যান করে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদের টম ল্যান্টোস হিউম্যান রাইটস কমিশনের ব্রিফিংয়ের সময়ও কর্মকর্তারা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। জোরপূর্বক নিখোঁজ হওয়া কয়েকজনের স্বজনরা বলেন যে, কিছু কিছু পরিবার হুমকি ও হয়রানির সম্মুখীন হয়েছে এমন অভিযোগসহ আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার বিরুদ্ধে করা যেকোনো অভিযোগ গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানায় পুলিশ।

নির্যাতন: ফেব্রুয়ারি মাসে লেখক মোশতাক আহমেদ ফেসবুকে করোনা মহামারি সম্পর্কে সরকারের প্রতিক্রিয়ার সমালোচনামূলক পোস্ট করার জন্য নয় মাস আটকাবস্থায় থাকার পর কারাগারে মৃত্যুবরণ করেন। একই কারণে আটক কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর তাকে নির্যাতনের অভিযোগে একটি আইনি অভিযোগ দাখিল করেন এবং হেফাজতে থাকাকালীন মোশতাকও যে নির্যাতনের সম্মুখীন হন তা বর্ণনা করেন। বাংলাদেশে আইনপ্রয়োগকারী ও গোয়েন্দা সংস্থা, সেইসঙ্গে পুলিশ এবং র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)-এ নিযুক্ত সৈনিকরা বন্দি ও সন্দেহভাজনদের নির্যাতন ও দুর্ব্যবহারের জন্য বিশ্বাসযোগ্যভাবে অভিযুক্ত। আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলার জন্য জোর দেয়া সত্ত্বেও, সরকার নির্যাতন প্রতিরোধ ও মোকাবিলায় নির্যাতনের বিরুদ্ধে জাতিসংঘের কমিটির দৃঢ় সুপারিশ অনুযায়ী কাজ করতে ব্যর্থ হয়েছে।

মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং সভা-সমাবেশ: মানবাধিকার কর্মীদের প্রতি নজরদারি, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে অভিযোগ এবং নির্বিচারে আটকের মাধ্যমে টার্গেট করা হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন (ডিএসএ) ব্যবহার করে সাংবাদিক, অ্যাক্টিভিস্টস এবং সরকারের সমালোচকদের হয়রানি ও অনির্দিষ্টকালের জন্য আটক করে রাখছে। এর ফলে ভিন্নমত প্রকাশে একটি হতাশাজনক প্রভাব পড়ছে। মার্চ মাসে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেট ডিএসএ সংশোধনের আহ্বান জানান। এর পরিবর্তে আইন মন্ত্রণালয় বিশেষভাবে এই ধরনের সাইবার ‘অপরাধের’ জন্য বিশেষ ট্রাইব্যুনালের সংখ্যা বাড়ানোর প্রস্তাব অনুমোদন করেছে। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অন্তত ৮০ জন সাংবাদিক তাদের কাজ করার সময় হামলার সম্মুখীন, আহত বা নিহত হয়েছেন। যারা সরকারি দুর্নীতি প্রকাশ করে অথবা ভিন্নমত প্রকাশ করে, তারা বিশেষভাবে ঝুঁকির মধ্যে থাকেন। মে মাসে, কর্তৃপক্ষ সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে কোভিড-১৯ মহামারির প্রতিক্রিয়ায় অসদাচরণের বিষয়ে রিপোর্ট করার পরে গ্রেপ্তার করেছিল। মার্চে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফর নিয়ে হওয়া বিক্ষোভ মিছিল কভার করতে গিয়ে অন্তত ১৭ জন সাংবাদিক আহত হয়েছেন। এর বেশির ভাগই ফটোগ্রাফার। এই বিক্ষোভ চলাকালীন বাংলাদেশে ফেসবুক এবং ফেসবুক মেসেঞ্জারের সেবাসমূহ সীমিত করে দেয়ার খবরও পাওয়া গেছে।

বিদেশে অবস্থানরত সমালোচনাকারী কর্মী ও সাংবাদিকদের বাংলাদেশে বসবাসরত পরিবারের সদস্যদের টার্গেট করেছে কর্তৃপক্ষ। গণমাধ্যমের ব্যাপক দমন-পীড়নের ফলে বাংলাদেশের সাংবাদিকরা নজিরবিহীন মাত্রায় নিজে থেকেই সেন্সরিংয়ে নেমেছেন।
মে মাসে, নয়টি সংস্থা নির্বিচারে গ্রেপ্তার, নির্যাতন এবং বিচারবহির্ভূত হত্যা সহ গণমাধ্যমের ওপর ক্রমাগত আক্রমণের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেটকে চিঠি লিখে।

কোভিড-১৯: বাংলাদেশ ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ১০ লাখেরও বেশি মানুষ কোভিড-১৯ এ নিশ্চিতভাবে নতুন করে সংক্রমণ এবং ২০,০০০-এরও বেশি মৃত্যুর খবর জানিয়েছে। এ রিপোর্টটি লেখার সময় জনসংখ্যার মাত্র ১২ শতাংশকে সম্পূর্ণরূপে টিকা দেয়া হয়েছিল। হাসপাতালগুলোতে মাত্রাতিরিক্ত ভিড় এবং অত্যন্ত প্রয়োজনীয় নিবিড় পর্যবেক্ষণের সুবিধাসমূহের অভাব স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে বিদ্যমান বৈষম্যকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন অনুসারে, অক্টোবর পর্যন্ত প্রায় ১০,০০০ স্বাস্থ্যসেবা কর্মীরও কোভিড-১৯ পরীক্ষার ফলাফল পজেটিভ এসেছিলো।

রিপোর্টটি লেখার সময় পর্যন্ত ২০২০ সালে এই মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকে বিদ্যালয়গুলো ৪৫০ দিনেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ ছিল। এতে ১.৬ মিলিয়নেরও বেশি শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাদের অনেককেই পরোক্ষ/দূরবর্তী শিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে ইন্টারনেট সুযোগ-সুবিধা, বিদু্যুতের অভাব এবং পরিবারকে সহায়তা করা সহ বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে। ব্র্যাক-এর একটি জরিপে দেখা গেছে যে, জরিপে অংশ নেয়া অর্ধেকেরও বেশি শিক্ষার্থী সরকারি-টেলিভিশনের ক্লাসগুলো অনুসরণ করেনি। বিশেষ করে মেয়েরা স্কুলে থাকার ক্ষেত্রে বাধার সম্মুখীন হয় এবং বেসরকারি সংস্থাগুলো বাল্যবিবাহের বিষয়ে উদ্বেগজনক উল্লেখ করে প্রতিবেদন তৈরি করেছে।

নারী ও মেয়েদের অধিকার: বাংলাদেশের মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের মতে, ২০২১ সালে ২০০ জনেরও বেশি নারী তাদের স্বামী বা স্বামীর পরিবারের দ্বারা নিহত হয়েছেন। বাংলাদেশ সরকারের যৌন ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতাকে গুরুত্ব সহকারে নেয়ার প্রতিশ্রুতিগুলো ভাসা ভাসা হয়ে গেছে। কারণ নারী ও মেয়েরা ব্যাপক যৌন সহিংসতার মুখোমুখি হন, যখন সরকার পুনরায় যৌন হয়রানি আইন পাস করা বা বৈষম্যমূলক ধর্ষণ আইন সংশোধন স্থবির করে দেয়। বাংলাদেশ পুলিশ উইমেন নেটওয়ার্ক পুলিশ বাহিনীতে লিঙ্গ সমতা বৃদ্ধি করতে ২০২১-২০২৩ সালের জন্য একটি কৌশলগত পরিকল্পনা চালু করেছে।

সেক্সুয়াল ওরিয়েন্টেশন অ্যান্ড জেন্ডার আইডেন্টিটি: সমকামিতা বাংলাদেশে একটি অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। আগস্টে, ২০১৬ সালে বাংলাদেশি সমকামী অধিকারের বিশিষ্ট কর্মী জুলহাজ মান্নান এবং মাহবুব রাব্বি তন্নির নৃশংস হত্যাকা-ে অবশেষে ৬ জনকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। হত্যার পাঁচ বছর পরও, নারী সমকামী, পুরুষ সমকামী, উভকামী এবং ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তিরা এবং আইনজীবীরা পুলিশের কাছ থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে নিরাপত্তা না থাকায় সহিংসতা এবং সহিংসতার হুমকির সম্মুখীন হন। কর্মসংস্থানে উৎসাহিত করার জন্য কর্তৃপক্ষ জুন মাসে ঘোষণা করেছিল যে, কোম্পানিগুলোর যেখানে কর্মশক্তির কমপক্ষে ১০ শতাংশ ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তি রাখা হবে তাদেরকে কর ছাড় দেয়া হবে। বাংলাদেশে হিজড়া, কোঠি বা ট্রান্সজেন্ডার হিসেবে পরিচিত অনেকেই মহামারির মধ্যে অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হন।

শ্রম অধিকার: জুলাই মাসে, নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জে একটি কারখানায় ব্যাপক অগ্নিকা-ে ৫২ জন শ্রমিক মারা যান, যাদের অধিকাংশই মহিলা এবং ১২ বছর বয়সী শিশু। শ্রমিক নেতাকর্মীরা বলেছেন যে, পুলিশ পরবর্তীতে শ্রমিকদের এবং নিহতদের আত্মীয়দেরÑ যারা বিক্ষোভ করতে জড়ো হয়েছিলেন তাদের হয়রানি করেছে এবং অভিযোগ করেছে যে, বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় পুলিশ রাবার বুলেট এবং টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করেছে। আগস্ট মাসে, আন্তর্জাতিক রিটেইলারস (খুচরা বিক্রেতা), ট্রেড ইউনিয়ন এবং কারখানার মালিকরা বাংলাদেশ অ্যাকর্ড অন ফায়ার অ্যান্ড বিল্ডিং সেফটি প্রতিস্থাপনের জন্য একটি নতুন চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।

শরণার্থী: বাংলাদেশ সরকার দীর্ঘকালীন মানবিক সংকটকে কাঁধে নিয়ে ক্রমবর্ধমানভাবে হতাশা প্রকাশ করেছে, বিশেষ করে মিয়ানমারে ফেব্রুয়ারিতে ঘটে যাওয়া অভ্যুত্থান শরণার্থীদের জন্য নিরাপদ এবং মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবর্তনের সম্ভাবনাকে আরও দূরে সরিয়ে দিয়েছে। শরণার্থী শিবিরে সম্পদ বৃদ্ধি এবং পরিস্থিতির উন্নতি সাধনে জাতিসংঘের সঙ্গে কাজ করার পরিবর্তে, সরকার প্রায় ২০,০০০ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে প্রত্যন্ত ভাসানচর দ্বীপে স্থানান্তরিত করেছে। দ্বীপে বসবাসরত শরণার্থীরা অপর্যাপ্ত স্বাস্থ্য সেবা, শিক্ষার অভাব এবং চলাচলের স্বাধীনতায় বাধার সম্মুখীন হয়ে থাকে। যদিও কর্তৃপক্ষ বলেছে দ্বীপে স্থানান্তর স্বেচ্ছায় হয়েছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের একটি প্রতিবেদনে দেখা যায় যে, অসংখ্য শরণার্থীকে সম্পূর্ণ এবং অবহিত সম্মতি ছাড়াই স্থানান্তরিত করা হয়েছিল এবং মূল ভূখ-ে ফিরে যেতে কিংবা কক্সবাজারে তাদের পরিবারের সঙ্গে পুনরায় মিলিত হতে বাধা দেয়া হয়েছে। শত শত শরণার্থী দ্বীপ থেকে পালানোর চেষ্টা করেছে। তাদের অনেকে সমুদ্রে মারা গেছে। অন্যরা পালানোর চেষ্টা করে ধরা পড়েছে। তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং দীর্ঘ সময়ের জন্য কোনো অভিযোগ ছাড়াই আটকে রাখা হয়েছে এবং নিরাপত্তা বাহিনী কয়েকজনকে মারধরও করেছে।

জলবায়ু পরিবর্তন নীতিসমূহ এবং কর্মসমূহ: ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রার কারণ গ্রিনহাউজ গ্যাসের নির্গমনে সামান্য অবদান থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সব থেকে বেশি প্রভাবিত হওয়া দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি দেশ। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে, ঘূর্ণিঝড় আরও তীব্র এবং ঘন ঘন সংঘটিত হবে, যা দেশের নিম্নবর্তী উপকূল রেখায় বসবাসকারী কয়েক লাখ মানুষের জন্য ক্রমবর্ধমানভাবে হুমকির সৃষ্টি করবে, যাদের মধ্যে অনেকেই সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে কৃষি উৎপাদনশীলতার হ্রাস এবং ব্যাপক স্থানচ্যুতির কারণে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার সম্মুখীন হতে পারে। ২০২১ সালে, সরকার কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা এবং প্রস্তাবিত অসংখ্য প্রকল্প বাতিল করার পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করে। তা সত্ত্বেও, বিভিন্ন প্ল্যান্টের নির্মাণকাজ অব্যাহত রয়েছে, যেগুলো চালু হলে, শুধুমাত্র গ্রিনহাউজ গ্যাসই না বরং বিষাক্ত দূষণ পদার্থও নির্গমন করবে। যা স্থানীয় জনগণের স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলবে। ইউনেস্কোর একটি বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান ও বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের জন্য রামপালে নির্মাণাধীন প্ল্যান্টটি মারাত্মক এক হুমকির সৃষ্টি করেছে, যেখানে সমৃদ্ধ জীব বৈচিত্র্য লক্ষাধিক মানুষের জীবিকাকে সহায়তা করে থাকে এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির প্রভাবসমূহ এবং বিরূপ আবহাওয়ার বিরুদ্ধে একটি গুরুত্বপূর্ণ বাফার বা বাধা প্রদানকারী হিসেবে কাজ করে থাকে।

প্রধান আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণকারী: আগস্ট মাসে, গার্নিকা ৩৭ চেম্বার্সের আইন অফিসগুলো বৃটিশ ফরেন, কমনওয়েলথ এবং ডেভেলপমেন্ট অফিসে একটি আনুষ্ঠানিক সুপারিশ জমা দেয়। যেখানে গ্লোবাল হিউম্যান রাইটস স্যাংশনস রেগুলেশনস ২০২০-এর অধীনে মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ১৫ জন বর্তমান এবং প্রাক্তন সিনিয়র র‌্যাব অফিসারের জন্য নিষেধাজ্ঞার সুপারিশ করা হয়। ২০২১ সালের মার্চ মাসে, জাতিসংঘের হাইকমিশনার ব্যাচেলেট নিশ্চিত করেছেন যে ‘র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের দ্বারা নির্যাতন এবং দুর্ব্যবহারের অভিযোগগুলো একটি দীর্ঘস্থায়ী উদ্বেগ।’

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ কমনওয়েলথ সেক্রেটারি জেনারেল ব্যারনেস প্যাট্রিসিয়া স্কটল্যান্ডের কাছে একটি চিঠিতে সম্বোধন করে তাকে হেফাজতে থাকা একজন ভিন্নমতাবলম্বী লেখক মোশতাক আহমেদের মৃত্যুর মাত্র কয়েকদিন পরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসা করে করা মন্তব্যগুলোর জন্য প্রকাশ্যে ব্যাখ্যা করার আহ্বান জানান। ফেব্রুয়ারি মাসে, ১৩ জন কূটনীতিক আহমেদের মৃত্যুর বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং ‘একটি দ্রুত, স্বচ্ছ এবং স্বাধীন তদন্ত’ করার আহ্বান জানান। সরকার ‘এই ধরনের উপদ্রব প্রচার করা বন্ধ করতে’ বলে মিডিয়াকে প্রতিক্রিয়া জানায়।

ফেব্রুয়ারি মাসে, বাংলাদেশ সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে এবং জাতিসংঘের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করেন আল জাজিরার একটি উদ্বেগজনক তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই। যেখানে বাংলাদেশি নিরাপত্তা বাহিনী ব্যবহার করে জেনারেলের পরিবারের সদস্যদের নিপীড়নের এবং সেই সঙ্গে তার কমান্ডের অধীনে সামরিক ইউনিট দ্বারা গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।

আল জাজিরার তদন্ত নথিভুক্ত করেছে যে, সরকার অবৈধভাবে ইসরাইল থেকে অত্যন্ত আক্রমণাত্মক স্পাইওয়্যার কিনেছে। সামরিক বাহিনী উক্ত প্রমাণের প্রতিক্রিয়ায় দ্বিমত জানিয়ে বলেছে যে, ঐ সরঞ্জামগুলো ছিল ‘জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে মোতায়েন করা একটি সেনা দল’-এর জন্য। কিন্তু জাতিসংঘ তাদের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশি দলগুলোর সঙ্গে এই ধরনের সরঞ্জাম মোতায়েন করেছে এমন দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে এবং বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানিয়েছে এমন দুর্নীতির দাবি তদন্ত করার জন্য। আগস্ট মাসে, ইসরাইলি ডিজিটাল গোয়েন্দা সংস্থা সেলেব্রাইট ঘোষণা করে যে, এটি র‌্যাবের দ্বারা ব্যবহার করা হচ্ছে এমন প্রতিবেদনের পর বাংলাদেশের কাছে প্রযুক্তি বিক্রি বন্ধ করে দেবে।
২০১৭ সাল থেকে বাংলাদেশের মানব ও শ্রম অধিকার রেকর্ডের গুরুতর ত্রুটিগুলো ইইউ কর্তৃক এটির এভরিথিং বাট আর্মস- ইবিএ (অস্ত্র ছাড়া সবকিছু) স্কিমের মাধ্যমে একতরফাভাবে প্রদত্ত বাণিজ্যিক অগ্রাধিকারগুলোকে বিপদগ্রস্ত করে তুলেছে।

সেপ্টেম্বর মাসে যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা করে যে, তারা রোহিঙ্গা শরণার্থী, বাংলাদেশি হোস্ট সম্প্রদায় এবং রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকটের প্রতিক্রিয়ায় অংশগ্রহণকারী মিয়ানমারের জনগণের জন্য অতিরিক্ত মানবিক সহায়তার লক্ষ্যে প্রায় ১৮০ মিলিয়ন ডলারের তহবিল দেবে। ২০২১ সালের জন্য জাতিসংঘের রোহিঙ্গা মানবিক সংকটে যৌথ সাড়া দান পরিকল্পনায় ৩১শে আগস্ট পর্যন্ত এটির প্রয়োজনীয় তহবিলের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ ছিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *