নির্ধারিত ছক অনুযায়ীই চলবে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের চলমান আন্দোলন। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার করা হলে আন্দোলনে যুক্ত করা হবে নতুন মাত্রা। অনির্দিষ্টকালের অবরোধ ও দফায় দফায় হরতালের মধ্য দিয়ে পরিচালিত আন্দোলনকে পরিণত করা হবে অসহযোগে। এ ধরনের নীতিগত সিদ্ধান্ত আগেই চূড়ান্ত করে রেখেছে জোটের শীর্ষ নেতৃত্ব। সে অনুযায়ী আন্দোলনকে গতিশীল ও জোরদার করার জন্য কয়েকটি ছকও তৈরি করা হয়েছে। ইতিমধ্যে দলের কয়েকজন নেতা ও চেয়ারপারসনের বিশ্বস্ত কিছু ব্যক্তির কাছে সে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। একইভাবে জেলা নেতাদেরও পরিস্থিতি বিবেচনা করে স্বতন্ত্রভাবে কর্মসূচি নির্ধারণ ও পালনের নির্দেশনা দিয়েছেন ২০ দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। এছাড়া খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার করা হলে যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানও সক্রিয় ভূমিকায় সামনে আসবেন। নেতৃত্বের কোন সঙ্কট হবে না। ফলে গ্রেপ্তারসহ যে কোন ধরনের পরিস্থিতির জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত রয়েছেন জোটের শীর্ষ নেতা খালেদা জিয়া। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বিশেষ আদালত থেকে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর দলের কয়েকজন সিনিয়র নেতা ও চেয়ারপারসন কার্যালয় সূত্র এমন তথ্য জানিয়েছেন। এদিকে ২০ দলীয় জোটের তরফে দেয়া এক বিবৃতিতে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের সিনিয়র নেতৃবৃন্দসহ সারা দেশ থেকে ২০ হাজারের বেশি নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার এবং তথাকথিত বন্দুকযুদ্ধের নামে শ’ শ’ নেতা-কর্মীকে হতাহত করেও গণ-আন্দোলনকে দমাতে না পেরে সরকার অবৈধ গদি রক্ষার শেষ চেষ্টা হিসেবে খালেদা জিয়াকে কারারুদ্ধ করার অপচেষ্টা করছে। মামলা-হামলা-গ্রেপ্তারের ভয়-ভীতি দেখিয়ে চলমান গণ-আন্দোলনকে স্তব্ধ করা যাবে না। খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তারের যে কোন পদক্ষেপ বরং সরকারের পতনকেই ত্বরান্বিত করবে। জনতার ন্যায্য দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত চলমান গণ-আন্দোলন দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাবে। ওদিকে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর দলের ভাইস চেয়ারম্যান ও সিনিয়র আইনজীবী বিচারপতি টিএইচ খানের বাসায় যান বিএনপির কয়েকজন সিনিয়র নেতা ও খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা বা গ্রেপ্তার পরবর্তী আইনি প্রক্রিয়ার ব্যাপারে সেখানে নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করেছেন তারা। এর আগে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন গতকাল দুপুরে সাংবাদিকদের বলেছেন, রাজনীতি করলে গ্রেপ্তার হতে হয়, এটা অস্বাভাবিক কিছুই না। রাজনৈতিক নেতারা জনগণের স্বার্থে জনগণের কল্যাণে বহুবার গ্রেপ্তার হয়েছেন, হবেন। আমরা আইনিভাবে তার জামিনের চেষ্টা করব। তিনি বলেন, এ মামলা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আমরা সিনিয়র আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে উচ্চ আদালতে যাব। এমনকি আইনিভাবে যা যা করা দরকার তার সবই করব। আমরা আশাকরি সেখানে ন্যায়বিচার পাব। এটা বিচার প্রার্থীদের নৈতিক অধিকার। ওদিকে আগুন নিয়ে খেলা বন্ধ করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে সংগঠনের সভাপতি রাজিব আহসান ও সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান সরকারকে হুঁশিয়ার করে বলেন, খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার করা হলে এর পরিণাম হবে ভয়াবহ। যা এই মুহূর্তে উন্মাদ সরকার কল্পনাও করতে পারছে না। বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কয়েকজন সিনিয়র নেতা জানান, চলমান আন্দোলনের বিপরীতে সরকারের চূড়ান্ত ট্রাম্পকার্ড হচ্ছে খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির মাধ্যমে সরকার তার চূড়ান্ত ট্রাম্পকার্ড খেলার উদ্যোগ নিয়েছে। একইভাবে খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার করা হলে বিএনপিও আন্দোলনের চূড়ান্ত যাত্রা শুরু করবে। এদিকে বিএনপি নেতারা জানান, ৩রা জানুয়ারির পর থেকে চলমান আন্দোলনের একক নেতৃত্ব ছিল খালেদা জিয়ার হাতে। সরাসরি তার নির্দেশনাতেই চলেছে আন্দোলন। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করার আগ পর্যন্ত তিনি জেলা ও তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। সেখানে তিনি পরিষ্কার বলেছেন- কাঙ্ক্ষিত সমাধান না আসা পর্যন্ত যে কোন পরিস্থিতিতে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে। দেশ, দেশের মানুষ ও দলের আদর্শের জন্য ত্যাগ-তিতিক্ষার ভেতর দিয়েই এগিয়ে যেতে হবে। নেতারা জানান, খালেদা জিয়ার নির্দেশনা পেয়ে তৃণমূল নেতৃত্ব অন্য যে কোন সময়ের চেয়ে বেশি সক্রিয়। এখন প্রটোকল মেনে নির্দেশনার জন্য নেতাকর্মীরা অপেক্ষায় থাকবে না। বিএনপি সূত্র জানায়, রাজপথের আন্দোলনের পাশাপাশি আইনি লড়াই ও আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণের তৎপরতাও চলবে সমানে। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মহলের কাছে ইতিমধ্যেই আন্দোলনের যৌক্তিকতা ব্যাখ্যার পাশাপাশি বিরোধী জোটের নেতাকর্মীদের ওপর দমন-নিপীড়ন ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের নানা তথ্য-উপাত্ত দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশে একটি ভারসাম্যহীন রাজনৈতিক পরিস্থিতি তৈরি হলে তা যে সার্বিকভাবে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে এ বিষয়টি উল্লেখ করে পদক্ষেপ নেয়ার জন্য ২০ দলের তরফে আন্তর্জাতিক মহলের প্রতি জোরালো আহ্বান জানানো হবে।