বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও ২০ দলীয় জোট নেতা খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার করা হলে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেতে পারে। আরও উসকে দিতে পারে সরকারবিরোধী আন্দোলন। ইতিমধ্যে গত মাসজুড়ে সরকারবিরোধী আন্দোলনে ১০০’রও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির বিষয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে। রয়টার্স ছাড়াও গতকাল বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে গুরুত্বের সঙ্গে খালেদা জিয়ার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা নিয়ে প্রতিবেদন এসেছে। বার্তা সংস্থা এপি’র প্রতিবেদনে বলা হয়, খালেদা জিয়াকে অবিলম্বে গ্রেপ্তার করা হবে কিনা তা স্পষ্ট নয়। মামলা যেসব থানায় নিবন্ধিত সেখানে আদালতের আদেশ পাঠানোর কথা। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের মধ্যে রয়েছে তার প্রয়াত স্বামী ও সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের নামে গঠিত একটি দাতব্য প্রতিষ্ঠানের জন্য জমি কিনতে অবৈধ অর্থের ব্যবহার। খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা তার বিরুদ্ধে চ্যারিটির নামে অবৈধভাবে ১০ লাখ ডলারেরও বেশি অর্থ সংগ্রহ করার অভিযোগগুলো প্রত্যাখ্যান করেন। তাদের বক্তব্য, এসব অভিযোগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। সরকারপক্ষ আবার এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। গত বছর শুরুর দিকে এ দুটি অভিযোগ আনা হয় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে। কিন্তু ২৪শে জানুয়ারি তিনি আদালতে পৌঁছুলে তার সমর্থকদের সঙ্গে পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের কর্মীদের সংঘর্ষ হয়। কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, ওই সহিংসতা ছিল বিচার প্রক্রিয়া বানচাল করার প্রচেষ্টা। কিন্তু জিয়া সমর্থকদের দাবি ক্ষমতাসীন দলের কর্মীরাই আগে হামলা শুরু করে। গতকাল আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর বার্তা সংস্থা এএফপিকে বিএনপি মুখপাত্র শায়রুল কবির খান বলেন, আমাদের চলমান আন্দোলন দমিয়ে রাখতে এ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। কিন্তু এতে কাজ হবে না। তাদের উদ্দেশ্য ফলপ্রসূ হবে না বরং এটা আমাদের সমর্থকদের দৃঢ়তা বৃদ্ধি করবে। বিএনপির পক্ষ থেকে আদালতের এ আদেশের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া এসেছে। তারা বলছে, এটা পূর্বপরিকল্পিত এবং সরকারের দ্বারা রচিত। এদিকে, এএফপিকে সরকার পক্ষের আইনজীবী মোশাররফ হোসেইন বলেন, আদালত থেকে আবারও জামিন নিতে ব্যর্থ হলে খালেদা জিয়া যে কোন মুহূর্তে গ্রেপ্তার হতে পারেন। প্রতিবেদনের শেষে বলা হয়, জাতিসংঘ ও ঢাকার সর্ববৃহৎ বাণিজ্য অংশীদার ইউরোপীয় ইউনিয়ন চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট সমাধানে সরকার ও বিরোধী দলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। কিন্তু, উভয় নেত্রী আলোচনায় বসতে অস্বীকৃতি জানানোয় মনে হচ্ছে এ অচলাবস্থা অব্যাহত থাকবে।
ওদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী পত্রিকা ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল লিখেছে, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করায় দক্ষিণ এশিয়ার এ দেশটিতে রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। জানুয়ারির শুরু থেকে রাজনৈতিক অস্থিরতা গ্রাস করেছে বাংলাদেশকে। এ জন্য সরকার ও বিরোধী দল একে অন্যকে দায়ী করছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আছেন ২০০৯ সাল থেকে। তিনি বলেছেন, অবরোধে হত্যার ঘটনায় বিচারের মুখোমুখি হতে হবে খালেদা জিয়াকে। ৬৯ বছর বয়সী বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদার বিরুদ্ধে দায়ের করা হয়েছে হত্যা মামলা। ওদিকে নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির এ পদক্ষেপে খালেদা জিয়ার সমর্থক আর সরকারপন্থিদের মধ্যকার বিরাজমান উত্তেজনা আরও উত্তাল করে তুলতে পারে। খালেদা জিয়া ছাড়াও অর্থ আত্মসাৎ মামলায় অভিযুক্ত আরও দুজনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা তাদের অবস্থানে অটল থেকে বলেছেন, এসব অভিযোগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তার এক আইনজীবী সৈয়দ জয়নুল আবেদিন মেসবাহ বলেন, ‘খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করাটা পক্ষপাতপুষ্ট। এটা শুধুমাত্র তাকে হয়রানি করা আর অন্যায় এক বিচারের আওতায় আনার জন্য জারি করা হয়েছে।’ খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী ও দেশটির প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দু’দশকেরও বেশি সময় ধরে ক্ষমতার লড়াইয়ে অবতীর্ণ। গত মাসে শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার বিএনপি প্রতিবাদ জোরদার করেছে। গত বছর অনুষ্ঠিত যে নির্বাচন শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় বসিয়েছে তা অগণতান্ত্রিক ছিল বলে বিএনপি তাদের অবস্থানে অটল রয়েছে।