বাধ্যতামূলক হচ্ছে ডোপ টেস্ট, মনিটরিং হবে অনলাইন মাদক ব্যবসা

তথ্যপ্রযুক্তি

চাকরিতে ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ উপদেষ্টা কমিটি। গতকাল সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কমিটির দ্বিতীয় সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকে মাদকের বিচারাধীন মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করতে আলাদা আদালত গঠনের পক্ষেও মতামত দেওয়া হয়। এ ব্যাপারে আইন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি তাদের ইতিবাচক মনোভাবের কথাও জানান। একই সঙ্গে অনলাইনে মাদক বেচাকেনা বন্ধে কঠোরভাবে মনিটরিং করে ব্যবস্থা নেওয়ার পক্ষে মত দেওয়া হয়। বৈঠকে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ, ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খানসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিব এবং কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে কমিটির সদস্যরা মাদক বন্ধে কঠোর অবস্থানের পক্ষে তাদের অভিমত জানান। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিশেষ করে সরকারি চাকরিতে প্রবেশে ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করার বিষয়ে মত ব্যক্ত করা হয়। এ সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বৈঠকে অবহিত করেন, বর্তমানে পুলিশ ও বিজিবির চাকরির ক্ষেত্রেও কঠোরভাবে এ নিয়ম মানা হচ্ছে। পাশাপাশি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও এর অধীনস্থ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নিয়োগেও এ নিয়ম কার্যকর করা হচ্ছে। বৈঠক থেকে অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের নিয়োগেও ডোপ টেস্ট কার্যকর করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি লেখার সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও মসজিদ-মাদরাসায় মাদকবিরোধী প্রচারণা বৃদ্ধির পক্ষে এবং বিভিন্ন পণ্যের মোড়কের গায়ে ‘মাদককে না বলুন’ প্রচারণা যোগ করার পক্ষে মত দেওয়া হয়। বৈঠকে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) মো. আবদুস সবুর মন্ডল মাদক সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রস্তাবনা তুলে ধরেন এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিবরাও তাদের মন্ত্রণালয়ের অবস্থান প্রকাশ করেন। বৈঠকে মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন বোর্ডের কার্যক্রম আরও শক্তিশালী করার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।

বৈঠক শেষে ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করার বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘চাকরিতে নিয়োগের সময় ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব এসেছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মতো এটা আমরা শুরু করতে যাচ্ছি। অনেক চাকরিজীবী বিশেষ করে নিরাপত্তা বাহিনীতে যারা চাকরি করছেন, যারা মাদকের বিরুদ্ধে কাজ করছেন, তাদের মধ্যে যাকে মাদকাসক্ত বা মাদকের সঙ্গে জড়িত বলে মনে করছি এবং ডোপ টেস্টে যারা শনাক্ত হয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। সাময়িক বরখাস্ত করা হচ্ছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন যত নিয়োগ হচ্ছে সেখানে ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। সরকারি যে কোনো চাকরির জন্য ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী অনুশাসন দিয়ে আমাদের জানিয়ে দিয়েছেন। আমরা সেই ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সবাইকে জানিয়ে দিয়েছি। কাজেই এখন থেকে ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও চাচ্ছি যাতে নব প্রজন্ম বিপথগামী না হয়, ভুল পথে না যায়, সেজন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। ধীরে ধীরে ব্যবস্থা নিচ্ছি।’ মাদক নিয়ন্ত্রণ প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘মাদকের ক্ষতিকর দিক নিয়ে গণমাধ্যমে প্রচার-প্রচারণা চালানো হবে। মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান চালানো হবে। সভায় মাদকদ্রব্য নিরাময় কেন্দ্রের নাম পরিবর্তন করে ‘চিকিৎসা ও নিরাময় কেন্দ্র’ করার প্রস্তাব এসেছে। কারণ মাদকসেবীরা ৭০ শতাংশের ওপরে সুস্থ হয় না। আবার ব্যাক করে। চিকিৎসা কেন্দ্র শব্দটি সঙ্গে থাকলে উপযুক্ত হবে। কারণ শতভাগ নিরাময় করা যায় না।’
মাদকসেবীদের চিকিৎসার মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে চিকিৎসা সুবিধা বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছে জানিয়ে আসাদুজ্জামান বলেন, ‘দেশে ৪ লাখ ৫৮ হাজারের বেশি মাদক মামলা রয়েছে। এগুলো দ্রুত নিষ্পত্তিতে আইন মন্ত্রণালয়ের সহায়তা নেওয়া হবে। মাদক মামলা নিষ্পত্তিতে মাদক আইনে ডেডিকেটেড কোর্ট গঠনের কথা বলা হয়েছে। সেটি নিয়ে আইন মন্ত্রণালয় থেকে জটিলতা এসেছিল। পরে সিদ্ধান্ত হয় প্রত্যেক কোর্টে অগ্রাধিকার দিয়ে মাদকের মামলা নিষ্পত্তিতে বিশেষ ব্যবস্থা করার উদ্যোগ নেবেন আইনমন্ত্রী। মাদক আইন পরিবর্তন করা হবে না। সীমান্তে সমন্বিত ব্যবস্থায় মাদক নিয়ন্ত্রণ করার পরামর্শ এসেছে। অনলাইনে মাদক বিক্রি শুরু হয়েছে, কঠোরভাবে মনিটরিং করে যারা এর সঙ্গে যুক্ত তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘মাদক আমাদের দেশে তৈরি হয় না। ভারত কিংবা মিয়ানমার থেকে আসছে। মাদকের স্বর্গরাজ্য হলো মিয়ানমার। টেকনাফের যতই ওপরে যাবেন, নাইক্ষ্যংছড়ি থেকে বান্দরবানের দিকে ততই দুর্গম এলাকা। বর্ডার এলাকায় যেতে দুই-তিন দিন লাগবে। আমরা বর্ডার রুট করছি। আমরা মনে করি দুই বছরের মধ্যে বর্ডার রুট করা শেষ হবে। এটা হয়ে গেলে বর্ডার গার্ডরা সীমান্তে গিয়ে পাহারা দিতে পারবেন। অনেকখানি মাদক নিয়ন্ত্রণ করতে পারব।’ টেকনাফের অধিবাসীরা ইয়াবাকে মাদক নয়, ওষুধ মনে করে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘টেকনাফের অধিবাসীরা, এটা শুনলে হাসিও পায়, তারা বলে এটা তো মাদক নয়। তারা বলে ওষুধ, ট্যাবলেটকে (ইয়াবা)। এ জন্যই আমরা বলেছি আগে জনগণকে সচেতন করতে হবে। মাদকে মাদকদ্রব্য আইনে শ্রেণিভুক্ত করা কেন অবৈধ ও বেআইনি ঘোষণা করা হবে না- এ মর্মে জানতে চেয়ে গত ১৩ ডিসেম্বর রুল জারি করেছে হাই কোর্ট। আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে আইন, স্বরাষ্ট্র ও অর্থ সচিব এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের পরিচালককে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘মদ, অ্যালকোহলকে মাদক বলে চিহ্নিত করা আছে। যেহেতু কোর্ট থেকে নির্দেশনা এসেছে, এখন এটিকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখব। লিকারকে কীভাবে আলাদাভাবে দেখা যায় সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে জানাব। আবার বসে ঠিক করব।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *