চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের চতুর্থ ধাপের ভোটেও চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীদের দাপটে ভরাডুবি হয়েছে দল মনোনীত প্রার্থীদের। গত রোববার অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ৮৩৭টি ইউনিয়নের মধ্যে ভোটে সাড়ে তিন শতাধিক চেয়ারম্যান জয়লাভ করে আওয়ামী লীগের। আর দলের চারশতাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী জয়লাভ করেছে। নৌকা মার্কার প্রার্থীরা বিদ্রোহীদের কাছে পরাজিত হয়ে কোথাও কোথাও জামানতও হারিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা বলছেন, প্রত্যেক ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী রয়েছে। দলগতভাবে যাকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে তার বিরুদ্ধে মনোনয়নবঞ্চিত অন্য প্রার্থীরা একজোট হয়ে কাজ করেছে। কোথাও কোথাও স্থানীয় পর্যায়ে দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসন করা সম্ভব হয়নি। আবার পছন্দমতো প্রার্থী না পেয়ে অনেক জায়গায় ভোট ভাগ হয়ে গেছে। আর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেয়নি। ওই সব ভোটও বিদ্রোহী প্রার্থীদের পক্ষে গিয়েছে। এসব কারণেই মূলত বিদ্রোহী প্রার্থীদের জয়ের পাল্লা ভারী হয়ে গেছে।
চার ধাপের ইউপি নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ভোট হওয়া ইউনিয়ন পরিষদগুলোর এক হাজার ৩৭৭টিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা নির্বাচিত হয়েছেন। অপরদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জিতেছেন এক হাজার ২৪৯টি ইউপিতে। আবার স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচিত প্রার্থীদের বেশির ভাগই সরকারি দলের বিদ্রোহী প্রার্থী। তবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিতদের যুক্ত করলে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের চেয়ে এগিয়ে আওয়ামী লীগ। চার ধাপে মোট তিনশ’টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ২৯৭ জনই আওয়ামী লীগের। সবমিলিয়ে এক হাজার ৬৭৪ ইউপিতে জিতেছে আওয়ামী লীগ। অপরদিকে এক হাজার ২৫২টি ইউপিতে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয়লাভ করেছেন।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন নয়া দিগন্তকে বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন হলো স্থানীয় সরকার নির্বাচন। এই নির্বাচনে বিএনপি ও তার মিত্ররা দলীয়ভাবে অংশ নেয়নি। আর প্রত্যেক ইউনিয়নে আমাদের একাধিক প্রার্থী রয়েছে। মনোনয়ন দেয়া হয়েছে একজনকে। সব মিলিয়ে নৌকার বিরোধীরা একজোট হওয়ায় আমাদের প্রার্থীরা অনেক জায়গায় হেরে গেছে। তবে যারা জিতেছে তারাও আওয়ামী লীগের। তিনি আরো বলেন, হারজিত বড় বিষয় নয়। বিএনপি অংশ না নিয়ে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চেয়েছিল, সেটা কিন্তু সম্ভব হয়নি। নির্বাচনে মানুষ উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিচ্ছে- এটাই বড় বিষয়। সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়েছে, এটাই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য।
আওয়ামী লীগের আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন নয়া দিগন্তকে বলেন, এটা ঠিক বিদ্রোহী প্রার্থীদের একটি বড় অংশ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে জয়লাভ করেছে। তবে যারা জিতেছে তারাও আওয়ামী লীগের। দল মনোনীত প্রার্থীদের পরাজয়ের পেছনে কারণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তৃণমূল পর্যায়ের নির্বাচনে নানা কারণ থাকে। প্রথমত বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি। তাদের ভোট নৌকার বিপক্ষে চলে গেছে। আমাদের অনেকেই মনোনয়ন চেয়েছিল, আমরা সবাইকে মনোনয়ন দিতে পারিনি। এক ইউনিয়নে দল মনোনীত প্রার্থী একজন। অনেক জায়গায় অন্য প্রার্থীরা মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে নৌকার বিপক্ষে কাজ করেছে। এখানে ভোট ভাগ হয়ে গেছে। তবে নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী বা স্বতন্ত্র যে প্রার্থীই জিতুক উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট হয়েছে, হচ্ছে- এটাই বড় কথা।
জানা গেছে, চার ধাপে এ পর্যন্ত দুই হাজার ৯৮৭টি ইউনিয়ন পরিষদের ফল পাওয়া গেছে। গত ২৮ নভেম্বর তৃতীয় ধাপের ভোটে ফল ঘোষিত হওয়া ৯০১ ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয় পেয়েছেন ৪৪৫টিতে। জয়ের হার ৪৯ শতাংশ। বিপরীতে আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা জয় পেয়েছেন ৪২৬টিতে। অবশ্য বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় যোগ করলে আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা এগিয়ে রয়েছেন। এ ধাপে আওয়ামী লীগের ৯৯ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় পেয়েছেন। এর আগে গত ২১ জুন প্রথমধাপের ২০৪টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ২৮ জন ১৪৮ আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী জয়লাভ করেন। আর ৪৯টি ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়লাভ করেন। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রায় সবাই আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী। প্রথমধাপের দ্বিতীয় অংশের ১৬০টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় গত ২০ সেপ্টেম্বর। এর মধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ৪৩ জন এবং ভোটে ৭৬ জনসহ মোট ১১৯ জন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী জয়লাভ করেন। মনোনয়নের বাইরে ২৪ জন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী জয়লাভ করে। গত ১১ নভেম্বর অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় ধাপের ৮৩৪টি ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ৭৮ জনসহ ৪৮৬ জন আওয়ামী লীগ চেয়ারম্যান প্রার্থী জয়লাভ করে। আর ৩৩০ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়লাভ করে। যার প্রায় সবাই আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে পরিচিত। এ হিসাব মতে, প্রায় ৪০ শতাংশ বিদ্রোহী প্রার্থী জয়লাভ করে।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও উপদেষ্টা পরিষদের অন্যতম সদস্য অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন নয়া দিগন্তকে বলেন, দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচনে কোথাও কোথাও নেতাকর্মীরা অংশগ্রহণ করে এবং জয়লাভ করে- এটা নতুন কিছু নয়। বহু বছর আগে থেকে এটা চলে আসছে। তবে মনে রাখতে হবে এটা আঞ্চলিক নির্বাচন। প্রার্থীর প্রভাব যে এলাকায় বেশি থাকে ওই প্রার্থী জেতার সম্ভাবনাও বেশি। অনেক জায়গায় মনোনয়ন বঞ্চিত হওয়ায় তার সমর্থকরা ক্ষুব্ধ হয়ে অন্য প্রার্থীকে ভোট দিয়েছে। আঞ্চলিক নির্বাচন হওয়ায় এ রকম স্থানীয়ভাবে নানা হিসাব-নিকাশ থাকে। তিনি বলেন, নির্বাচনে হারজিত থাকবে। তবে কেন হারছে এর জন্য নিরপেক্ষভাবে দলীয়ভাবে তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। এর মাধ্যমে ভুলগুলো শোধরাতে পারলে আগামীতে আরো ভালো করা সম্ভব।
বগুড়া অফিস জানায়, গত রোববার চতুর্থ ধাপে অনুষ্ঠিত বগুড়া জেলার ১৩টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আবারো নৌকার ভরাডুবি হয়েছে। এ ধাপে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকে মাত্র তিনজন প্রার্থী চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। একই সাথে নৌকার মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে দুইজন চেয়ারম্যান হয়েছেন। অন্যদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে বিএনপি, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সাতজন এবং জামায়াতের একজন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।
কাহালু সংবাদদাতা জানান, মোট আটটি ইউপির মধ্যে বিএনপি তিনটি, আওয়ামী লীগ দু’টি, জামায়াত একটি ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী দুইজন নির্বাচিত হয়েছেন। বিএনপি সমর্থিত নির্বাচিতরা হলেন- বীরকেদার ইউনিয়নে ছেলিম উদ্দিন প্রামাণিক, কালাই ইউনিয়নে জোবাইদুল ইসলাম সবুজ , মালঞ্চা ইউনিয়নে নেছার উদ্দিন। আওয়ামী লীগ মনোনীত নির্বাচিত দুইজন হলেন- জামগ্রাম ইউনিয়নে মনোয়ার হোসেন খোকন ও পাইকড় ইউনিয়নে মিটু চৌধুরী এবং বিদ্রোহী হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত কাহালু সদরে যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি পিএম বেলাল হোসেন ও নারহট্ট ইউনিয়নে আব্দুর রহিম প্রামাণিক এবং মুরইল ইউনিয়নে জামায়াত সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী মাওলানা আব্দুল জলিল। এ ছাড়া মোট আটটি ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের তিনজন চেয়ারম্যান প্রার্থীসহ মোট সাতজন জামানত হারিয়েছেন। এর মধ্যে বীরকেদারে নৌকার প্রার্থী এস এম আকরাম হোসেন ২২২, মুরইলে বর্তমান চেয়ারম্যান হারেজ উদ্দিন ৮৬৬ ও কালাই ইউনিয়নে আজাহার আলী ১১২ ভোট পেয়ে জামানত হারিয়েছেন।
নন্দীগ্রাম সংবাদদাতা জানান, উপজেলার চারটি ইউপি নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত তিনজন ও আওয়ামী লীগ মনোনীত একজন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। বিএনপি সমর্থিতরা হলেন- নন্দীগ্রাম সদরে রেজাউল করিম কামাল, থালতা মাঝগ্রামে আব্দুল মতিন ও ভাটগ্রামে যুবদল নেতা আবুল কালাম আজাদ। এ ছাড়া ভাটরা ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান মোর্শেদুল বারী নির্বাচিত হয়েছেন।
একই দিন বগুড়া সদরের এরুলিয়া ইউপি নির্বাচনে ইভিএম এ ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এতে স্বতন্ত্র প্রার্থী এরুলিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান আতিক চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি পেয়েছেন আট হাজার ১৬১ ভোট। নিকটতম স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল আলীম ছয় হাজার ৭০২ এবং আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী শফিকুল ইসলাম পেয়েছেন এক হাজার ৫২৪ ভোট। ফলে নৌকার প্রার্থী প্রয়োজনীয় ভোট না পাওয়ায় জামানত হারিয়েছেন।
টাঙ্গাইলে ১১টি ইউনিয়নে হেরেছে নৌকা
টাঙ্গাইল সংবাদদাতা জানান, চতুর্থ ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে টাঙ্গাইলের তিনটি উপজেলার ২১টি ইউনিয়নের মধ্যে ১১টি ইউনিয়নে নৌকার ভরাডুবি হয়েছে। চেয়ারম্যান পদে ৯টিতে নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীরা। এ ছাড়া ভূঞাপুরের অলোয়া ইউনিয়নের ফলাফল স্থগিত রাখা হয়েছে।
টাঙ্গাইল সদর উপজেলার আটটি ইউনিয়নের চারটিতে নৌকা ও চারটিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। নৌকার বিজয়ী প্রার্থীরা হলেন- দাইন্যা ইউনিয়নে আফজাল হোসেন, বাঘিল ইউনিয়নে এস এম মতিয়ার রহমান মন্টু, ঘারিন্দা ইউনিয়নে তোফায়েল আহম্মেদ ও করটিয়া ইউনিয়নে খালেকুজ্জামান মজনু। বিজয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থীরা হলেন- হুগড়া ইউনিয়নে নুর ই আলম তুহিন, পোড়াবাড়ি ইউনিয়নে শাহাদত হোসেন, গালা ইউনিয়নে নজরুল ইসলাম খান ও মগড়া ইউনিয়নে অ্যাডভোকেট মোতালেব হোসেন। ভূঞাপুর উপজেলায় পাঁচটি ইউনিয়নের মধ্যে তিনটিতে নৌকা ও দু’টিতে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন। নৌকা প্রতীকের বিজয়ীরা হলেন- অর্জুনা ইউনিয়নে দিদারুল আলম খান, ফলদা ইউনিয়নে সাইদুল ইসলাম তালুকদার ও গোবিন্দাসী ইউনিয়নে দুলাল হোসেন চকদার। বিজয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থীরা হলেন- নিকরাইল ইউনিয়নে মাসুদুল হক মাসুদ ও গাবসারা ইউনিয়নে শাহ আলম।
ঘাটাইল উপজেলায় সাতটি ইউনিয়নের মধ্যে মাত্র দু’টিতে নৌকা আর পাঁচটিতে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন।
লোহাগড়া (নড়াইল) সংবাদদাতা জানান, নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সাতটিতে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী এবং পাঁচটিতে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন। নলদী ইউপিতে মো: আসাদুজ্জামান (স্বতন্ত্র), লাহুড়িয়ায় কামরান শিকদার (স্বতন্ত্র), শালনগর ইউপিতে মো: লাবু মিয়া (নৌকা), নোয়াগ্রামে মুন্সী জোসেফ হোসেন (নৌকা), জয়পুরে মো: সাইফুল ইসলাম সুমন (নৌকা), কাশীপুরে মো: মতিয়ার রহমান (নৌকা), লক্ষ্মীপাশায় নুর মোহাম্মদ (স্বতন্ত্র), মল্লিকপুরে সাহিদুর রহমান শহিদ (স্বতন্ত্র), দিঘলিয়ায় সৈয়দ বোরহান উদ্দিন (স্বতন্ত্র), কোটাকোলে হাচান মোল্লা (নৌকা), লোহাগড়ায় নাজমিন খন্দকার (নৌকা) এবং ইতনা ইউনিয়নে শেখ সিহানুক রহমান (নৌকা)।
ঘিওরে হার দলীয় কোন্দলে
ঘিওর (মানিকগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, চতুর্থ ধাপের ইউপি নির্বাচনে মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের চারটিতে হেরেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা। বাকি তিনটিতে আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা পেয়েছে কষ্টার্জিত জয়। অর্ধেকের বেশি ইউপিতে আওয়ামী লীগের পরাজয়ের নেপথ্যে নানা কারণ বিশ্লেষণ করছেন এলাকার সাধারণ মানুষ থেকে দলীয় উচ্চপর্যায়ের নেতাকর্মীরা। দলীয় কোন্দল, দাপুটে বিদ্রোহী প্রার্থী, আঞ্চলিকতার প্রভাব ও বিএনপি ঘরানার ভোট তাদের পরাজয়ের কারণ বলে মনে করছেন দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ ভোটাররা। তবে এসব কারণের বাইরেও খোদ আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মীর রহস্যজনক ভূমিকা ও দলীয় প্রার্থী সিলেকশনে তৃণমূলের প্রত্যাশা উপেক্ষার কারণে এই পরাজয়, এমনটা জানালেন নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক নেতা।
আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়ে পাননি এমন ১০ জন চেয়ারম্যান প্রার্থীকে নির্বাচনের আগে বহিষ্কার করে জেলা আওয়ামী লীগ। তাদের মধ্যে রেকর্ড পরিমাণ ভোট বেশি পেয়ে জয়ী হয়েছেন ঘিওর সদর ইউনিয়নে অহিদুল ইসলাম টুুটুল ও সিংজুরী ইউনিয়নে আবু মো: আসাদুর রহমান মিঠু। আসাদুর রহমান পেয়েছেন ছয় হাজার ৭৭৫ ভোট, পক্ষান্তরে নৌকার প্রার্থী আব্দুল আজিজ মাস্টার পেয়েছেন দুই হাজার ৪৬২ ভোট। অহিদুল ইসলাম টুটুল পেয়েছেন আট হাজার ৮৩৬ ভোট তার বিপরীতে নৌকার প্রার্থী হামিদুর রহমান আলাই পেয়েছেন ছয় হাজার ১৪৯ ভোট।
আত্রাই (নওগাঁ) সংবাদদাতা জানান, নওগাঁর আত্রাইয়ে শান্তিপূর্ণভাবে আটটি ইউনিয়নের মাত্র দু’টিতে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন। অন্যান্যের মধ্যে দু’টিতে বিএনপি, একটিতে জামায়াত ও তিনটিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। বিজয়ী প্রার্থীরা হলেন- শাহাগোলা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী এস এম মামুনুর রশিদ, ভোঁপাড়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের নাজিম উদ্দিন মণ্ডল, আহসানগঞ্জে বিএনপির (স্বতন্ত্র) শেখ মো: মঞ্জুরুল আলম, পাঁচুপুরে মো: খবিরুল ইসলাম জামায়াত (স্বতন্ত্র), বিশায় মো: তোফাজ্জল হোসেন খাঁন তোফা আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী, মনিয়ারীতে মো: সম্রাট হোসেন বিএনপি (স্বতন্ত্র), কালিকাপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ সমর্থিত মো: নাজমুল হক নাদিন। হাটকালুপাড়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের দলীয় কোনো প্রার্থী ছিল না। এ ইউনিয়নে স্বতন্ত্র আফজাল হোসেন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।
কটিয়াদীতে আ’লীগের দুই নেতার জামানত বাজেয়াপ্ত
কটিয়াদী (কিশোরগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে চতুর্থ ধাপে গত রোববার অনুষ্ঠিত নির্বাচনে উপজেলার ৯টি ইউপির মধ্যে ৭টিতেই পরাজিত হয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থীরা। মাত্র দু’টি ইউনিয়নে জয় পেয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী। নির্বাচনে পরাজিত আওয়ামী লীগের সাত প্রার্থীর মধ্যে দুই প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে।
বনগ্রাম ইউনিয়নে নৌকা প্রতীক নিয়ে কামাল হোসেন মিলন পেয়েছেন দুই হাজার ২৩৫ ভোট। আনারস প্রতীক নিয়ে আট হাজার ৮৪২ ভোট পেয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন বিএনপি সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী জসিম উদ্দিন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী মো: সাইফুল্লাহ জামান সরকার (চশমা) পেয়েছেন ছয় হাজার ৪৪৭ ভোট। অন্য দিকে জালালপুর ইউনিয়নে চশমা প্রতীক নিয়ে পাঁচ হাজার ৫৮৯ ভোট পেয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন বিএনপি সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী রফিকুল আলম। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী মতিউর রহমান (টেবিল ফ্যান) পেয়েছেন দুই হাজার ৪৫৩ ভোট। এ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আবদুল খালেক সরকার রাজু নৌকা প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৬৪৭ ভোট। ছয়জন চেয়ারম্যান প্রার্থীর মধ্যে আবদুল খালেক সরকার রাজুর অবস্থান পঞ্চম।