গাজীপুর:গাজীপুরের শ্রীপুরে পঞ্চম ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে প্রতীক বরাদ্দের পর স্বতন্ত্র প্রার্থীর গণসংযোগ ও পোস্টার লাগানো প্রতিহত করতে নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন নৌকার এক প্রার্থী। উপজেলার প্রহলাদপুর ইউনিয়নের লোহাগাছিয়া বাজারে গত সোমবার দুপুরে পথসভায় নেতা-কর্মীদের এমন নির্দেশ দেন ওই ইউপির নৌকার প্রার্থী নুরুল হক আকন্দ। ওই বক্তব্যের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। গতকাল থেকে প্রহলাদপুর এলাকায় প্রচারণার কোন যানবাহন দেখলে তল্লাসি করছেন নৌকার সমর্থকেরা।
প্রহলাদপুর ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী দুজন। একজন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী (নৌকা প্রতীক) ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল হক আকন্দ (৫০), অপরজন আনারস প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী আবু সাঈদ আকন্দ (৬৫)। আবু সাঈদ আকন্দ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য। নৌকার প্রার্থীর বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে আবু সাঈদ আকন্দ গণসংযোগে নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নের জন্য জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে আবেদন করেছেন। এ ধরনের বক্তব্য দেওয়ায় উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে নুরুল হক আকন্দকে কারণ দর্শানোর নোটিশও দেওয়া হয়েছে।
ভিডিওতে দেখা যায়, নৌকার ওই প্রার্থী পথসভায় হ্যান্ড মাইক ব্যবহার করে নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের উদ্দেশে বক্তব্য দিচ্ছেন। বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘স্বতন্ত্র প্রার্থী বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগের পাঁয়তারা করছে, আমরা এই প্রহলাদপুরের ২৭টি গ্রামের মধ্যে কোথাও তাদের নির্বাচনী কার্যক্রম পরিচালনা করার সুযোগ দেব না। আপনারা আমাকে সহযোগিতা করবেন। স্বতন্ত্র প্রার্থীর কোনো পোস্টার লাগানো যাবে না। যেখানেই পোস্টার লাগানো হয়, আপনারা প্রতিরোধ না করতে পারলে আমাকে জানাবেন।’
বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে নুরুল হক আকন্দ বলেন, ‘এটা আবেগের কারণে হয়ে গেছে। এমনি বলে ফেলেছি। আসলে এমনটি বলার কথা ছিল না। ভুলবশত এটি হয়ে গেছে। আপনারা অন্যভাবে নিয়েন না প্লিজ।’
নৌকার প্রার্থী বলেন, ‘স্বতন্ত্র প্রার্থী বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগের পাঁয়তারা করছে, আমরা এই প্রহলাদপুরের ২৭টি গ্রামের মধ্যে কোথাও তাদের নির্বাচনী কার্যক্রম পরিচালনা করার সুযোগ দেব না।’
নুরুল হক আকন্দের এ ধরনের বক্তব্যে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। লোহাগাছিয়া গ্রামের বাসিন্দা আবুল মনসুর বলেন, ‘ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থীর ভালো জনমত আছে। তাঁর মুখে এ ধরনের বক্তব্য আশা করিনি। তিনি আইনের প্রতি শ্রদ্ধা দেখাতে পারতেন।’ একই গ্রামের মোবারক হোসেন বলেন, ‘এ ধরনের বক্তব্যে তিনি দলকে বিতর্কিত করেছেন। চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়ে দায়িত্বপালনের অভিজ্ঞতা আছে তাঁর। তাঁকে আরও দায়িত্বশীল হওয়া উচিত বলে মনে করি।’ ওই গ্রামের বাসিন্দা জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘নির্বাচনে গণসংযোগ করা প্রার্থীদের অধিকার। এ ধরনের নির্দেশে আমরা নৌকার সমর্থকেরা নিজেরাও বিব্রত।’
এ বিষয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী আবু সাঈদ আকন্দ বলেন, ‘নির্বাচনে একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আমি ও আমার নেতা-কর্মীরা খুবই নিরাপত্তাহীনতায় আছি। আজ মঙ্গলবার গণসংযোগে নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিষয়ে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে আবেদন দিয়ে এসেছি। নৌকা প্রতীকের প্রার্থী নুরুল হক আকন্দের লোকজন ইতিমধ্যে আমার নেতা-কর্মীদের মারধর করেছেন। তিনি ভিডিওতে যে হুংকার দিয়েছেন, বাস্তবে তার চেয়ে বেশি কোণঠাসা করে রেখেছেন আমাকে। আমার নেতা-কর্মীকে কাজ করতে বাধা দিচ্ছেন।’
এদিকে গতকাল মঙ্গলবার প্রহলাদপুর ইউনিয়ন পরিষদের সামনে কযেকজন লোক রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে গাড়ি তল্লাসী শুরু করেছে। ভুক্তভোগী এক গাড়ি চালক জানায়, তার গাড়ি থামিয়ে গাড়িতে কে কে আছে জিঞ্জাসা করেছে কয়েকজন লোক। নৌকার প্রচারণা ছাড়া অন্য প্রচারণা করা যাবে না বলে ওই চালককে জানিয়ে গাড়ি ছেড়ে দেন। একই ভাবে আরো গাড়ি তল্লাসী করা হয়েছে বলে জানান ওই ভুক্তভোগী। এ ছাড়া অন্যান্য ইউনিয়নেও প্রায় একই অবস্থা বলে জানা গেছে।
শ্রীপুর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আল নোমান লেন, ‘প্রহলাদপুর ইউনিয়নের নৌকার প্রার্থী নুরুল হক আকন্দের এমন বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা তাঁকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছি। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব দিতে হবে। জবাব পাওয়ার পর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
আগামী ৫ জানুয়ারি প্রহলাদপুর ইউপি নির্বাচনের ভোট গ্রহণ হবে।