তিনদিনের পূর্ণ দ্বিপক্ষীয় সফরে আগামী বুধবার মালদ্বীপ যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২২শে ডিসেম্বর সকালে মালের উদ্দেশে রওনা হয়ে ২৪শে ডিসেম্বর ঢাকা ফিরবেন তিনি। রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন প্রধানমন্ত্রীর সফরের বিস্তারিত তুলে ধরেন। বলেন, মালদ্বীপের রাষ্ট্রপতি ইব্রাহিম মোহামেদ সলিহ’র আমন্ত্রণে মালদ্বীপ যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। এবারের সফরে দু’দেশের মধ্যে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, দ্বৈত করারোপ, যুব ও ক্রীড়া বিষয়ে ৪টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে। সফরে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী, সেনাপ্রধান, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান, পররাষ্ট্র সচিবসহ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তা এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা যুক্ত হওয়ার কথা রয়েছে বলেও জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রোববার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর মালদ্বীপ সফরের প্রস্তুতি সম্পর্ক আনুষ্ঠানিকভাবে অবহিত করতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিকভাবে অগ্রসর মালদ্বীপে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক বাংলাদেশি কর্মরত।
মালদ্বীপ সমপ্রতি আরও কিছু দ্বীপে পর্যটন রিসোর্ট তৈরি করার পরিকল্পনা করেছে।
ফলে ভবিষ্যতে আরও বেশি বাংলাদেশি শ্রমিকের কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে বলে আশা করা যায়। সমপ্রতি মালদ্বীপ বাংলাদেশে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে তাদের শিক্ষার্থীদের পাঠানোর প্রস্তাব করায় দু’দেশের মধ্যে সহযোগিতার নতুন ক্ষেত্র সৃষ্টি হবে বলে আমরা আশাবাদী। মন্ত্রী বলেন, এই সফরের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও মালদ্বীপের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য-বিনিয়োগ সহযোগিতা সমপ্রসারণ, বাংলাদেশের শ্রম বাজার সুসংহতকরণ ও সমপ্রসারণ, অনিয়মিত শ্রমিকদের নিয়মিতকরণ, স্বাস্থ্য ও শিক্ষাক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধির প্রচেষ্টা গ্রহণ করা হবে যাতে করে বাংলাদেশের সার্ভিস সেক্টর প্রসার লাভ করবে। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল হবে। গত মার্চে জন্মশতবার্ষিকী ও সুবর্ণ জয়ন্তীর অনুষ্ঠানে ঢাকায় আসেন মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট। সমপ্রতি ঢাকা সফর করে গেলেন দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্ট ফয়সাল নাসিম। তাদের সফরে ঢাকা ও মালের মধ্যে কানেক্টিভিটির ওপর জোর দেয়া হয়েছে। বিশেষ করে চট্টগ্রাম ও মালের মধ্যে সরাসরি জাহাজ চলাচল ও সরাসরি ফ্লাইট চলাচল ইস্যুটি। এ বিষয়ে অগ্রগতি জানতে চাইলে মোমেন বলেন, আমরা কানেক্টিভিটির ওপর খুব জোর দিচ্ছি। মালদ্বীপের রাষ্ট্রপতি ও উপ-রাষ্ট্রপতির ঢাকা সফরেও এসব বিষয়ে জোর দেয়া হয়েছে। সমপ্রতি ফ্লাইট চালু হয়েছে। ইউএস বাংলা চালু করেছে। বিমানও ফ্লাইট শুরু করবে। শিপিং লাইনের বিষয়ে আমরা এখনো চূড়ান্ত করতে পারিনি। আশা করি এটিও দ্রুত হয়ে যাবে।
অগ্রাধিকার বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ) সইয়ের অগ্রগতি জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, কোভিডের কারণে অগ্রসর হতে পারেনি। এখনো সব ইস্যুগুলো এগ্রিড হয় নাই, তাই দেরি হচ্ছে। এ সময় মোমেন জানান মালদ্বীপে আটক ৪৩ বাংলাদেশিকে দেশে ফেরত নিয়ে আসা হবে। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ও মালদ্বীপের মধ্যে বন্দি বিনিময়ে আমরা একমত হয়েছি। মালদ্বীপে নতুন করে কর্মী যাওয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মোমেন জানান, মালদ্বীপের সঙ্গে আমাদের শ্রমবাজার বন্ধ হয়নি। কোভিডের কারণে বাজারটা চাঙ্গা ছিল না। এখন আবার হবে। তবে করোনার মধ্যেও আমরা কিছু নার্স ও মেডিকেল টেকনিশিয়ান পাঠিয়েছি। ওখানে আমাদের অনেক অবৈধ লোকও আছে। তাদের বৈধকরণ করছে।
আইসোলেশনে থাকায় পাকিস্তান যাননি পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী: এদিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম আইসোলেশনে থাকায় পাকিস্তানে যেতে পারেননি। রোববার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমির সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) বিশেষ বৈঠকে যোগ দিতে পাকিস্তান যাওয়ার কথা থাকলেও শেষ মুহূর্তে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম যেতে পারেননি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, কয়েকদিন আগে একজন কোভিড-১৯ পজেটিভ ব্যক্তির সংস্পর্শে এসেছিলেন। তখন থেকেই তিনি আইসোলেশনে রয়েছেন। তিনি বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানেও অংশ নিতে পারেননি। সে কারণে তার পাকিস্তান সফর বাতিল হয়েছে। আফগানিস্তান পরিস্থিতি নিয়ে ওআইসির পক্ষ থেকে একটি বিশেষ বৈঠক আহ্বান করা হয়েছে। এতে ওআইসি দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা অংশ নিচ্ছেন। ১৮ ও ১৯শে ডিসেম্বর এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলমের অংশ নেয়ার কথা ছিল।
প্রধানমন্ত্রীর সফরসূচির বিস্তারিত: পররাষ্ট্র মন্ত্রী জানান, ২২শে ডিসেম্বর বিশেষ ফ্লাইটযোগে প্রধানমন্ত্রী মালেতে অবতরণ করবেন। বিমানবন্দরে মালদ্বীপ সরকারের পক্ষ থেকে তাকে অভ্যর্থনা জানাবেন দেশটির পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। পরদিন সকালে প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহামেদ সলিহ আনুষ্ঠানিকভাবে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাবেন। তখন তাকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হবে। প্রেসিডেন্সিয়াল প্রাসাদে দুই নেতার মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হবে। মালদ্বীপের পার্লামেন্টেও বক্তব্য রাখবেন প্রধানমন্ত্রী। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সফরকালে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মালদ্বীপের ভাইস প্রেসিডেন্ট, স্পিকার ও প্রধান বিচারপতি সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন বলে আশা করা যাচ্ছে। মালদ্বীপে কর্মরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গেও ভার্চ্যুয়ালি কুশল বিনিময় করবেন প্রধানমন্ত্রী।
মালদ্বীপ কারাগারে থাকা ৪৩ বাংলাদেশিকে ফেরানোর উদ্যোগ: এদিকে বিভিন্ন অপরাধে মালদ্বীপের কারাগারে থাকা ৪৩ জন বাংলাদেশি বন্দিকে ফেরাতে দুই দেশের মধ্যে বন্দি বিনিময়ের একটি চুক্তি হচ্ছে। রোববার মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ সংক্রান্ত একটি চুক্তির খসড়া অনুমোদন হয়েছে।