কুমিল্লা সিটি মেয়র সাক্কুকে বিএনপির কেন্দ্রীয় পদ থেকে অব্যাহতি

Slider ফুলজান বিবির বাংলা

কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র মনিরুল হক সাক্কুকে জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্যপদ থেকে অব্যাহতি দিয়েছে বিএনপি। গত অক্টোবরে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয় বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। বিষয়টি এতদিন আলোচনার বাইরে ছিল।

সাক্কুকে কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য পদ থেকে অব্যহতি দেওয়ার বিষয়টি সোমবার রাতে নিশ্চিত করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, ‘দলের জাতীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য পদ থেকে সাক্কুকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।’

দলীয় সূত্র জানিয়েছে, বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে মনিরুল হক সাক্কুকে অব্যাহতি দেওয়ার চিঠিতে বলা হয়, ‘ইতিপূর্বে দলীয় কর্মসূচিতে আপনার (সাক্কু) অংশগ্রহণ সন্তোষজনক না হওয়ায় নির্দেশক্রমে অব্যাহতি প্রদান করা হলো।’ অব্যাহতির চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।

সূত্র আরও জানায়, দ্বিতীয়বার কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হয়ে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে শপথ গ্রহণ শেষে বিএনপি নেতা মনিরুর হক সাক্কু তার (প্রধানমন্ত্রী) পা ছুঁয়ে সালাম করেন। এ নিয়ে ওই সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ সর্বত্র দলীয় নেতাকর্মীরা সাক্কুর ব্যাপক সমালোচনাও করেন। সেই থেকে দলীয় কর্মকাণ্ডে নিষ্ক্রিয় সাক্কু।

দলের কর্মকৌশল ঠিক করতে জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর কেন্দ্রীয় ও মাঠ পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে গত ২১, ২২ ও ২৩ সেপ্টেম্বর ধারাবাহিক মতবিনিময় সভা করে বিএনপি। সে বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হয় কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির নেতাদের। এর মধ্যে ২২ সেপ্টেম্বর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে কুমিল্লা বিভাগের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায়ও সাক্কু অনুপস্থিত ছিলেন। এর কারণ ব্যাখ্যা করতে সাক্কুকে চিঠি দেয় কেন্দ্র।

এ প্রসঙ্গে মনিরুল হক সাক্কু সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি উত্তর দিয়েছিলাম, সেদিন আমেরিকান রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আমার বৈঠক ছিল। যেদিন বৈঠক তার দুই দিন আগে ঢাকা থেকে চিঠি আসছে মিটিংয়ের। সে জন্য আমি যেতে পারিনি। দল তাদের। আমি ৪০ বছর বিএনপি করি। এটি তারেক রহমান সাহেবের ব্যাপার। পার্টির সিদ্ধান্তের ব্যাপার। তারা যা খুশি তা করুক। আমি আমার মতো চলছি।’

সাক্কু কথা প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সাক্কু বিএনপির রাজনীতিতে সেভাবে নেই। তার আশপাশের লোকজনও ক্ষমতাসীন দলের। তার সঙ্গে দলীয় নেতাকর্মীদের তেমন যোগাযোগ নেই। দলীয় কর্মকাণ্ডে তিনি অংশও নেন না। বরং তার বিরুদ্ধে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের স্থানীয় নেতাকর্মীদের সখ্যতার বিষয়টি সবারই জানা। এ সব বিষয়ে দলের শীর্ষ নেতাদের কাছে স্থানীয় পর্যায় থেকে বারবার অভিযোগও করা হয়।

গত সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সময় মনোনয়ন পেতে বেশ বেগ পেতে হয়েছিল মনিরুল হক সাক্কুকে। তখন স্থানীয় আওয়ামী লীগের সঙ্গে সু-সম্পর্কের অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে। মনিরুল হক সাক্কু বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করে ‘তার বাবা মুসলিম লীগের এমপিএ ছিলেন, তিনি আওয়ামী লীগের সঙ্গে মিশতে পারেন না’ বলে চেয়ারপারসনকে আশ্বস্ত করেন। কিন্তু কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বিজয়ী হওয়ার পর তিনি খালেদা জিয়াকে দেওয়া কথা ভুলে যান।

সার্বিকভাবে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বিষয়টির উপর নজর রাখলেও শেষমেষ চূড়ান্ত সিদ্ধান্তেই উপনীত হয়। দলীয় কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ সন্তোষজনক না হওয়ায় তাকে জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য পদ থেকে অব্যাহতি প্রদান করে। বিএনপির প্রভাবশালী নেতা ছিলেন কর্নেল (অব.) প্রয়াত আকবর। তার বলয়ে থেকেই রাজনীতি করে আসেন সাক্কু।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *