খুলনা: সাধারণ নারী কোটায় মেধা তালিকায় প্রথম হয়েও জমি না থাকায় এবার পুলিশে চাকুরি পাচ্ছেন না খুলনার মিম আক্তার। গতকাল শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে খুলনা পুলিশ সুপার কার্যালয় থেকে তাকে জানিয়ে দেওয়া হয়, পুলিশ ভেরিফিকেশনে স্থায়ী ঠিকানা না থাকায় চাকরিটি দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এমন খবর শুনে কান্নায় ভেঙে পড়েছে মিমের ভূমিহীন পরিবার।
মিম আক্তার খুলনার সোনাডাঙ্গা থানার ৩ নম্বর আবাসিক এলাকার ১ নম্বর রোডে ডাক্তার বাবর আলীর বাড়ীর ভাড়াটিয়া বাসিন্দা। বাবা মো. রবিউল ইসলাম খুলনার বয়রা ক্রস রোডে ছোট্ট একটি ভাড়াটে দোকান নিয়ে লেপতোশকের ব্যবসা করেন। দোকানটির নাম বেডিং হাউজ।
মিম আক্তার গণমাধ্যমকে বলেন, পুলিশ ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল পদে সাধারণ নারী কোটায় আবেদনের পর ২৫ অক্টোবর খুলনা শিরোমনি পুলিশ লাইন্সে শারীরিক যোগ্যতা যাচাই হয়। ২৫, ২৬ ও ২৭ অক্টোবর তিনদিন যাবত যাচাইয়ে আমি উত্তীর্ণ হই। এরপর ৮ তারিখে লিখিত পরীক্ষা হয় খুলনা সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে, পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হই। এরপর মনস্তাত্ত্বিক ও মৌখিক পরীক্ষাতেও উত্তীর্ণ হই। ফলাফলে জানতে পারি আমি মেধাতালিকায় প্রথম হয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘এরপর খুলনা জেলা পুলিশ লাইন্সে সাধারণ মেডিকেল পরীক্ষা হয়। সেখানেও উত্তীর্ণ হয়েছি। তারপর ১২ নভেম্বর রাতে ঢাকাতে নিয়ে যাওয়া হয় রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স হাসপাতালে। সেখানে ১৩ তারিখ সকালে মেডিকেল পরীক্ষা হয়। তারপর বাড়িতে ফিরে আসি। বলেছিল, পরবর্তীতে জানানো হবে। এরপর পুলিশ ভেরিফেকিশেন শুরু হয়। সোনাডাঙ্গা থানা, পুলিশ ফাঁড়ি ও সিটিএসবি থেকে বাড়িতে তদন্তে যায়। তাদের কাছে ভূমিহীন সার্টিফিকেট জমা দিয়েছি। তারা বলেছিলেন, ৫ ডিসেম্বর আমাকে জানাবেন। ফোন দিয়ে ৭ তারিখে জেলা পুলিশ লাইন্সে ফিঙ্গার প্রিন্টের জন্য ডাকা হয়। সেখানে পাঁচ আঙ্গুলের ছাপ দিয়ে এসেছিলাম। সেখান থেকে বলেছিলেন, জানিয়ে দেওয়া হবে। এরপর থেকে আর কিছুই জানায়নি।’
কান্নাজড়িত কণ্ঠে মিম বলেন, ‘যারা ফিঙ্গার দিয়ে এসেছিল তাদের ফোন দিয়ে চাকরির বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। কিন্তু আমাকে কিছু না জানানোর কারণে আমি শুক্রবার (১০ ডিসেম্বর) জেলা পুলিশ লাইন্সে গিয়েছিলাম। তারা কিছুই জানেন না জানিয়ে এসপি স্যারের সঙ্গে কথা বলতে বলেন। এরপর শনিবার (১১ ডিসেম্বর) খুলনা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে গিয়েছি। পুলিশ সুপার স্যারকে পাইনি। ২-৩ ঘণ্টা অপেক্ষার পর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তানভির আহম্মেদ স্যারের সঙ্গে দেখা হয়েছে। স্যার বলেছেন, তোমার সব ঠিক আছে। তবে স্থায়ী ঠিকানা না থাকায় তোমার চাকরিটা আমরা দিতে পারছি না। কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি ফিরে এসেছি। ভূমিহীন বলে আমার চাকরি হবে না। আমার জন্ম খুলনাতে। জন্ম সনদ খুলনা সিটি কর্পোরেশনের।’
মিমের বাবা রবিউল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, গত ১৭ মাস ধরে এই বাবর আলীর বাড়িতে ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করছি। ১৯৮৮ সাল থেকে এই রোডের আশপাশে বিভিন্নস্থানে ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করে আসছি। গত ৩২ বছর ধরে পরিবার নিয়ে রয়েছি এখানে। মেয়ের জন্ম খুলনাতে। এখানে আমার নিজস্ব কোনো জমি নেই। এ ছাড়া আমার গ্রামের বাড়িতেও আমার নামে কোনো জমি নেই। পৈত্তিক বাড়ি বাগেরহাট জেলার চিতলমারি থানার বড়বাড়িয়া গ্রামে। বাবা আব্দুল লতিফ শেখ এখনো জীবিত আছেন। ভিটেবাড়ির জমিটুকুও আমার বাবার নামে রয়েছে। আমার নামে জমি নেই। এখন ভূমিহীন বলে আমার মেয়ের চাকরিটা হচ্ছে না।’
তিনি বলেন, ‘মেয়ের পুলিশে কন্সটেবল পদে চাকরির জন্য পুলিশ ভেরিফিকেশনের জন্য এসেছিলেন। তাদের আমি সব ঘটনা খুলে বলেছি। তারপর তারা বলে গেলেন, চাচা স্থায়ী ঠিকানা, জমি না থাকলে আপনার মেয়ের চাকরিটা সম্ভবত হবে না।’
খুলনা জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তানভীর আহম্মেদ সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘মেয়েটা সবদিক দিয়েই পারফেক্ট। মেধা তালিকায় প্রথম হয়েছে। তবুও পুলিশের রুলসের কারণে আমরা তাকে নিতে পারছি না। ঘটনাটি বরিশাল জেলার আছপিয়ার ঘটনার মতোই। আমরা তাকে নিতে চাই তবে নিয়মের কারণে আটকে গেছি। তাকে নিয়োগ হতে হলে জেলার স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে। জন্ম এখানে হলে বা জন্ম সনদ এখানে থাকলেই হবে না। তার স্থায়ী ঠিকানা লাগবে। সেটি মিমের হচ্ছে না। বাগেরহাটে তার চাচা, বাবা ও মামাদের কিছুটা জমি রয়েছে। সে যদি বাগেরহাট জেলা থেকে আবেদন করতো তবে সেটি ঠিক ছিল।’