শিক্ষার্থীদের হাফ পাস আন্দোলনের মধ্যে রাজধানীতে যাত্রীবাহী বাসে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ উঠলে মাঠে নামে ভ্রাম্যমাণ আদালত। তাদের অভিযানেও অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়টি ধরা পড়ে। সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের দায়ে অসংখ্য বাসকে জরিমানা করা হয়। এতেও থামেনি অতিরিক্ত ভাড়া আদায়। একাধিকবার অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের মতো অপরাধ করায় তাই ১৬৫টি বাসের রুট পারমিট বাতিলসহ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। বিআরটিএ সূত্রে জানা গেছে, এই ১৬৫টি বাস ২৫ কোম্পানির অধীনে রাজধানীতে চলাচল করছে। এসব বাসের রুট পারমিট বাতিলসহ আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে এরই মধ্যে আঞ্চলিক পরিবহন কমিটির (আরটিসি) কাছে সুপারিশ পাঠানো হয়েছে। রুট পারমিট বাতিলের সুপারিশ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিআরটিএর এক কর্মকর্তা বলেন, এর আগে শাস্তি হিসেবে কোনো বাসের রুট পারমিট বাতিলের সুপারিশ করা হয়নি। এবার আমরা চাই, এ শাস্তির মাধ্যমে দৃষ্টান্ত তৈরি হোক। প্রথমে বাস মালিক সংগঠনের নেতারা খুব বড় বড় কথা বলে অন্যায়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন বললেও এখন অন্য কথা বলছেন।’ ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এনায়েত উল্যাহকে কয়েকবার ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক হুমায়ন কবির তপন বলেন, যেসব বাস যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া নিয়েছে, তাদের জরিমানা করে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। এক মুরগি কয়বার জবাই করা হবে? একজন মালিকের দু-একটা বাস থাকে। এভাবে রুট পারমিট বাতিল করলে কীভাবে চলবে। আমরা মালিক সমিতিতে সভা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব। সরকার জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পর পরিবহন মালিকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বাসে কিলোমিটারপ্রতি প্রায় ২৭ শতাংশ এবং লঞ্চে ৩৫ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়। গত ৮ নভেম্বর থেকে এ ভাড়া কার্যকর করা হয়েছে। তবে যাত্রীদের পক্ষ থেকে অভিযোগ উঠেছে, বাস মালিকরা সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছেন। এর মধ্যে ১১ নভেম্বর থেকে হাফ ভাড়ার দাবিতে সড়কে আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীরা। নটর ডেম কলেজের শিক্ষার্থীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় গণমাধ্যমকর্মীসহ কয়েকজন শিক্ষার্থী সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হওয়ার পর নিরাপদ সড়কের দাবিসহ ১১ দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করে শিক্ষার্থীরা। তাদের সেই আন্দোলন এখনো চলছে। অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধে, গত ৮ নভেম্বর থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা শুরু করে বিআরটিএ। রাজধানী ও চট্টগ্রাম নগরে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে কি না, তা দেখছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। অভিযানে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগের প্রমাণ মিললে সংশ্লিষ্ট বাসকে জরিমানা করা হচ্ছে। একই অপরাধে কমপক্ষে তিনবার জরিমানা করা হয়েছে- অভিযানকালে এমন ২৫ কোম্পানির প্রায় ১৬৫টি বাসের নাম পাওয়া গেছে।
বিআরটিএর বিজ্ঞপ্তি সূত্রে জানা গেছে, যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে সবচেয়ে বেশি নিয়ম ভেঙেছে বসুমতি ১৬ বার, রাইদা ১৩ বার, পরিস্থান ১১ বার। এমএম লাভলী ও অনাবিল কোম্পানি ১০ বার করে সরকারি নির্দেশনা লঙ্ঘন করেছে। এ ছাড়া আলিফ ৯ বার; লাব্বাইক আটবার; তুরাগ, বলাকা ও স্বাধীন সাতবার; প্রজাপতি, রজনীগন্ধা ও শিকড় ছয়বার; আকাশ, আজমেরী, মনজিল, প্রভাতি ও বনশ্রী পাঁচবার; আসমানী, প্রচেষ্টা, ভিক্টর, মিডলাইন, ডি লিংক, রাজধানী, গুলিস্তান-গাজীপুর পরিবহন, ভিআইপি বাস তিনবার করে নির্দেশনা লঙ্ঘন করেছে। বিআরটিএর পরিচালক (এনফোর্সমেন্ট) মো. সরওয়ার আলম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মাসব্যাপী অভিযানে ১ হাজার ৪০৮টি বাসকে ৫৭ লাখ ৩১ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এর মধ্যে ৮০টি বাস সিএনজিচালিত এবং ১ হাজার ৩২৮টি বাস ডিজেলচালিত। বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বিআরটিএর পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালতের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের একই অপরাধের পুনরাবৃত্তি করা ২৫টি বাস কোম্পানির বাসের তালিকা করা হয়েছে। তালিকায় গাড়ির নম্বর, অপরাধ সংঘটনের তারিখ ও জরিমানার তথ্য উল্লেখ করে রুট পারমিট বাতিলসহ আইনি ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করা হয়েছে। এরই মধ্যে আরটিসি কর্তৃপক্ষের কাছে তালিকা পাঠানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, অভিযানে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়, রুট পারমিট না থাকাসহ নানা অপরাধে ৫৬টি বাসকে ডাম্পিংয়ে পাঠানো হয়েছে। বেপরোয়া গাড়ি চালানো ও সরকারি দায়িত্ব পালনে বাধা দেওয়ায় পাঁচ বাসচালককে কারাদ দেওয়া হয়েছে।