দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কিছু হলে এর দায় সরকারকে নিতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিএনপি নেতারা। মঙ্গলবার রাজধানীর নয়াপল্টনে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও তার বিদেশে চিকিৎসার দাবিতে আয়োজিত ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশে এ হুঁশিয়ারি দেন। সমাবেশে ঢাকাসহ আশপাশের আটটি জেলা থেকে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা যোগ দেন। বেলা একটায় সমাবেশ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও এদিন সকাল থেকেই দলটির নেতাকর্মীরা বিভিন্ন ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে সমাবেশে হাজির হন। বেলা বাড়ার সাথে সাথে নয়াপল্টন এলাকায় জনসমুদ্রে পরিণত হয়। এসময় নেতাকর্মীরা খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেন। সমাবেশকে কেন্দ্র করে দুপুর বারোটার পর থেকেই নয়াপল্টন এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়া মঙ্গলবার সকাল থেকেই সতর্ক অবস্থানে ছিল আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা। রাজধানীর নাইটিঙ্গেল মোড়, ফকিরাপুল মোড়, বিজয়নগর, নয়াপল্টন এলাকায় বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়। এসময় বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সাধারণ মানুষকে তল্লাশি করতে দেখা গেছে।
সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আজকের এই জনসমুদ্রই প্রমাণ করছে যদি অবিলম্বে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে বিদেশে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা না হয় এদেশের মানুষ কখনো চুপ করে বসে থাকবেনা। এদেশের কোটি কোটি মানুষের আহাজারি অবশ্যই আল্লাহর কাছে পৌঁছাচ্ছে।
তিনি বলেন, সরকার প্রতিনিয়ত জনগণের সঙ্গে মিথ্যা কথা বলছেন। তারা বলছেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানো বিষয়টি আইনে নেই। কেন তারা এসব মিথ্যে কথা বলছেন? ৪০১ ধারায় পরিষ্কার বলা আছে, সরকার চাইলেই বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে পারে। তাই আমি পরিস্কারভাবে বলে দিচ্ছি বেগম খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা অবস্থা যদি না করা হয়, যদি তার কোন ক্ষতি হয় তাহলে দেশের মানুষ এ সরকারকে রেহাই দেবেনা। একই দাবিতে আগামী দু-এক দিনের মধ্যেই নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলেও সমাবেশে জানান ফখরুল।
ভাইস চেয়ারম্যান মেজর অব. হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম বলেন, এই সরকার কখনোই বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিবেনা। আমাদেরকে রাজপথে সংগ্রামের মাধ্যমে তাকে মুক্ত করতে হবে। আজকের এই জনসমুদ্র প্রমাণ করে সারা দেশের মানুষ খালেদা জিয়ার মুক্তি চায় এবং তার সুচিকিৎসা চায়। আপনারা জানেন, বেগম জিয়া জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে লড়াই করছেন। ডাক্তাররা প্রতিনিয়ত বলছেন তাকে বিদেশে পাঠানোর জন্য। কিন্তু এ সরকার কর্ণপাত করছে না। আমি একটা কথা পরিষ্কার বলতে চাই, যদি খালেদা জিয়ার কিছু হয় তাহলে এই দায় সরকারকেই নিতে হবে।
খালেদা জিয়ার ফের রক্তক্ষরণ: সোমবার সন্ধ্যায়ও খালেদা জিয়ার শরীরে রক্তক্ষরণ হয়েছে বলে জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, গতকাল (সোমবার) রাত বারোটায় ডা. জাহিদ আমাকে টেলিফোন করে বলেন দ্রুত হাসপাতালে যাওয়ার জন্য। হাসপাতালে যাওয়ার পর তাদের দেখে খুব চিন্তিত মনে হলো। চিকিৎসকরা আমাকে বললেন, গতকাল সন্ধ্যায় খালেদা জিয়ার আবার রক্তক্ষরণ হয়েছে। আল্লাহর অশেষ রহমত আগের ন্যায় চিকিৎসকদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে তার রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে সক্ষম হয়েছেন। তিনি বলেন, আজ (মঙ্গলবার) সকালে ডা. জাহিদকে ফোন করেছিলাম, তিনি আমাকে জানান, ম্যাডাম আগের থেকে অনেকটা ভালো। এই ভালো সেই ভালো নয়। কারণ ডাক্তাররা বলেছেন, তার যে চিকিৎসা প্রয়োজন সেই চিকিৎসা এখনো এই দেশে নেই। তাকে অবশ্যই বিদেশে উন্নত মেডিকেল সেন্টারে পাঠাতে হবে।
ফখরুল বলেন, সরকারের মন্ত্রীরা বলছেন, খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের বিষয়ে বিএনপি যা বলতে বলেছে, ডাক্তাররাও সেই কথা বলছেন। আমি ধিক্কার জানাই সেসব লোককে যারা দেশের নামীদামী চিকিৎসকদের নিয়ে বিদ্রুপ করেছেন।
তিনি বলেন, গতকাল (সোমবার) স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, আমরা বেগম জিয়ার কাগজপত্র বিদেশে পাঠিয়েছি। তিনি কূটনৈতিকদের সামনে এ কথা বলেছেন। কেন বলেছেন? কারণ খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা সরকারকে চাপ দিচ্ছেন।
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সভাপতি আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, ঢাকা জেলা সভাপতি দেওয়ান সালাহউদ্দিন মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, কৃষকদলের সাধারণড় সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বাবুল, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদির ভুইয়া জুয়েল, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান, ছাত্রদলের সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন, সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল প্রমূখ।