বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার রায় আজ রোববার ঘোষণা করা হবে। ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আবু জাফর মো: কামরুজ্জামান রায় ঘোষণা করবেন।
এদিকে চাঞ্চল্যকর এ মামলার রায়ে সব আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড প্রত্যাশা করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। অপর দিকে আসামি পক্ষের আইনজীবীদের দাবি, রাষ্ট্রপক্ষ মামলা প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। তাই তারা আশা করছেন আসামিরা খালাস পাবে। এ বিষয়ে পাবলিক প্রসিকিউটর আবু আব্দুল্লাহ বলেন, আমরা রাষ্ট্রপক্ষ থেকে মামলার সব সাক্ষীর তথ্য-উপাত্ত, স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীসহ সবকিছু বিচার-বিশ্লেষণ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে আদালতে উপস্থাপন করেছি। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে মামলাটি প্রমাণ করতে পেরেছি। তাই আমরা সব আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হবে বলে আশা করছি। অপর দিকে আসামি পক্ষের আইনজীবীরা বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ মামলা প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। তাই এ মামলা থেকে আসামিরা ন্যায়বিচার পাবে এবং খালাস পাবে। এদিকে গত ১৪ নভেম্বর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আবু জাফর মো: কামরুজ্জামানের আদালত উভয় পক্ষের শুনানি শেষে রায় ঘোষণার জন্য ২৮ নভেম্বর দিন ধার্য করেন। এ মামলায় মোট ৪৬ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছে। গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত।
২০১৯ সালের ১৩ নভেম্বর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ওয়াহিদুজ্জামান ২৫ জনকে অভিযুক্ত করে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। এদের মধ্যে এজাহারভুক্ত ১৯ জন এবং এর বাইরে তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে আরো ছয়জন জড়িত থাকার প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়। এজাহারভুক্ত ১৯ জনের মধ্যে ১৭ জন এবং এজাহারের বাইরে থাকা ছয়জনের মধ্যে পাঁচজনসহ মোট ২২ আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পলাতক রয়েছেন তিনজন। অভিযোগপত্রে ৬০ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে এবং ২১টি আলামত ও আটটি জব্দ তালিকা আদালতে জমা দেয়া হয়েছে।
এজাহারে থাকা আসামিরা হলেন মেহেদী হাসান রাসেল, অনিক সরকার, ইফতি মোশাররফ সকাল, মেহেদী হাসান রবিন, মেফতাহুল ইসলাম জিওন, মুনতাসির আলম জেমি, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভির, মুজাহিদুর রহমান, মুহতাসিম ফুয়াদ, মনিরুজ্জামান মনির, আকাশ হোসেন, হোসেন মোহাম্মদ তোহা, মাজেদুল ইসলাম, শামীম বিল্লাহ, মোয়াজ আবু হুরায়রা, এ এস এম নাজমুস সাদাত, মোর্শেদুজ্জামান জিসান ও এহতেশামুল রাব্বি তানিম। এজাহারবহির্ভূত ছয় আসামি হলেন ইশতিয়াক আহমেদ মুন্না, অমিত সাহা, মিজানুর রহমান ওরফে মিজান, শামসুল আরেফিন রাফাত, এস এম মাহমুদ সেতু ও মোস্তবা রাফিদ। এছাড়া পলাতক তিনজন হলেন মোর্শেদুজ্জামান জিসান, এহতেশামুল রাব্বি তানিম ও মোস্তবা রাফিদ। এদের মধ্যে প্রথম দুজন এজাহারভুক্ত।
২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে আবরারকে তার হলের কক্ষ থেকে ডেকে নিয়ে যান বুয়েট ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী। তারা ২০১১ নম্বর কক্ষে নিয়ে গিয়ে আবরারকে পিটিয়ে হত্যা করে। পরে রাত ৩টার দিকে শেরে বাংলা হলের সিঁড়ি থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় ওই বছরের ৭ অক্টোবর রাজধানীর চকবাজার থানায় আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ বাদি হয়ে ১৯ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন। পুলিশ পরে ২২ জনকে গ্রেফতার করে। এর মধ্যে আটজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছেন। এদের সবাই বুয়েট ছাত্রলীগের নেতাকর্মী। আবরার ফাহাদ ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।
পরিবারের দাবি সর্বোচ্চ শাস্তি
কুষ্টিয়া ও কুমারখালী সংবাদদাতা জানান, কুষ্টিয়ার ছেলে আবরার ফাহাদ হত্যার দুই বছর দুই মাস পর আজ রায় ঘোষণা হতে যাচ্ছে। দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করা এই মামলার সব আসামির মৃত্যুদণ্ড চায় আবরারের পরিবার। হত্যাকারীদের কঠিন শাস্তি নিশ্চিত করলে আর কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মেধারী শিক্ষার্থীদের এভাবে চলে যেতে হবে না বলে মনে করেন আবরারের মা রোকেয়া খাতুন। গতকাল সকালে কুষ্টিয়া শহরের পিটিআই সড়কের বাসায় সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি। এ দিকে রায় ঘোষণা শুনতে গতকালই আবরারের বাবাসহ অন্য আত্মীয়রা কুষ্টিয়া থেকে ঢাকায় গেছেন।
ফাহাদের ছোট ভাই আবরার ফাইয়াজ ঢাকায় যাওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত বাড়িতে থেকেই রায় শুনবেন বলে জানা গেছে। খুনিদের চেহারা সহ্য করতে পারবেন না বলে মা রোকেয়া খাতুন কুষ্টিয়ার বাসাতেই থাকবেন। আবরারের মা বলেন, ওদের সর্বোচ্চ শাস্তি না হলে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হত্যাকাণ্ড চলতেই থাকবে। আজ আমার ছেলে গেছে, কাল আরেক মায়ের কোল খালি হবে। আমার মতো আর কোনো মায়ের যেন এমন কষ্ট না হয়। চোখ মুছতে মুছতে রোকেয়া খাতুন আক্ষেপ করে বলেন, আমার ছেলেকে ওরা গুলি করে মারতে পারত, তাহলে ওর এত কষ্ট হতো না। মামলায় আরো আসামি হওয়া দরকার ছিল মন্তব্য করে তিনি বলেন, আশপাশের রুম থেকে ফাহাদের নির্যাতনের খবর জেনেও তারা কেন শিক্ষক বা কর্তৃপক্ষকে জানায়নি? বিষয়টি জানালে এই নির্মম অত্যাচার ও মৃত্যু হতো না। বুয়েট ছাত্র আবরার ফাহাদকে ভুলতে পারেনি কুষ্টিয়ার সহপাঠীসহ প্রতিবেশীরা। তারা বলেন, আমাদের আবরারকে যে নির্মম অত্যাচার করে হত্যা করা হয়েছে তা ভুলিনি। আমরা চাই সব আসামির ফাঁসি।