ঢাকা: গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে দল থেকে বহিষ্কার করা হলেও আপাতত তিনি মেয়র পদে বহাল থাকছেন। স্থানীয় সরকারের সিটি করপোরেশন আইনে দল থেকে বহিষ্কার করা হলে পদ হারাবেন এমন কোনো বিধান না থাকায় তিনি মেয়রপদে বহাল থাকছেন। তবে তার বিরুদ্ধে মামলা হলে এবং সেই মামলায় অভিযোগপত্র আদালতে গৃহীত হলেই কেবল তিনি মেয়র পদ হারাবেন। অন্যথায় আইন সংশোধন করে তাকে বাদ দিতে হবে।
এ ব্যাপারে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. হেলালুদ্দীন আহমেদ বলেন, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র জাহাঙ্গীর আলম দল থেকে মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। ইতোমধ্যেই দল থেকে তাকে বহিষ্কার করেছে। কিন্তু দল থেকে বহিষ্কার হলে আইন অনুযায়ী মেয়র পদ বাতিল হওয়ার সুযোগ নেই। ফলে আপাতত তার মেয়র পদে থাকতে আইনি বাধা নেই। তারপরেও আমরা উপরের নির্দেশের অপেক্ষায় রয়েছি।
জাহাঙ্গীর আলম গাজীপুরের মেয়র থাকছেন কিনা, ‘স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন, ২০০৯’ পর্যালোচনার পর দু-একদিনের মধ্যে সেই বিষয়ে জানা যাবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। গতকাল সোমবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষ থেকে মন্ত্রিসভা বৈঠক শেষে বেরিয়ে যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেন, ‘আইনটা (সিটি করপোরেশন আইন) দেখে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আইনটি পর্যালোচনা হোক তারপর বলব।’
সাবেক এই নির্বাচন কমিশন সচিব বলেন, দলীয় প্রতীকে স্থানীয় নির্বাচনে ভোট করতে ২০১৫ সালে আইন সংশোধন করা হয়। তখন শুধু দলীয় প্রতীক ও প্রার্থিতার বিষয়টি যুক্ত করা হয়। মেয়র বা স্থানীয় সরকারের অন্য কোনো পদ থেকে অপসারণের বিষয়ে নিয়মের কোনো পরিবর্তন হয়নি। করপোরেশন আইনেও এ নিয়ে স্পষ্ট কিছু বলা হয়নি। কেবল বলা আছে, ক্রিমিনাল অপরাধ করলে তার বিরুদ্ধে যদি আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়, তখন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় মেয়র পদ থেকে বহিষ্কার করতে পারে। ফলে এই মুহূর্তে গাজীপুর সিটির মেয়র পদে বহাল থাকছেন, যদি না অন্য কোনো অপরাধে তিনি অভিযুক্ত না হন।
স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইনে, ‘মেয়র ও কাউন্সিলরগণের সাময়িক বরখাস্তকরণ’ অংশে বলা হয়েছে- সিটি করপোরেশনের কোনো মেয়র বা কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলায় অভিযোগপত্র আদালতে গৃহীত হলে সরকার লিখিত আদেশের মাধ্যমে মেয়র বা কাউন্সিলরকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করতে পারবে। দলীয় প্রতীকে স্থানীয় নির্বাচনে ভোট করতে ২০১৫ সালে আইন সংশোধন করা হয়। তখন শুধু দলীয় প্রতীক ও প্রার্থিতার বিষয়টি যুক্ত করা হয়। মেয়র পদ থেকে অপসারণের বিষয়ে নিয়মের কোনো পরিবর্তন হয়নি। করপোরেশন আইনেও এ নিয়ে স্পষ্ট কিছু বলা হয়নি। স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইনে, ‘মেয়র ও কাউন্সিলরগণের সাময়িক বরখাস্তকরণ’ অংশে বলা হয়েছে- ১২ (১) সিটি করপোরেশনের কোনো মেয়র বা কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলায় অভিযোগপত্র আদালতে গৃহীত হলে সরকার লিখিত আদেশের মাধ্যমে মেয়র বা কাউন্সিলরকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করতে পারিবে।
আইনে আরও বলা আছে, সিটি কর্পোরেশন আইনের ১২ (২) উপ-ধারা (১) এর অধীনে সিটি করপোরেশনের কোনো মেয়রকে সাময়িকভাবে বরখাস্তের আদেশ দেওয়া হলে সেই আদেশপ্রাপ্তির তিন দিনের মধ্যে সাময়িকভাবে বরখাস্ত মেয়র ক্রমানুসারে মেয়র প্যানেলের জ্যেষ্ঠ সদস্যের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করবেন। মেয়রের বিরুদ্ধে আনা আইনি কার্যক্রম শেষ না হওয়া পর্যন্ত, অথবা সেই মেয়র অপসারিত হলে, তার পরিবর্তে নতুন মেয়র নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র সাময়িকভাবে দায়িত্ব পালন করবেন।
মেয়র এবং কাউন্সিলরদের অপসারণের বিষয়ে আইনে বলা হয়েছে- ১৩ (১) মেয়র অথবা কাউন্সিলর পদ থেকে অপসারণযোগ্য হবেন, যদি তিনি- (ক) যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়া সিটি করপোরেশনের পর পর তিনটি সভায় অনুপস্থিত থাকেন; অথবা (খ) নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধে আদালতে দণ্ডিত হন; (গ) দায়িত্ব পালন করতে অস্বীকার করেন অথবা শারীরিক বা মানসিক অসামর্থ্যের কারণে দায়িত্ব পালনে অক্ষম হন; (ঘ) অসদাচরণ বা ক্ষমতার অপব্যবহারের দায়ে দোষী সাব্যস্ত হন; (ঙ) নির্বাচনের অযোগ্য ছিলেন মর্মে নির্বাচন অনুষ্ঠানের তিন মাসের মধ্যে প্রমাণিত হয়; (চ) বার্ষিক ১২টি মাসিক সভার পরিবর্তে ন্যূনতম ৯টি সভা গ্রহণযোগ্য কারণ ছাড়া অনুষ্ঠান করতে, বা ক্ষেত্রমত, সভায় উপস্থিত থাকতে ব্যর্থ হন।
এখানে ‘অসদাচরণ’ বলতে ক্ষমতার অপব্যবহার, এ আইন অনুযায়ী বিধি-নিষেধ পরিপন্থী কার্যকলাপ, দুর্নীতি, অসদুপায়ে ব্যক্তিগত সুবিধা গ্রহণ, পক্ষপাতিত্ব, স্বজনপ্রীতি, ইচ্ছাকৃত অপশাসন, নির্বাচনী ব্যয়ের হিসাব দাখিল না করা বা অসত্য দেওয়াকে বোঝাবে। অপসারণের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করার আগে বিধি অনুযায়ী তদন্ত ও আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিতে হবে।
সিটি করপোরেশনের কোনো মেয়র বা কাউন্সিলরকে পদ থেকে অপসারণ করা হলে, ওই আদেশের তারিখ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে আপিল করতে পারিবেন এবং আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত অপসারণের আদেশ স্থগিত থাকবে। সব পক্ষকে বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ দিতে রাষ্ট্রপতি ওই অপসারণের আদেশ পরিবর্তন, বাতিল বা বহাল রাখতে পারিবেন। আপিলের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির আদেই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে।