বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম আরো কমতে পারে। গত কয়েক মাসে প্রতি ব্যারেল ৮০ ডলার ছাড়ানোর পর কমতে শুরু করেছে। এই প্রতিবেদন লেখার সময় ব্রেন্ট ক্রুড (তেলের মানদণ্ড) তেলের দাম ছিল প্রতি ব্যারেল ৭৮ দশমিক ৮১ ডলার। আর ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েটের (ডব্লিউটিআই) দাম দাঁড়িয়েছে প্রতি ব্যারেল ৭৫ দশমিক ৮২ ডলার।
আর তাতে ১ অক্টোবরের পর ডব্লিউটিআই ও ব্রেন্ট ক্রুডের দাম এখন সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। অর্থাৎ, সাত সপ্তাহের মধ্যে সর্বনিম্ন। শুক্রবার এই দুই ধরনের তেলের দাম ৩ শতাংশ কমেছে। আর ২০২০ সালের মার্চ মাসের পর এই প্রথম টানা চার সপ্তাহ তেলের দাম কমল।
তেলের দাম কমাতে ওপেক ও রাশিয়ার বিরুদ্ধে এককাট্টা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, জাপানসহ বিভিন্ন উন্নত দেশ। ওপেক এর আগে বলেছিল, আপাতত তেলের উৎপাদন বাড়াচ্ছে না। ফলে শঙ্কা তৈরি হয়েছিল, তেলের দাম আরো বাড়বে। এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের তেলের ভান্ডার থেকে বাজারে তেল ছাড়ার আলোচনা শুরু করেছে। আর তাতেই তেলের দাম কমতে শুরু করেছে। এই মজুতকে বলা হয় কৌশলগত মজুত। সাধারণত প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও সরবরাহ–সংকট হলে এই মজুত থেকে তেল ছাড়া হয়।
যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও চীন সম্মিলিতভাবে ১০ কোটি থেকে ১২ কোটি ব্যারেল তেল ছাড়তে পারে, সিটি ব্যাংক এনএর বিশ্লেষকেরা এক বার্তায় সম্প্রতি এই তথ্য জানিয়েছেন। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়তে পারে সাড়ে চার কোটি থেকে ছয় কোটি ব্যারেল তেল, চীন ছাড়তে পারে তিন কোটি ব্যারেল, ভারত ৫০ লাখ ব্যারেল আর জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া এক কোটি ব্যারেল তেল ছাড়তে পারে।
সিটি ব্যাংকের বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, আগামী ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে এই তেল বাজারে ছাড়া হলে বাজারে দৈনিক অতিরিক্ত তেল সরবরাহের পরিমাণ দাঁড়াবে ১৫ লাখ থেকে ২০ লাখ ব্যারেল। এতে বাজার তেলে সয়লাব হয়ে যাবে। তখন স্বাভাবিকভাবেই দাম আরো কমে আসার কথা।
আগামী ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে দৈনিক অতিরিক্ত তেল সরবরাহের পরিমাণ দাঁড়াবে ১৫ লাখ থেকে ২০ লাখ ব্যারেল। এতে বাজার তেলে সয়লাব হয়ে যাবে। তখন স্বাভাবিকভাবেই দাম আরও কমে আসার কথা।
আরো কিছু কারণে ধারণা করা হচ্ছে তেলের দাম কমে আসবে। সেটা হলো, ইউরোপে করোনাভাইরাসের চতুর্থ ও পঞ্চম ঢেউয়ের হানা। ইতোমধ্যে অস্ট্রিয়ায় লকডাউন আরোপ করা হয়েছে। জার্মানি, রাশিয়া, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যে দৈনিক সংক্রমণ ভীতি জাগানোর মতো। ফরাসি মহামারি বিশেষজ্ঞরা ইতোমধ্যে বলেছেন, পঞ্চম ঢেউ আসন্ন। এতে ইউরোপে আবার চাহিদা কমে যাবে। তখন তেলের দাম আরও নিম্নমুখী হবে, এমনটাই আশা বিশ্লেষকদের।
এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিনিয়োগকারীদের মুনাফা তুলে নেয়ার প্রবণতা। ইতিমধ্যে রয়টার্সের এক খবরে বলা হয়েছে, এ বছর বৈশ্বিক কোম্পানিগুলো রেকর্ড পরিমাণ লভ্যাংশ দেবে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, এতে জানুয়ারি পর্যন্ত জ্বালানি তেলের দাম স্থিতিশীল থাকবে।
মধ্যপ্রাচ্যের ঘটনাপ্রবাহেও চোখ থাকবে বিশ্লেষকদের। ইয়েমেনে সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে যে প্রক্সি যুদ্ধ চলছে, তার প্রভাবও তেলের বাজারে পড়তে পারে। এতে লোহিত সাগরে জাহাজ চলাচল বিঘ্নিত হতে পারে, এমন আশঙ্কা আছে।
তবে সবকিছু নির্ভর করছে কৌশলগত মজুত থেকে যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, চীন কতটা তেল ছাড়ে, তার ওপর। সাথে আছে করোনাভাইরাসের নতুন ঢেউয়ের শঙ্কা। তাতে তেলের দামে আবার লাগাম লাগবে বলেই ধারণা করছেন বিশ্লেষকেরা।
গত অক্টোবরে বিশ্ববাজারে দাম কমেছিল না বলে দেশে সরকার জ্বালানি তেলের দাম একলাফে ২৩ শতাংশ বাড়িয়ে দেয়। এর ফলে পরিবহনভাড়া বাড়ে ২৭ শতাংশ। এ নিয়ে দেশে আন্দোলন চলছে। তবে এখন বিশ্ববাজারে দাম কমলেও, বাংলাদেশ একেবারেই চুপ। সরকারের পক্ষ থেকে এ নিয়ে আর কোনো মন্তব্যও করা হচ্ছে না।