বড় আন্দোলনের ক্ষেত্র তৈরি করছে বিএনপি

Slider রাজনীতি


দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার অনুমতি দিতে ধারাবাহিক আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে চায় বিএনপি। এ মুহূর্তে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের বিষয়টিতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছেন দলের নীতিনির্ধারকেরা। তাই সমঝোতার পথ খোলা রেখে আন্দোলনের কর্মসূচি চূড়ান্ত করছেন তারা। এখন পর্যন্ত বড় আন্দোলনে না গিয়ে বিক্ষোভ, অনশন ও স্মারকলিপি পেশের কর্মসূচি দিচ্ছে দলটি।

রাজনৈতিক বোদ্ধারা মনে করেন, ছোট ছোট আন্দোলন বড় আন্দোলনের ইঙ্গিত দেয়। বড় কর্মসূচিতে যাওয়ার আগে ছোট কর্মসূচি দিয়ে জনমত গড়ে তোলা হয়। ‘নিরীহ’ কর্মসূচি থেকেই বড় ধরনের ঘটনার সূত্রপাত হয়, যাতে পরবর্তী সময়ে কঠোর আন্দোলন গড়ে ওঠে। দলের নেতাকর্মীদের অধিকাংশই এই ইস্যুতে হরতাল দিতে নীতিনির্ধারকদের ওপর চাপ সৃষ্টি করছেন।

বিএনপি কঠোর কর্মসূচি দেবে কিনা জানতে চাইলে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় আমাদের সময়কে বলেন, কঠোর বলতে আপনারা কী বোঝেন? হরতাল-অবরোধ ইত্যাদি, তাই তো? আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট, আমরা সরকারের কোনো পাতা ফাঁদে পা দেব না। নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে কর্মসূচি করে যাব। মাঠই বলে দেবে কখন কী করতে হবে। যেভাবে গণঅনশন, মানববন্ধন কর্মসূচিতে জনগণের স্রোত নেমেছে- এটা কি বড় কর্মসূচি নয়?

দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকা একজন নেত্রীর চিকিৎসার জন্য আমাদের আন্দোলন করতে হবে এ কথা কখনও ভাবতে পারিনি। দেশের মানুষও কোনোদিন কল্পনা করেনি। আজ দেশের ডান-বাম সব রাজনৈতিক দল ও বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ দাবি তুলেছে খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিত করার। এ অবস্থায় আমাদের সামনে আন্দোলন ছাড়া কোনো পথ খোলা নেই। সে আন্দোলনে কোনো হঠকারিতা থাকবে না।

দলের নীতিনির্ধারকেরা বলছেন, নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচির পাশাপাশি কূটনৈতিক তৎপরতাও বাড়াচ্ছেন তারা। প্রভাবশালী দেশগুলোর উচ্চদপস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে দলের নেতারা খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার বিষয়টি তুলে ধরছেন। সম্প্রতি ঢাকা সফর করে যাওয়া যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের মন্ত্রীদের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেছেন বিএনপির এক নেতা। সেখানে খালেদা জিয়ার অবস্থা তুলে ধরা হয়। বিএনপি নেতারা মনে করছেন, দেশগুলো এ বিষয়ে সরকারের ওপর কূটনৈতিক চাপ সৃষ্টি করবে।

গত ১৩ নভেম্বর থেকে এভারকেয়ার হাসপাতালের সিসিইউতে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়া। বিএনপি নেতারা জানান, দেশি-বিদেশি চিকিৎসকরা বলেছেন, বাংলাদেশে তার চিকিৎসা আর সম্ভব নয়। সম্প্রতি খালেদা জিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে তাকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার অনুমতি দিতে সরকারের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে।

এরপর খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার দাবিতে ২০ নভেম্বর সারাদেশে গণঅনশন করেছে বিএনপি। নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কর্মসূচিতে জেএসডি, নাগরিক ঐক্য, গণফোরামসহ ২০ দল ও বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নেতারাও অংশ নেন। এ ছাড়া বাসদ, গণসংহতি আন্দোলন, বাংলাদেশ ন্যাপ, এবি পার্টি, নাগরিক অধিকার বিবৃতি দিয়েছে। শনিবার ২০ দলীয় জোটের পাঁচটি দল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছে। বিএনপির এমপিরা জাতীয় সংসদের সামনে মানববন্ধন করেন।

গতকালও খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দাবিতে সারাদেশে সমাবেশ করেছে বিএনপি। একই দাবিতে আগামীকাল ডিসি বরাবর স্মারকলিপি দেবে। এ ছাড়া দলের সাবেক এমপিদের উদ্যোগে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে শুক্রবার মানববন্ধন হবে। ২০২০ সালের ২৫ মার্চ করোনা ভাইরাস পরিস্থিতিতে শর্তসাপেক্ষে খালেদা জিয়ার মুক্তির পর রাজপথে কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি।

জানা যায়, খালেদা জিয়ার মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসায় বিদেশ নেওয়ার দাবি আদায়ে কঠোর কর্মসূচি দিতে দলের নীতিনির্ধারকদের ওপর চাপ রয়েছে নেতাকর্মীদের। এ অবস্থায় খালেদা জিয়ার বিষয়ে সরকারের মনোভাব দেখে পরবর্তী কর্মসূচি ঠিক করবে বিএনপি। গত শনিবার দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্য চলাকালে নেতাকর্মীরা ‘হরতাল’ ‘হরতাল’ বলে সেøাগানও দেন।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান বলেন, উন্নত চিকিৎসার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসনকে অবিলম্বে বিদেশে পাঠাতে হবে, তা না হলে সরকার পতনের আন্দোলন শুরু হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *