আজ কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক: ভেঙে যেতে পারে একাধিক মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি

Slider রাজনীতি

ইউপি নির্বাচন ।। তালিকায় আছে পোড়খাওয়া অনেক নেতার নামও # আজ কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে দলীয় প্রতীকের বিষয়ে আলোচনা # তৃণমূলের চিত্র কেন্দ্রে পাঠানোর নির্দেশ

চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীদের নিয়ে বিপাকে পড়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। প্রথমত এসব বিদ্রোহী প্রার্থীকে কোনোভাবেই ঠেকানা যায়নি; দ্বিতীয়ত এসব বিদ্রোহীর কাছে শোচনীয়ভাবে হেরে গেছেন দল থেকে মনোনীতি অনেক প্রার্থী। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিজেদের মধ্যে লড়াইয়ে প্রাণ গেছে শতাধিক নেতাকর্মীর। এরই মধ্যে দল থেকে ‘বিদ্রোহীদের’ বহিষ্কারের সুপারিশের স্তূপ জমেছে কেন্দ্রে। কিন্তু এ তালিকায় নাম আছে অনেক ত্যাগী নেতারও। এমন বাস্তবতায় সবকিছু ঠিকঠাক রেখে সিদ্ধান্ত নিতে রীতিমতো বেকায়দায় পড়েছে প্রায় এক যুগ টানা ক্ষমতায় থাকা দলটি।

দলের একাধিক জ্যেষ্ঠ নেতা মনে করেন, প্রার্থী বাছাইয়ে দলের কেন্দ্রীয় কমিটি এবং তৃণমূলের কিছু নেতা অস্বচ্ছতার পরিচয় দিয়েছেন। এমন অভিযোগ দলের হাইকমান্ডের কাছে এসেছে। যাচাই-বাছাইয়ে অভিযোগের সত্যতাও মিলেছে। কিন্তু এসব বিষয়ে হুটহাট সিদ্ধান্ত নিলে দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সঙ্গে তৃণমূলের দূরত্ব আরও বাড়বে। বাড়বে তৃণমূলের কোন্দলও। এসব বিষয়সহ আগামী দিনে দলের করণীয় নির্ধারণে আজ শুক্রবার বিকালে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী

লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক বসছে। বৈঠকে নির্ধারিত আলোচ্যসূচির মধ্যে ইউপি নির্বাচনের পাশাপাশি গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের ‘আপত্তিকর’ বক্তব্যের বিষয়টি রয়েছে। এতে মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের বিষয়ে দল কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে। পরের ইউপি নির্বাচনে দলীয় প্রতীক রাখা হবে কিনা, এ নিয়েও আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দলীয় প্রতীকে নির্বাচন নিয়ে শুরু থেকেই দলের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ছিল। কোনো কোনো নেতা সরাসরি বিরোধিতাও করেছিলেন। দলীয় প্রতীকে ফরম বিতরণের ঘোষণা দিয়েও শেষমেশ উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর ও শরীয়তপুরের নির্বাচন। এতে অন্যান্য জেলার নেতাকর্মীদের কাছে প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছেন কেন্দ্রীয় নেতারা।

এ বিষয়ে গতকাল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে যারা বিদ্রোহ করছেন এবং বিদ্রোহীদের মদদ দিচ্ছেন, তাদের ব্যাপারে কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটিতে রিপোর্ট দিতে দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আজ দলের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে আলোচ্যসূচির মধ্যে রয়েছে- বিগত দিনে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন স্বরূপ শোক প্রস্তাব, ২১ ফেব্রুয়ারি পালন, ৭ মার্চ, ১৭ ও ২৬ মার্চ উদযাপন, ২৫ মার্চ পালন, গাজীপুর সিটি মেয়র ইস্যু ও বিভাগীয় পর্যায়ের সাংগঠনিক কার্যক্রম। এর মধ্যে ইউপি নির্বাচন সবচেয়ে গুরুত্ব পাবে বলে অনেক নেতা আভাস দিয়েছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা আমাদের সময়কে বলেন, ‘তৃণমূলকে নেত্রী শেখ হাসিনা সব সময় গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। তিনি প্রায়ই বলেন তৃণমূলই আওয়ামী লীগের প্রাণ। কিন্তু ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে তৃণমূলের সঠিক চিত্র নেত্রীর কানে পৌঁছানো হচ্ছে না। বঙ্গবন্ধুকন্যার চোখে সত্যিকার চিত্র গেলে তিনি তৃণমূলকে হতাশ করতেন না।’

সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতার ভাষ্য, ‘এমপি বনাম স্থানীয় নেতাদের দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিন ধরেই বিরাজ করছে তৃণমূলে। এবারের নির্বাচনে সেই দ্বন্দ্ব বহুগুণে বেড়ে গেল। এ অবস্থার উত্তরণ জরুরি।’

কেন্দ্রের একাধিক নেতা আভাস দিয়েছেন, তৃণমূলে মনোনয়ন বাণিজ্য, নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে হারাতে দলের ভেতরেরই একটি অংশের তোড়জোড়, সংঘাত, হানাহানি ও প্রাণহানির ঘটনা কীভাবে সামাল দেওয়া যাবে- আজকের বৈঠকে সেসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসতে পারে। যেহেতু বিএনপি ইউপি নির্বাচনে নেই, সে ক্ষেত্রে মাদারীপুর-শরীয়তপুরের মতো পরের ধাপে বাকি এলাকাগুলো উন্মুক্ত রাখা হবে কিনা- তা নিয়েও সিদ্ধান্ত আসতে পারে। সিদ্ধান্ত আসতে পারে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গকারী নেতাদের বিষয়েও।

এসব বিষয়ে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য মতিয়া চৌধুরী আমাদের সময়কে বলেন, ‘নির্বাচনকেন্দ্রিক যে সহিংসতা হয়েছে, তা কাম্য ছিল না। এ সহিংসতা কম হওয়াটাই স্বস্তির।’

ইউপি নির্বাচনের বিদ্রোহীদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে দল বিপাকে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম আমাদের সময়কে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ বিপাকে নয়। বিপাকে বা বিপদে তারাই যারা নীতিহীন, স্বার্থপর ও লোভী। আর যারা দলীয় আনুগত্যের বাইরে গিয়ে, দলের সিদ্ধান্ত না মেনে কাজ করেছেন, তাদের হাত থেকে আমাদের প্রাণের সংগঠন ঐতিহ্যবাহী আওয়ামী লীগকে রক্ষা করার সময় এখনই এসেছে।’

এদিকে আজকের বৈঠকের বিষয়ে কেন্দ্রীয় কমিটির এক নেতা জানান, আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ, তাঁতী লীগ, ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে। ডিসেম্বর অথবা আগামী জানুয়ারি থেকে মেয়াদোত্তীর্ণ সব কমিটির সম্মেলনের তারিখ ঘোষণার তাগিদ আসতে পারে কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে। এ ছাড়া যুবলীগ ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের দীর্ঘদিন সম্মেলন নেই। সে বিষয়ে আলোচনা হতে পারে। ওই নেতা আরও জানান, আগামী বছর দলের ২২তম জাতীয় সম্মেলন এবং ২০২৩ সালে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সম্মেলন, তৃণমূলে বিভক্তি দূরীকরণ, এমপি-মন্ত্রীদের বলয় ভাঙাসহ আজ সাংগঠনিক নির্দেশনা দিতে পারেন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *