সারা বিশ্বে পুরুষদের শরীরে যে হারে শুক্রাণুর সংখ্যা বা স্পার্ম রেট কমে যাচ্ছে, সেই হার বজায় থাকলে মানুষ বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে বলে হুঁশিয়ার করেছেন এক চিকিৎসক। প্রায় ২০০টি গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে গবেষকেরা দেখেছেন, ৪০ বছরেরও কম সময়ের মধ্যে প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে পুরুষদের শুক্রাণুর সংখ্যা।
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায়, ১০ জনের মধ্যে প্রতি একজন ফার্টিলিটি সমস্যায় ভোগেন পুরুষদের শুক্রাণুর সংখ্যা কম থাকার কারণে। তথ্য অনুসারে, গর্ভধারণের জন্য পুরুষ সঙ্গীকে কমপক্ষে ৪০ মিলিয়ন শুক্রাণু ছাড়তে হয় প্রতি বীর্যপাতে।
লাইফস্টাইল বিষয়ক ওয়েবসাইট বোল্ডস্কাই ডট কম এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, অনেক পুরুষই এই সমস্যায় ভুগছেন। স্পার্ম কাউন্ট কম হওয়ার মূল কারণ হলো অস্বাস্থ্যকর জীবনধারা। কিছু ক্ষেত্রে জন্মগত ত্রুটি বা কিছু অসুস্থতাও শুক্রাণু উৎপাদনে হস্তক্ষেপ করতে পারে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এটি অস্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা ব্যতীত অন্য কিছু নয় যা, আজকাল পুরুষদের পুরুষত্বহীন বা অক্ষম করে তুলেছে।
আমরা এমন কিছু সাধারণ কারণগুলির দিকে নজর রাখব যেগুলো বিভিন্ন চিকিৎসার কারণ ছাড়াও পুরুষদের শুক্রাণুর সংখ্যা কমিয়ে দেয়-
স্থূলতা
অস্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার জন্য স্থূলত্বের সম্ভাবনা বেশি থাকে। অনেক স্বাস্থ্য সমস্যাই স্থূলতার সঙ্গে জড়িত এবং এর মধ্যে একটি সমস্যা হলো যৌনগ্রন্থির দুর্বল ক্রিয়াকলাপ। নারীদের মধ্যে স্থূলত্ব, হরমোন (ইস্ট্রোজেন) বৃদ্ধির সঙ্গে জড়িত এবং পুরুষদের মধ্যে এটি কম স্পার্ম কাউন্টের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে।
অ্যালকোহল
গবেষণায় বলা হয়েছে, দীর্ঘ সময় ধরে অতিরিক্ত অ্যালকোহল গ্রহণ বন্ধ্যাত্বের কারণ। মদ্যপান পুরুষত্বহীনতার সৃষ্টি করতে পারে এবং শুক্রাণুর গুণগতমানকে প্রভাবিত করতে পারে। কারণ অ্যালকোহল শরীরকে দস্তা শোষণে বাধা দেয় যা শুক্রাণু কোষ গঠনে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খনিজ পদার্থ।
মাদকগ্রহণ
বিভিন্ন গবেষণায় বলা হয়েছে, মাদকের অপব্যবহারের জন্য শুক্রাণুর সংখ্যা কম হয়। একটি সমীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে যে, মাদক সেবনকারী প্রায় ৩৩ শতাংশ পুরুষের শুক্রাণুর সংখ্যা কম।
মানসিক চাপ
পুরুষদের মধ্যে স্ট্রেস এবং ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা হলো শুক্রাণুর সংখ্যা কম হওয়ার সাধারণ কারণ। তীব্র মানসিক চাপ আপনার শুক্রাণুর সংখ্যাকে প্রভাবিত করতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে যে, মানসিক চাপ শুক্রাণু এবং বীর্যের জন্য ক্ষতিকারক।
ডায়াবেটিস
টাইপ ২ ডায়াবেটিস, যা প্রায়ই অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতার কারণে ঘটে এবং এটি শুক্রাণুর সংখ্যা কম হওয়ার আরও একটি প্রধান কারণ।
মোবাইল ফোন
একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যে পুরুষরা প্রতিদিন চার ঘণ্টার বেশি সময় ধরে মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন তাদের শুক্রাণুর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কম। কারণ, পুরুষরা সাধারণত তাদের প্যান্টের পকেটে ফোন বহন করে যা, শুক্রাণুর গণনায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
গরম পানিতে গোসল
যদিও এটি হাস্যকর শোনায় – তবে এটি সত্য! অতিরিক্ত গরম পানিতে গোসল আপনার শুক্রাণুর সংখ্যা কমাতে পারে। যদি যৌনাঙ্গের তাপমাত্রা ৯৮ ডিগ্রির উপরে উঠে যায় তবে এটি পুরুষের শুক্রাণু ধ্বংস করতে পারে।
সয়া প্রোডাক্ট
গবেষণাগুলি ইঙ্গিত দেয় যে, ক্রমবর্ধমান সয়া পণ্য গ্রহণকারী পুরুষদের শুক্রাণুর সংখ্যা কম। এতে দৃঢ়ভাবে বলা হয়েছে যে, সয়াজাতীয় পণ্যগুলির আইসোফ্লাভোনস্ শুক্রাণুর সংখ্যা কমিয়ে আনতে পারে।
যা মনে রাখা জরুরি
আপনার যদি গর্ভধারণ করতে সমস্যা হয় এবং আপনার পুরুষ সঙ্গীর যদি বন্ধ্যাত্ব নির্ণয় হয়ে থাকে তাহলে, কিছু চিকিৎসা পদ্ধতি এক্ষেত্রে সহায়তা করতে পারে। তবে শুক্রাণুর সংখ্যা বাড়ানোর কয়েকটি সহজ উপায় হলো উল্লেখিত বিষয়গুলো পরিহার করে একটি স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা গ্রহণ করা। পাশাপাশি মানসিক চাপ থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য শরীর চর্চা ও ধ্যান করা।