উচ্চ আদালতের নির্দেশ অমান্য করে এক ধর্ষণ মামলায়ও জামিন দিয়েছিলেন কামরুন্নাহান

Slider বাংলার আদালত

ঢাকা: রেইনট্রি হোটেলে ধর্ষণের মামলায় এখতিয়ারবহির্ভূত পর্যবেক্ষণ দিয়ে বিচারিক ক্ষমতা হারানো বিচারক মোছা. কামরুন্নাহার আরেকটি মামলায় সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশনা উপেক্ষা করেছিলেন। ওই ঘটনায় বছর দুয়েক আগে তাকে তলব করেছিল আপিল বিভাগ। তার ধারাবাহিকতায় গতকাল সোমবার আদেশও হয়েছে। তবে সর্বোচ্চ আদালত কী আদেশ দিয়েছেন, তা জানা যায়নি।

ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল ৭-এর বিচারক হিসেবে কামরুন্নাহার রেইনট্রি ধর্ষণের মামলায় সব আসামিকে খালাস দিয়ে রায়ে যে পর্যবেক্ষণ দিয়েছিলেন, তা নিয়ে তীব্র সমালোচনায় পড়েন তিনি। ধর্ষণ প্রমাণে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ফরেনসিক পরীক্ষার বাধ্যবাধকতার যুক্তি দিয়ে তিনি ওই সময়ের পর মামলা না নেওয়ার পর্যবেক্ষণ দেন। সমালোচনার মুখে গত রবিবার কামরুন্নাহারের বিচারিক ক্ষমতা প্রত্যাহার করে নেন প্রধান বিচারপতি। পরে তাকে আদালত থেকে সরিয়ে মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত করা হয়। এর মধ্যে দুই বছর আগের এক ধর্ষণ মামলার আসামিকে জামিন দেওয়া নিয়ে কামরুন্নাহারকে তলবের বিষয়টি গতকাল আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় আসে।

সর্বোচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ থাকার পরও আসলাম শিকদার নামে ওই আসামিকে গত বছরের ২ মার্চ জামিন দেন বিচারক কামরুন্নাহার। কোন এখতিয়ার বা ক্ষমতাবলে ওই আসামিকে তিনি জামিন দিয়েছিলেন, সে ব্যাখ্যা জানতে তখন তলব করা হয় কামরুন্নাহারকে।

গত বছর ১২ মার্চ প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ তাকে ওই বছরের ২ এপ্রিল আদালতে হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দিতে নির্দেশ দিয়েছিল। এর পর সোমবারই আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় ‘রাষ্ট্র বনাম আসলাম শিকদার’ শিরোনামে মামলাটি আসে। তালিকার শুরুতেই ছিল এটি।

প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির ভার্চুয়াল আপিল বেঞ্চে শুনানি শুরু হলে অ্যাটর্নি জেনারেল জানান, রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনটি এই মুহূর্তে নেই। তখন প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমাদের কাছে সব আছে।’ এর পর আদালত কিছু সময়ের জন্য বিরতিতে যায়। ফিরে এসে প্রধান বিচরাপতি বলেন, ‘আদেশ দেওয়া হয়েছে।’

কী আদেশ হয়েছে- অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিনউদ্দিন জানতে চাইলে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘লিখিত আদেশে পাবেন।’

আদেশের বিষয়ে জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘আমি জানি না, তাদের (আপিল বেঞ্চের বিচারপতি) জিজ্ঞাসা করলাম, তারা আমাদের কিছু বলেননি। আমি কোর্টকে জিজ্ঞাসা করলাম, তিনি (প্রধান বিচারপতি) বললেন, না এটা এখন আপনারা জানবেন না। বললেন, অর্ডার পাসড, এখন বলব না।’

ধর্ষণের অভিযোগে বেসরকারি টেলিভিশন এটিএন বাংলার সাবেক অনুষ্ঠান প্রযোজক আসলাম শিকদারের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর ঢাকার হাতিরঝিল থানায় মামলা করেন এক নারী। ওদিনই তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরদিন তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।

এ মামলায় ২০১৯ সালের ১৮ জুন হাইকোর্ট আসলাম শিকদারকে জামিন দিলে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত জামিন স্থগিত করে দেন। পরে এই স্থগিতাদেশ বাড়ানোর জন্য আপিল বিভাগে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ।

এদিকে চেম্বার আদালতে জামিন স্থগিত থাকার পরও আসামি আসলামকে জামিন দেন ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল ৭-এর বিচারক কামরুন্নাহার। রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের শুনানির সময় নিম্নআদালত থেকে আসলাম শিকদারের জামিন পাওয়ার বিষয়টি সর্বোচ্চ আদালতের নজরে এনেছিলেন তৎকালীন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। তখন আপিল বিভাগ বিশেষ বার্তাবাহকের মাধ্যমে নিম্নআদালত থেকে মামলার নথি আনে। নথি আসার পর তা পর্যালোচনা করেন আপিল বিভাগের বিচারপতিরা। এর পর বিচারক কামরুন্নাহারকে তলবের আদেশ দেয় আপিল বিভাগ।

এদিকে গত বছরের ১৪ অক্টোবর বিচারিক আদালতের দেওয়া রায়ে আসলাম শিকদার খালাস পান। সে রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ।

গত ২০ জানুয়ারি ওই আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করে বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ মামলার নথি তলব করেন। সেই সঙ্গে আসলাম শিকদারকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *