টি-টোয়েন্টির নতুন রাজা অস্ট্রেলিয়া

Slider খেলা


১৮.৫তম ওভার! জয়ের জন্য অস্ট্রেলিয়ার প্রয়োজন ৪ রান। কিউই পেসার টিম সাউদির বলে রিভার্স সুইপ করলেন অজি ব্যাটার গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। বল বাউন্ডারি পার করতেই ব্যাট উঁচু করে ছুটতে শুরু করলেন তিনি। যেন আকাশের চাঁদ হঠাৎ করেই তার হাতে চলে এসেছে। ডাগআউট থেকে ছুটলেন টিম অস্ট্রেলিয়ার সব ক্রিকেটার। রেকর্ড পাঁচবারের ওয়ানডে বিশ্বকাপজয়ী দল যেন আবেগ ধরে রাখতে পারলো না। হ্যাঁ, পারবে কিভাবে? চার-ছক্কার আসরে তারা যে নতুন রাজা! টি-টোয়েন্টি বিশ^কাপে প্রথমবার শিরোপার স্বাদ পেলো অজিরা। আগেও একবার ফাইনাল খেলেছিল অস্ট্রেলিয়া।

২০১০ এর ফাইনালে ইংল্যান্ডের কাছে হেরে স্বপ্ন ভেঙেছিল তাদের। অবশেষে ১৪ বছরের অপেক্ষার অবসান হলো। গতকাল ফাইনালে নিউজিল্যান্ডকে ৮ উইকেটে হারায় অস্ট্রেলিয়া। দুবাইয়ে আগে ব্যাটিং শেষে নিউজিল্যান্ডের সংগ্রহ পৌঁছে ১৭২/৪-এ। জবাবে ৭ বল হাতে রেখেই রেকর্ডগড়া জয় পায় অ্যারন ফিঞ্চের দল। সাতবারের টি-টোয়েন্টি বিশ^কাপের ফাইনালে এটি দলীয় সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড। ২০০৭ এ ২০ ওভারের ক্রিকেটের প্রথম বৈশি^ক আসরে পাকিস্তানের বিপক্ষে ফাইনালে ১৫৭ করেছিল শিরোপাজয়ী ভারত। এতদিন ওটাই ছিল ফাইনালে দলীয় সর্বোচ্চ।

দুবাই ক্রিকেট স্টেডিয়ামে তাদের ভক্তের সংখা কম হলেও এমন প্রাণবন্ত এক ম্যাচ উপহার দেয়ায় কড়তালিতে মুখরিত হয় পুরো স্টেডিয়াম। অন্যদিকে প্রথমবার বিশ্বকাপের ফাইনালে ওঠা নিউজিল্যান্ড আক্ষেপ নিয়েই মাঠ ছাড়ে।

অস্ট্রেলিয়ার প্রথম টি-টোয়েন্টি শিরোপার লক্ষ্য ১৭৩ রান। সব শেষ সেমিফাইনালে পাকিস্তানের বিপক্ষে আসরের সর্বোচ্চ ১৭৬ রান তাড়া করে জিতেছিল অজিরা। কিন্তু শুরু থেকেই কিছুটা চাপের মধ্যে ছিলেন অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ। প্রথম ওভারে বোল্টের বলে নড়বড়ে ছিলেন তিনি। সেই ওভারে আসে মাত্র ১ রান। কিন্তু দ্বিতীয় ওভারে টিম সাউদির বলে ডেভিড ওয়ার্নার ঝড় তোলেন। টানা দুই চারের মারে তুলে নেন ১০ রান। তৃতীয় ওভারে বোল্টের প্রথম বলে এগিয়ে এসে লং অফে বাউন্ডারি হাঁকান ফিঞ্চ। কিন্তু পরের বলেই আউট! ফিঞ্চ সাজঘরে ফেরেন ৭ বলে ৫ রান করে। অস্ট্রেলিয়ার উদ্বোধনী জুটি ভাঙে দলীয় ১৫ রানে। কিন্তু সেখান থেকে তেতে ওঠা ওয়ার্নার তুলে নেন চলতি আসরে নিজের তৃতীয় ফিফটি। আউট হওয়ার আগে ৩৮ বলে ৪ টি চারের মারের সঙ্গে হাঁকান ৩টি ছক্কাও। আর দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দিয়ে মাঠ ছাড়েন মিচেল মার্শ। তার ব্যাট থেকে আসে অপরাজিত ৭৭ রানের ইনিংস। খেলেন ৫০ বল। হাঁকান ৬টি চার ও ৪টি ছক্কা । ১৮ বলে ২৮ রান করে অপরাজিত থেকে তাকে দারুণ সঙ্গ দেন ম্যাক্সওয়েল।

টসে জিতে নিউজিল্যান্ডকে ব্যাটিংয়ে পাঠান অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ। এবারের বিশ্বকাপে দুবাইয়ে ১২ ম্যাচের মধ্যে ১০বারই টসে জয়ী দল শেষ পর্যন্ত ম্যাচ জিতেছে। তাই প্রেসবক্সে শুরু হয় গুঞ্জন, টসেই কি শিরোপা ভাগ্য লেখা হয়ে গেল! তবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আসরে প্রথম ফাইনাল খেলা নিউজিল্যান্ড প্রত্যয়ী ছিল সেই ইতিহাস বদলের জন্য। আরো একটি শুভ সংখ্যাও আছে দুবাই ক্রিকেট স্টেডিয়ামের। দুবাইয়ে আগের ২০টি টি-টোয়েন্টিতে আগে ব্যাট করে ১৮০ রান করা দল কখনো হারেনি। সেই লক্ষ্যেই হাঁটতে শুরু করে কিউইরা। যার সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন। চতি বিশ্বকাপে তার ব্যাট থেকে আসেনি একটি ফিফটিও। সর্বোচ্চ ইনিংস অপরাজিত ৪০ রানের। তাও অপেক্ষাকৃত কমশক্তির দল আফগানিস্তানের বিপক্ষে। ফাইনালেও ব্যক্তিগত ২১ রানে আউট হতে হতে বেঁচে যান উইলিয়ামসন। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাননি।

শুরুর দশ ওভারে ব্ল্যাক ক্যাপদের সংগ্রহ ছিল ৫৭ রান, এক উইকেট হারিয়ে। আর ইনিংসের পরের ১০ ওভারে ১১৫ রান তুলে ফেলে কিউইরা। জীবন পাওয়া উইলিয়ামসন শেষ পর্যন্ত চোখ ধাঁধানো ৮৫ রানের ইনিংসন খেলেন। ১৭.৫ ওভারে আউট হন তিনি। তখন নিউজিল্যান্ডের সংগ্রহ ছিল ১৪৮/৪। উইলিয়ামসনের ৪৮ বলের ইনিংসে ছিল ১০টি চার ও ৩ ছয়ের মার। তার বিদায়ের পর শেষ ১২ বলে কোনো উইকেট না হারালেও আসে ২৩ রান।
এদিন টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা খারাপ ছিল না কিউইদের। প্রথম তিন ওভারে ২৩ রান তুলে নেয় তারা। তবে ওপেনার ড্যারিল মিচেল ১১ রানে আউট হওয়ার পরের তিন ওভারে গতি কমে আসে। কেন উইলিয়ামসন ও মার্টিন গাপটিল নিতে পারেন মাত্র ৯ রান। পাওয়ার প্লের ৬ ওভার শেষে নিউজিল্যান্ডের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৩২/১-এ। এবারের বিশ্বকাপে পাওয়ার প্লেতে এটি নিউজিল্যান্ডের সর্বনি¤œ রান। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে জশ হ্যাজলউড দারুণ বোলিং করেন। ৪ ওভারের স্পেলে মাত্র ১৬ রানে তিন উইকেট নেন অজি পেসার। অজিদের হয়ে অপর উইকেট নেন লেগ স্পিনার অ্যাডাম জ্যাম্পা। কিউই ওপেনার মার্টিন গাপটিলকে সাজঘরের পথ দেখান তিনি। তবে বল হাতে এদিন ভোগান্তি পোহান অপর অজি পেসার মিচেল স্টার্ক। চার ওভারের স্পেলে ৬০ রান দিয়ে উইকেটশূন্য থাকেন তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *