অপেক্ষার প্রহর শেষ হলো ২২ লাখ শিক্ষার্থীর। আজ শুরু হচ্ছে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। শুধু তাই নয়, এই পরীক্ষার মাধ্যমে ২০ মাস ১৭ দিন পর হতে যাচ্ছে কোনো বোর্ড পরীক্ষা। যা দিনের হিসেবে ৬২৫ দিন। শিক্ষা ক্যালেন্ডার অনুযায়ী এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় ফেব্রুয়ারি মাসে। ২০২০ সালের এসএসসি পরীক্ষার শেষ পরীক্ষা হয়েছিল ২৭শে ফেব্রুয়ারি।
সীমিত পরিসরের এই পরীক্ষায় পরীক্ষার্থীদের দিতে হবে মাত্র তিন বিষয়ে পরীক্ষা। প্রশাসন বলছে সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষা নিতে প্রস্তুত।
পরীক্ষায় নকল রুখতেও সচেষ্ট শিক্ষা প্রশাসন। গত সোমবার থেকে কোচিং সেন্টার বন্ধের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। করোনার প্রভাবে দেড় বছর বন্ধ ছিল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ২০২০’র এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার্থীরা পেয়েছিলেন ‘অটোপাস’। তবে এ বছরে পরীক্ষার্থীদের বসতে হচ্ছে হলেই।
পদার্থ বিজ্ঞান পরীক্ষা দিয়ে শুরু হতে যাচ্ছে এবারের এসএসসি পরীক্ষা। সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে তিনটি নৈর্বাচনিক বিষয়ের পরীক্ষা নেয়া হবে। সময় নির্ধারণ করা হয়েছে দেড় ঘণ্টা। এবারে মোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ২২ লাখ ২৭ হাজার ১১৩ জন। মোট কেন্দ্রের সংখ্যা ৩ হাজার ৬৭৯, মোট প্রতিষ্ঠান ২৯ হাজার ৩৫টি। ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে মোট পরীক্ষার্থী বেড়েছে ১ লাখ ৭৯ হাজার ৩৩৪ জন। বৃদ্ধির হার ৮.৭৬ শতাংশ। প্রতিষ্ঠান বেড়েছে ১৫১টি ও কেন্দ্র বেড়েছে ১৬৭টি। মোট বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী ৫ লাখ ৬ হাজার ৮৩১, মানবিকে ৯ লাখ ২৪ হাজার ৮৫ ও ব্যবসায় শিক্ষায় ৩ লাখ ৭০ হাজার ৮২ জন। বিদেশে ৯টি কেন্দ্রে পরীক্ষা দেবেন ৪২৯ জন।
পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা শুরুর কমপক্ষে ৩০ মিনিট পূর্বে পরীক্ষার হলে প্রবেশ করতে হবে। দেরিতে কেউ প্রবেশ করলে নাম, রোল নম্বর, প্রবেশের সময়, বিলম্বের কারণসহ সেদিনই সংশ্লিষ্ট শিক্ষাবোর্ডে পাঠাতে হবে। ট্রেজারি থেকে সকল প্রশ্নের সেট কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হবে। পরীক্ষা শুরুর ২৫ মিনিট পূর্বে এসএমএস-এর মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রশ্নের সেট কোড জানিয়ে দেয়া হবে। কেন্দ্র সচিব ছাড়া অন্য কেউ মোবাইল ফোন বা ইলেকট্রনিক কোনো ডিভাইস নিয়ে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবেন না। কেন্দ্র সচিবের কাছে শুধু একটি ফোন থাকবে যেটি হবে ফিচার ফোন। যাতে ছবি তোলা না যায়। পরীক্ষার সংখ্যা কম হওয়ায় অব্যয়িত অর্থের অংশ শিক্ষার্থীদের ফেরত দেয়া হবে।
সাধারণ বোর্ডে তত্ত্বীয় পরীক্ষা আজ শুরু হয়ে ২৩শে নভেম্বর শেষ হবে। মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডে ১৪ই নভেম্বর-২১শে নভেম্বর ও কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা ১৪ই নভেম্বর শুরু হয়ে ২১শে নভেম্বর শেষ হবে। এ পরীক্ষা বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছিলেন, পরীক্ষা শেষ হওয়ার ত্রিশ দিনের মধ্যে এসএসসি ও সমমানের ফল প্রকাশ করা হবে। পরীক্ষা কেন্দ্রে একজনের বেশি অভিভাবক পরীক্ষার্থীর সঙ্গে আসতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)।
মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, প্রশ্নপত্র ফাঁস কিংবা পরীক্ষার্থীদের কাছে উত্তর সরবরাহে জড়িত ব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও জেলা প্রশাসন কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশ্নপত্র ফাঁস সংক্রান্ত গুজব কিংবা এ কাজে তৎপর চক্রগুলোর কার্যক্রমের বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ নজরদারি জোরদার করবে।
পরীক্ষায় অতিরিক্ত ১০ মিনিট সময় পাবেন বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিক্ষার্থীরা। দৃষ্টিহীন, সেরিব্রাল পালসিজনিত প্রতিবন্ধকতা ও হাত না থাকা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীরা শ্রুতি লেখক সঙ্গে নিয়ে চলতি বছরের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন। আর অটিজম, ডাউন সিনড্রোম, সেরিব্রাল পালসিজনিত প্রতিবন্ধকতায় আক্রান্ত পরীক্ষার্থীদের জন্য অতিরিক্ত ২০ মিনিট সময় বাড়ানোসহ শিক্ষক, অভিভাবক বা সাহায্যকারীর বিশেষ সহায়তায় পরীক্ষার সুযোগ থাকছে।