৭২ ঘণ্টার বেশি হলে ধর্ষণের মামলা নয় : আদালত

নারী ও শিশু

৭২ ঘণ্টা পর ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায় না। এজন্য ৭২ ঘণ্টা পর পুলিশকে কোনো ধর্ষণের মামলা না নিতে পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। বনানীর রেইনট্রি হোটেলে দুই শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের আলোচিত মামলায় আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে আপন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলে সাফাতসহ পাঁচ আসামিকে খালাস দিয়েছেন আদালত। ঢাকার ৭ নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোসা. কামরুন্নাহার এ রায় ঘোষণা করেন। এই রায়ের পর্যবেক্ষণের পর আদালত পুলিশকে এ নির্দেশ দেন।

পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেন, মামলার দুই ভুক্তভোগী আগে থেকেই সেক্সুয়াল (যৌন) কর্মে অভ্যন্ত। অহেতুক তদন্তকারী কর্মকর্তা প্রভাবিত হয়ে আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিয়েছেন। এতে আদালতের ৯৪ কার্যদিবস নষ্ট হয়েছে। এরপর থেকে পুলিশকে এ বিষয় সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছি। এরপর থেকে ধর্ষণের ৭২ ঘণ্টা পর যদি কেউ মামলা করতে যায় তা না নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি।

বিচারক রায় পড়ার সময় আরও বলেন, ‘আপনারা বলছেন-এটি একটি আলোচিত মামলা, কিন্তু আমার কাছে মনে হচ্ছে না। আমার কাছে সব মামলাই আলোচিত ও গুরুত্বপূর্ণ। এই মামলাটির মেডিকেল রিপোর্টে কিছুই পাওয়া যায়নি এবং ডাক্তাররা কোনো প্রমাণ দিতে পারেননি।’

খালাসপ্রাপ্ত অপর আসামিরা হলেন, সাফাতের বন্ধু সাদমান সাকিব ও নাঈম আশরাফ ওরফে এইচএম হালিম, সাফাতের দেহরক্ষী রহমত আলী ও গাড়িচালক বিল্লাল হোসেন। রায় ঘোষণার সময় আসামিদের ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।

আসামিরা সবাই জামিনে ছিলেন। গত ৩ অক্টোবর যুক্তিতর্ক শুনানির পর ট্রাইব্যুনাল আসামিদের জামিন বাতিল করে কারাগারে প্রেরণ করেন এবং রায় ঘোষণার জন্য ১২ অক্টোবর দিন ঠিক করেন। পরে গত ১২ অক্টোবর বিচারক অসুস্থ থাকায় রায় ঘোষণা দিন পিছিয়ে ২৭ অক্টোবর ঠিক করা হয়। পরবর্তীতে গত ২৭ অক্টোবর বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আব্দুল বাসেত মজুমদারের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে আদালত না বসায় সেদিনও রায় পিছিয়ে পরবর্তী তারিখ ১১ নভেম্বর ঠিক করা হয়।

মামলার আসামি আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদের ছেলে সাফাত আহমেদসহ ৫ জন। মামলার অপর আসামিরা হলেন- সাফাতের তার বন্ধু সাদমান সাকিব ও নাঈম আশরাফ ওরফে এইচএম হালিম এবং সাফাতের দেহরক্ষী রহমত আলী ও গাড়িচালক বিল্লাল হোসেন।

গত ৩ অক্টোবর মামলার যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে জামিনে থাকা সকল আসামির জামিন বাতিল করে কারাগারে প্রেরণ করা হয়। এর আগে এর আগে মামলাটির ৪৭ জন সাক্ষীর মধ্যে ২২ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ গ্রহণ করে রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষ্য গ্রহণ সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়। এরপর গত ২৯ আগস্ট আসামিদের আত্মপক্ষ শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। এরপর গত ৫ সেপ্টেম্বর শুরু হয় যুক্তি উপস্থপন।

২০১৭ সালের ২৮ মার্চ জন্মদিনের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানিয়ে অস্ত্রের মুখে ঢাকার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই দুই ছাত্রী ধর্ষণের অভিযোগে ৬ মে বনানী থানায় পাঁচ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। মামলাটিতে ওই বছর ৭ জুন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশের উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনের (ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার) পরিদর্শক ইসমত আরা এমি আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন।

মামলায় বলা হয়, আসামিদের মধ্যে সাফাত ও নাঈম দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং তারা ওই দুই ধর্ষিতা ছাত্রীর বন্ধু। গত ২৮ মার্চ ঘটনার দিন আসামী সাফাতের জন্মদিনের অনুষ্ঠানের যান ওই দুই ছাত্রী। এরপর ওইদিন তাদের রাত ৯টা থেকে পরদিন সকাল ১০টা পর্যন্ত আসামিরা আটকে রাখেন। অস্ত্র দেখিয়ে ভয়-ভীতি প্রদর্শন ও অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করেন। জোর করে একটি কক্ষে নিয়ে যায় আসামিরা। আসামি সাফাত আহমেদ ও নাঈম আশরাফ একাধিকবার তাদের ধর্ষণ করেন। ধর্ষণ করার সময় আসামি সাফাত গাড়িচালক বিল্লালকে দিয়ে ভিডিওচিত্র ধারণ করেন। পরে বাসায় দেহরক্ষী পাঠিয়ে তাদের ভয়ভীতি দেখান। ধর্ষিতরা ভয়ে এবং লোকলজ্জার কারণে এবং মানসিক অসুস্থতা কাটিয়ে ওঠার পর আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে আলোচনা করে তারা মামলার সিদ্ধান্ত নেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *