আপনারা জোর করে যা চাপাবেন আমরা তাই মেনে নেবো’

Slider টপ নিউজ

বাংলাদেশে গণপরিবহনের ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্তে তীব্র প্রতিক্রিয়া ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে যাত্রীদের মধ্যে। সকালে সংবাদ সম্মেলন করে ‘যাত্রীবান্ধব ভাড়া’ পুনঃনির্ধারণের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি।

সংগঠনটির মহাসচিব মোঃ মোজাম্মেল হক চৌধুরী একে ‘মালিকদের স্বার্থরক্ষার জন্য নির্ধারিত’ বলে অভিযোগ করে বর্ধিত ভাড়া প্রত্যাখ্যান করেছেন।

ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে পরিবহন মালিকদের ডাকা ধর্মঘট শেষ হয়েছে গণ-পরিবহনের ভাড়া বাড়ানোর মধ্য দিয়ে। সোমবার থেকে নতুন ভাড়ায় পরিবহন চলাচল শুরু হয়েছে।

‘কি-ই-বা করার আছে?’
গণপরিবহনের ভাড়া বৃদ্ধি সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন সোমবার জারি করা হলেও, রোববার রাতে ধর্মঘট উঠে যাওয়ার পর থেকে নতুন ভাড়া কার্যকর করে পরিবহন মালিকেরা।

সকাল থেকে অফিসগামী এবং অন্যান্য কাজে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাইরে বেরিয়ে নতুন বর্ধিত ভাড়ার মুখে পড়েন যাত্রীরা।

যাত্রীদের মধ্যে যে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে তার একটি নমুনা দেখা যায় বিবিসি বাংলারে ফেসবুক পাতায় ‘বাসের ভাড়া নিয়ে আপনার কেমন অভিজ্ঞতা হচ্ছে’ শিরোনামে একটি পোষ্ট দেবার পর। দুই ঘণ্টায় সেখানে প্রায় পৌনে তিন হাজার মানুষ মন্তব্য করেছেন।

এসব মন্তব্যে সবাইই নতুন বর্ধিত ভাড়া নিয়ে হতাশা এবং ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

কেউ আবার ব্যঙ্গ করে রাস্তায় নিজেদের অভিজ্ঞতা লিখেছেন ওই পোষ্টে।

ব্যবহারকারীদের একটি বড় অংশ জ্বালানি তেলের দাম বাড়া এবং পরিবহন ভাড়ার পর নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম আরো বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

বিবিসির ওই পোষ্টে এমডি নাসির নামে একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘তৈল এর দামও বাড়ালেন ভাড়াও বাড়ালেন, সেই সাথে নিত্যনৈমিত্তিক প্রয়োজনীয় জিনিস এর দামও বাড়িয়ে যাচ্ছেন নিয়মিত। …মতামত আর কি দিতাম, আপনারা জোর করে যা চাপাবেন আমরা তাই মেনে নেবো। এ ছাড়া আমাদের কি-ই-বা করার আছে!’

রাখসাং এস সাংমা নামে একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, “মিটিং-এ বাস ও শ্রমিক মালিকদের ডাকা হয়েছে। যাত্রী সাধারণের প্রতিনিধি কাউকে ডাকা হয়েছে বলে মনে হয় না।”

এমডি মামুন মৃধা নামে আরেকজন ব্যবহারকারী প্রশ্ন তুলেছেন, “যে দায় সরকার নিতে পারে না, কোন মালিক পক্ষ নিতে পারে না, তা জনগণের উপর কেন হস্তান্তর করা হয়?”

পরিবহন মালিকদের সাথে সরকারি সংস্থার বৈঠকের দিকে ইঙ্গিত করে সাথি সানা নামে একজন ব্যবহারকারী মন্তব্য করেছেন, “এদের মুল উদ্দেশ্য কখনো তেলের দাম কমানো ছিল না, ছিল ভাড়া বাড়ানো। সেটা সফল হয়েছে।”

এদিকে, রোববার বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ বিআরটিএ’র সাথে পরিবহন মালিকদের যে বৈঠকে ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়, সেখানে স্পষ্ট বলা হয়েছে বর্ধিত ভাড়া কেবলমাত্র ডিজেলচালিত পরিবহনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।

সিএনজিচালিত পরিবহনের ভাড়া বাড়বে না বলে জানানো হয়েছিল।

কিন্তু বিবিসির পোষ্টে অনেক ব্যবহারকারী অভিযোগ করেছেন, ভাড়া বাড়ানোর ঘোষণার পর যেসব বাস-মিনিবাস সিএনজিতে চলে তারাও ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছে।

যাত্রীবান্ধব ভাড়া পুনঃনির্ধারণের দাবি
সোমবার সকালে সংবাদ সম্মেলন করে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি বলেছে, নতুন বর্ধিত ভাড়া যাত্রীদের নিয়ে প্রতিহত করা হবে।

‘যাত্রীবান্ধব ভাড়া’ পুনঃনির্ধারণের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান ।

যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোঃ মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘পরিবহন মালিকদের দাবি নিয়ে ভাড়া নির্ধারণের বৈঠক করেছে সরকার, কিন্তু সেখানে যাত্রীদের কোনো প্রতিনিধি রাখা হয়নি। যে কারণে তাদের স্বার্থ দেখা হয়নি ওই বৈঠকে।’

এখন যাত্রীদের সাথে নিয়ে ‘তাদের ওপর চাপানো’ এই বর্ধিত ভাড়া ‘প্রতিহত’ করা হবে বলে তিনি সংবাদ সম্মেলনে বলেন।

বিএনপির প্রতিবাদ
জ্বালানি তেল এবং বাস ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদে ১০ নভেম্বর দেশের সব মহানগরে প্রতিবাদ সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি।

আর ১২ নভেম্বর দেশের সব জেলা শহরে বিক্ষোভ সমাবেশ করবে।

ঢাকায় আয়োজিত এক সমাবেশে এসব কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি অভিযোগ করেন, সরকার ‘মালিকপক্ষের প্রেসক্রিপশনে’ ভাড়া বাড়িয়েছে।
সূত্র : বিবিসি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *