ডিজিটাল জন্মসনদ সংগ্রহে তিন পুরুষের ভোগান্তি

Slider জাতীয়


স্কুলে ভর্তি কিংবা করোনার টিকা নিতে নিবন্ধনের জন্য সন্তানের লাগবে ডিজিটাল জন্মসনদ। অথচ এই জন্মসনদ সংগ্রহে বাবা দাদাসহ পরিবারের তিন পুরুষের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। কিছু পরিবার আছে যাদের শিশু স্কুলে ভর্তি বা অন্য কোনো প্রয়োজনে এই জন্মসনদ পেতেই যেন গলদঘর্ম অবস্থা। নাওয়া-খাওয়া ভুলে ছুটছেন তারা নিকটস্থ ইউনিয়ন বা কাউন্সিলরের অফিসে। অনলাইনে নির্ধারিত একটি ফরমেটে আবেদন করতে হয় বিধায় দুর্ভোগ বা ভোগান্তি কমাতে কর্মকর্তাদেরও কিছু করার নেই বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। অন্য দিকে স্কুল শিক্ষার্থীদের করোনার টিকা নেয়ার জন্যও ১৭ ডিজিটের জন্ম নিবন্ধন সনদও চাইছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি)। আর এই সনদ না থাকলে তাদের টিকা প্রাপ্তিতে অনিশ্চয়তা তৈরি হচ্ছে।

মাউশি থেকে বলা হয়েছে সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী স্কুলশিক্ষার্থীদের করোনার টিকা পেতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে উপজেলা ও জেলা শিক্ষা অফিসের মাধ্যমে নির্ধারিত ফরমে নাম পাঠাতে হবে মাউশিতে। এই তালিকা মাউশির আইটি বিভাগ সুরক্ষা অ্যাপসের মাধ্যমে টিকার জন্য নিবন্ধন করবে। সেখানে শিক্ষার্থীদের জন্ম নিবন্ধনের ১৭ ডিজিটের নিবন্ধন নম্বর যুক্ত করার শর্ত দেয়া হয়েছে।

মাউশির পরিচালক (মাধ্যমিক বিদ্যালয়) মো: বেলাল হোসাইন গতকাল রোববার জানান, আমরা যে ফর্মে শিক্ষার্থীদের তালিকা চেয়েছি সেখানে জন্মনিবন্ধনের ১৭ ডিজিটের একটি নম্বর চাওয়া হয়েছে। আইসিটি বিভাগ এই নম্বর যুক্ত করেই সুরক্ষা অ্যাপসে শিক্ষার্থীর নাম নিবন্ধন করবে। তবে জন্মনিবন্ধন জটিলতায় ভবিষ্যতে কোনো শর্ত শিথিল করার সুযোগ আছে কি না সেটি মূলত আইসিটি বিভাগই সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। আমাদের কাছে (মাউশি) যে ফরমেটে শিক্ষার্থীদের তথ্য চাইবে আমরা সেভাবেই তালিকা করে তথ্য দেবো।

এ দিকে ডিজিটাল জন্মসনদ সংগ্রহের নানা ভোগান্তি নিয়ে বিভিন্ন মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক নেতিবাচক প্রচারের পর জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের রেজিস্ট্রার জেনারেল কার্যালয় থেকে ডিজিটাল জন্মসনদ সংগ্রহের ক্ষেত্রে বিদ্যমান বেশ কিছু নিয়মনীতি শিথিল করার বিষয়েও সম্প্রতি ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে। তবে শর্ত শিথিলের আগ পর্যন্ত বিদ্যমান সব শর্ত মেনেই অভিভাবকদের আবেদন করতে বলা হয়েছে। যদিও বাবা-মায়ের জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) নম্বর দিয়েই আগে সন্তানের জন্মনিবন্ধন করার সুযোগ ছিল। তবে এখন নিয়ম পরিবর্তন হয়েছে। সন্তানের জন্মনিবন্ধন করাতে বাবা-মায়ের এনআইডির পাশাপাশি জন্মনিবন্ধন নম্বরও বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চলতি ২০২১ সালের জানুয়ারি মাস থেকে স্কুলে ভর্তি, এসএসসি পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন, পাসপোর্টের জন্য আবেদনসহ সর্বমোট ১৮টি ক্ষেত্রে ডিজিটাল জন্মনিবন্ধন সনদ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কিন্তু ভুক্তভোগীরা বলছেন অনলাইনে আবেদন করার প্রক্রিয়ায় সমন্বয়হীনতা ও অব্যবস্থাপনার কারণে তাদের নাগরিকদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বিশেষ করে নাগরিকদের স্থায়ী ঠিকানার প্রমাণপত্র নিয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। স্থায়ী ঠিকানার প্রমাণপত্রে বিদ্যুৎ পানি বা গ্যাস বিলের কপির সাথে পৈতৃক ভিটেমাটির জমির পর্চা কিংবা দলিলপত্রও চাওয়া হচ্ছে। এতে করে যৌথ পরিবারের সদস্যরা যারা নিজেদের নামে জমি ভাগভাটোয়ারা করেননি তারা বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন। আবার যারা ভাড়া বাসায় থাকেন তাদের বাড়ির মালিকের বিদ্যুৎ বিল বা গ্যাস বিলের কাগজপত্রও গ্রহণ করা হচ্ছে না। ফলে অ্যাকাডেমিক কাগজপত্র সংগ্রহ করা কিছুটা সহজসাধ্য হলেও স্থায়ী ঠিকানার কাগজপত্র সংগ্রহে অনেককেই পড়তে হচ্ছে গলদঘর্ম অবস্থায়।

জেলাপর্যায়ে ইউনিয়ন পরিষদ এবং বিভাগীয় পর্যায়ে সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন অফিসে জন্মসনদ সংগ্রহে আসা অনেক ভুক্তভোগী জানান, সন্তানের জন্মসনদ সংগ্রহের জন্য বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন বাবা ও মায়েরা। কেননা ছেলে বা মেয়ের জন্মসনদের আবেদন করলে সেখান থেকে বলা হচ্ছে সন্তানের জন্মসনদ নেয়ার জন্য আগে বাবা ও মা দু’জনেরই ডিজিটাল জন্মসনদের কপি বা নিবন্ধন নম্বর লাগবে। আবার বাবা এবং মায়ের জন্মসনদের জন্য আবেদন করা হলে তাদের বাবা-মা অর্থাৎ দাদা-দাদী বা নানা-নানির জন্মসনদও চাওয়া হচ্ছে। তবে এ ক্ষেত্রে দাদা-দাদী বা নানা-নানী কেউ মারা গেলে তাদের মৃত্যু সনদও জমা দিতে বলা হচ্ছে। আবার অনেকেই বলছেন, কার্যালয়গুলোতে উপস্থিত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নাগরিকদের স্পষ্ট কোনো নির্দেশনা দিচ্ছেন না। সনদ সংশোধনের ক্ষেত্রেও নির্ধারিত সময়ের চেয়ে অনেক বেশি সময় লাগছে বলে অভিযোগ সনদ নিতে আসা অনেকের। সংশ্লিষ্টরা জানান, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা চাহিদামতো কাগজপত্র যাচাই সাপেক্ষে নির্দিষ্ট কয়েক দিন পর জন্ম নিবন্ধন সনদ দিয়ে থাকেন।

তবে বয়সভেদে জন্মনিবন্ধন সনদ সংগ্রহ করতে সরকার নির্ধারিত ফি ২৫ থেকে ৫০ টাকা, আর সনদে সংশোধনের ক্ষেত্রে প্রয়োজন হয় ৫০ থেকে ১০০ টাকা। এর বাইরে জন্মনিবন্ধন সনদ সংগ্রহ করতে আর কোনো টাকা দিতে হয় না। জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, নাগরিকের ১৮টি সেবা পেতে জন্মনিবন্ধন সনদ এবং চারটি সেবা পেতে মৃত্যু নিবন্ধন সনদ প্রয়োজন হয়। কর্মকর্তারা বলছেন, সনদ দেয়ার জন্য অফিস ও জনবল সঙ্কটে সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। নতুন করে কিছু অঞ্চল যুক্ত হওয়ায় এক অঞ্চলের অফিসেই তিন অঞ্চলের সেবাগ্রহীতাদের সেবা দেয়া হচ্ছে। ফলে এক অঞ্চলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তিন অঞ্চলের নাগরিকদের সেবা দিতে হচ্ছে, যা খুবই কষ্টসাধ্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *