গ্রাম বাংলা ডেস্ক: এইডস প্রতিরোধে কনডমের চেয়েও বেশি কার্যকরী হল যৌন সঙ্গীর প্রতি বিশ্বস্ততা – ভারতের স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধনের এই মন্তব্যকে ঘিরে তুমুল বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।
এইডস মোকাবিলায় যুক্ত এনজিও ও বিশেষজ্ঞরা অনেকেই মন্ত্রীর বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করে বলছেন, এভাবে নৈতিকতার পাঠ দিয়ে এইডসের সঙ্গে লড়াই করা সম্ভব নয়।
কিন্তু ভারতের ন্যাশনাল এইডস কন্ট্রোল অর্গানাইজেশন বা নাকো মন্ত্রীর এই বক্তব্যের পর পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছে, এখন থেকে তারা বিবাহবহির্ভূত বা প্রাকবিবাহ যৌনতা বন্ধ করার জন্যও প্রচারে জোর দেবেন।
কনডম নিরাপদ যৌনতা নিশ্চিত করে, আর সেটাই এইডস-কে দূরে রাখার চাবিকাঠি – এতদিন নাকো-র যাবতীয় বিজ্ঞাপন আর প্রচারের মূল কথা ছিল সেটাই।
তবে ভারতের নতুন স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধন এ সপ্তাহে নিউ ইয়র্ক টাইমসের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে মন্তব্য করেছেন – কনডম নিরাপদ ঠিকই, কিন্তু আরও অনেক বেশি নিরাপদ হল নিজের স্ত্রী বা যৌনসঙ্গীর প্রতি বিশ্বস্ত থাকা।
মন্ত্রী বলেছেন, “একজন মহিলা ও পুরুষের মধ্যে যে যৌন সম্পর্ক, তার শুদ্ধতা ও সততা অক্ষুণ্ণ রাখার জন্যও আমাদের চেষ্টা করতে হবে।”
তাঁর এই বক্তব্য তোলপাড় ফেলেছে সঙ্গে সঙ্গেই, কিন্তু যৌন সম্পর্ক স্থাপনে নৈতিকতার বাঁধন যে খুব জরুরি এই যুক্তিতে স্বাস্থ্যমন্ত্রী অবিচল।
মিঃ হর্ষবর্ধনের কথা হল, ‘‘একজন মহিলা ও পুরুষের মধ্যে যে যৌন সম্পর্ক, তার শুদ্ধতা ও সততা অক্ষুণ্ণ রাখার জন্যও আমাদের চেষ্টা করতে হবে, সে বিষয়টার ওপর প্রচারে জোর দিতে হবে।’’
মন্ত্রীর এই ভাবনা সামনে আসার পর নাকো-ও জানিয়েছে, এইডসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এই যৌন নৈতিকতা যে কতটা প্রয়োজন সে বিষয়টা তারা প্রচারে তুলে ধরবেন।
এইডস নিয়ন্ত্রণ দফতরের সচিব ভি কে সুব্বুরাজ বলছেন, মাত্র একজন যৌনসঙ্গী রাখা, বিয়ের আগে যৌনতায় না-জড়ানো এবং বিয়ের পর স্বামী বা স্ত্রীর প্রতি বিশ্বস্ত থাকা – এখন থেকে এইগুলোই হবে তাদের ক্যাম্পেনের থিম; কারণ সমাজের নৈতিক বন্ধন শক্ত করাতে দোষের কিছু নেই।
সমস্যা হল, ভারতে দীর্ঘদিন ধরে এইডসে-র বিরুদ্ধে লড়ছেন যে অ্যাক্টিভিস্টরা, তাদের বেশির ভাগই এই যুক্তি মানতে রাজি নন।
ইন্ডিয়া এইচআইভি-এইডস অ্যালায়েন্সের প্রোগ্রাম ম্যানেজার অভিনা আহের বলছেন, ‘‘এইডসের ক্ষেত্রে যারা চরম ঝুঁকিপূর্ণ, তাদের আপনি নৈতিকতার জ্ঞান দিতে পারেন না।’’
তাঁর যুক্তি, ‘‘সামাজিক ও অর্থনৈতিক বাধ্যবাধকতাই তাদের সেই পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিয়েছে – তার ওপর যৌনকর্মীর পেশাও ভারতে বেআইনি। এই চরম ঝুঁকিপূর্ণদের জন্য নিরাপদ যৌনতাই পথ। নৈতিকতার কথাটাই এখানে অবান্তর। এইডসের ক্ষেত্রে যারা চরম ঝুঁকিপূর্ণ, তাদের আপনি নৈতিকতার জ্ঞান দিতে পারেন না। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নীতি ও স্ট্র্যাটেজি তাই অবশ্যই পাল্টানো দরকার।’’
পাশাপাশি বিশেষজ্ঞরা এই বলেও সতর্ক করে দিচ্ছেন, কনডমের পক্ষে নানা প্রচার এতদিন ভারতকে যে সুফল দিয়েছে, জোরটা নৈতিকতার ওপর সরে গেলে তাতে হিতে বিপরীতও হতে পারে।
বিরোধী দল কংগ্রেসের মুখপাত্র ও দলের মহিলা শাখার প্রেসিডেন্ট শোভা ওঝাও প্রায় একই সুরে বলছেন, ‘‘নাকো কনডমের হয়ে প্রচার করছে মানেই এই নয় যে তারা অবৈধ যৌন সম্পর্ককে উৎসাহিত করছে।’’
মিস ওঝা আরও বলেন, ‘‘যুবকদের মধ্যে কনডমের ব্যবহার, কনডমের ব্যাপারে সচেতনতা বাড়ানো ভারতকে এইডসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অনেক সাহায্য করেছে। এখন হঠাৎ করে মধ্যযুগীয় চিন্তাভাবনা আমদানি করাটা ঠিক নয়।’’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধন, যিনি নিজে একজন নামকরা চিকিৎসক, তিনি অবশ্য তাঁর এইডস প্রতিরোধের দর্শনকে মোটেই মধ্যযুগীয় বলে মানতে রাজি নন।
বরং ভারতের পটভূমিতে যৌন নৈতিকতা আর যৌন বিশ্বস্ততাই যে সেরা দাওয়াই – সেটা ধরে নিয়েই তাঁর দফতর এখন এইডস মোকাবিলার নতুন রূপরেখা তৈরি করছে।
সূত্র বিবিসি বাংলা