নিপা ভাইরাস কি নতুন মহামারি সৃষ্টি করবে? সম্প্রতি ভারতে এই ভাইরাসে সংক্রমিত একটি বালকের মৃত্যু হয়েছে। এর ফলে এমন প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। বলা হয়েছে, ভবিষ্যত হুমকির কথা মাথায় রেখে এখনই কি প্রস্তুতি নেয়ার সময়? অথবা এই মহামারির বিরুদ্ধে এখনই কি আমাদেরকে ‘সরঞ্জাম’ প্রস্তুত রাখা উচিত? ভারতের সরকারি বার্তা সংস্থা পিটিআই’কে উদ্ধৃত করে এ খবর দিয়েছে অনলাইন লাইভমিন্ট। এতে বলা হয়েছে, নিঃসন্দেহে এটা বলা যায় যে, মহামারির ব্যাপক প্রস্তুতিতে ঘাটতি থাকার কারণে করোনা মহামারি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছিল। এর ফলে ভয়ঙ্কর এবং বিপর্যয়কারী পরিণতি ভোগ করতে হয়েছে। তবে এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া। তারা ২০০৩ সালের সার্স ভাইরাসের অভিজ্ঞতার পর থেকেই আত্মরক্ষার কৌশল অবলম্বন শুরু করেছে। তাই সরকারগুলোর জন্য খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো, অন্যান্য ভয়াবহ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া থেকে আমাদেরকে রক্ষায় কৌশল নির্ধারণ করা।
ওই রিপোর্টে বলা হয়, সার্স-কোভ-২ বা করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে দ্রুততার সঙ্গে উদ্ভাবন করা হয়েছে টিকা। তা ব্যবহার করে এই মহামারি থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব হয়েছে। তাই যদি অন্য তীব্রতা সম্পন্ন ভয়ঙ্কর ভাইরাসের বিরুদ্ধে টিকা তৈরি করা যায় এবং তা মজুদ করে রাখা যায়, তাহলে ওই ভাইরাস শনাক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এসব টিকা ব্যবহার করা যেতে পারে। এমনটা হলে আরেকটি মহামারি এড়ানো সম্ভব হতে পারে।
এ প্রচেষ্টা বা মনোভাবকে প্রশংসা করতে হয়। তবে এ প্রক্রিয়ায় আগেভাগে মহামারি সৃষ্টিকারী ভাইরাস শনাক্ত হতে হবে, যা কোনো সহজসাধ্য কাজ নয়। এর ফলে একটি ঝুঁকি সৃষ্টি হয়। তাহলো, উদ্বিগ্ন হবেন না। টিকা আসছে। এই মনোভাবের কারণে প্রতিরোধযোগ্য যেসব সহজ পদ্ধতি আছে, তাকে এড়িয়ে যাওয়ার মতো মানসিকতা সৃষ্টি হতে পারে।
১৯৯৮ সালে প্রথম মালয়েশিয়ায় শনাক্ত হয় নিপা ভাইরাস। এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সম্প্রতি ভারতের কেরালায় একটি বালকের মৃত্যু হয়েছে। এতে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে যে, এই ভাইরাস রূপান্তরিত হতে পারে। তাতে সংক্রমণ ঝুঁকি বৃদ্ধি পেতে পারে। আরো ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়তে পারে এই ভাইরাস। যদি তেমনটাই হয়, তাহলে তা হবে ভীতিকর। কারণ, এই ভাইরাসে বর্তমানে মৃত্যুর শতকরা হার ৫০ ভাগের ওপরে। এই ভাইরাসের এখন পর্যন্ত কোনো টিকা আবিষ্কার হয়নি। এমনকি এর কোনো পরীক্ষিত চিকিৎসা পদ্ধতিও নেই। তাই বলে এই ভাইরাসের টিকা আবিষ্কারে বিনিয়োগ করা বা ঝাঁপিয়ে পড়ার আগে উচিত এর বাস্তবিক মহামারি সৃষ্টির ঝুঁকি কতটা তা নির্ধারণ করা। যদি তেমনটা হয়, তাহলে আরো অনেক ভাইরাস আছে। এসব ভাইরাসের মধ্যে এই ভাইরাস অগ্রাধিকারের দিক দিয়ে তালিকায় কোন র্যাংকে থাকবে তা বোঝা উচিত।
এ জন্য প্রয়োজন এই ভাইরাস কিভাবে সংক্রমণ ঘটায় এবং তার বংশ বিস্তার করে তা অনুধাবন করা। নিপা হলো একটি প্যারামাইসোভাইরাস। মানব দেহের প্যারাইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের সঙ্গে সম্পর্কিত এই ভাইরাস। প্যারাইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস এমন এক ভাইরাস, যা সাধারণভাবে মানবদেহে ঠা-া লাগায়। প্রাকৃতিকভাবে এর পোষক হলো ফলখেকো বাদুর। ছোট এবং বড় খেকশিয়াল। এসব প্রাণি দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াজুড়ে দেখা যায়। মানবদেহে এখন পর্যন্ত যত নিপা ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটেছে তার সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে আক্রান্ত বাদুরের সম্পর্ক আছে। বাদুরের দেহে এই ভাইরাস সাব-ক্লিনিক্যাল পর্যায়ে থাকে, যা আগে থেকে নোটিশ করা সম্ভব হয় না। এমনিতেই প্র¯্রাবের মাধ্যমে এই ভাইরাস নির্গত হয়। এসব প্রাণির মেলামেশা এবং গাদাগাদি করে অবস্থানের মধ্য দিয়েও ছড়ায় এই ভাইরাস। যেসব ফল বা ফলের রসে বাদুরের প্র¯্রাব মিশ্রিত অবস্থায় থাকে, তাই এই ভাইরাস মানবদেহে স্থানান্তরের প্রধান মাধ্যম।
এই ভাইরাস নিয়ে বাংলাদেশে দীর্ঘ মেয়াদী গবেষণা হয়েছে। এখানকার মানুষের মধ্যে নিয়মিতই এই ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দেয়। এর কারণ বাদুরের ঘনবসতি। তাদের পর্যাপ্ততা। খেজুরের কাঁচা রস হলো এখানে এই ভাইরাসের বিস্তার লাভের প্রধান মাধ্যম। খেজুর গাছ কেটে তা থেকে রস সংগ্রহকালে এই রসে সংক্রমণ ঘটায় বাদুর। এই সংক্রমণ থামানো গেলে আরেকটি মহামারির ঝুঁকি থামানো যেতে পারে।