টাঙ্গাইল:টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গায় স্কুলছাত্রী সুমাইয়া আক্তারকে গলা কেটে হত্যার ১০ ঘণ্টার মাথায় হত্যারহস্য উদঘাটন করেছে র্যাব-১২। প্রেমের বিচ্ছেদ সইতে না পেরে সুমাইয়াকে হত্যার পর বখাটে মনির নিজেও আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন। গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতাল এবং পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। বৃহস্পতিবার সকালে সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান মনির।
এর আগে বুধবার সন্ধ্যায় হত্যাকাণ্ডের প্রধান সন্দেহভাজন হিসেবে তাকে আটক দেখিয়েছিল র্যাব।
বুধবার সকালে কালিহাতীর এলেঙ্গা সামসুল হক কলেজের সামনের একটি ভবন থেকে সুমাইয়ার রক্তাক্ত লাশ পাওয়া যায়।
বৃহস্পতিবার সকালে টাঙ্গাইল র্যাব-১২, সিপিসি-৩ এর কোম্পানি কমান্ডার আব্দুল্লাহ আল মামুন এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানান, সুমাইয়ার (১৫) সাথে বখাটে মনিরের (১৭) দু’বছর যাবত প্রেমের সম্পর্ক ছিল। মনির অত্যন্ত বদমেজাজি এবং নেশাগ্রস্ত ছিলেন। তিনি ভিকটিমের সাথে শারীরিক সম্পর্ক করার জন্য বিভিন্ন সময় চাপ দিতেন এবং শারীরিক নির্যাতন করতেন। ধীরে ধীরে সুমাইয়া তার সাথে সম্পর্ক ছেদ করে দু’মাস আগে অন্য একটা ছেলের সাথে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। এতে মনির অত্যন্ত রাগান্বিত হন। বুধবার প্রাইভেট পড়তে যাওয়ার সময় সুমাইয়াকে গলা কেটে হত্যার পর মনির নিজেও আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। অবশেষে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। মনিরের বন্ধুর মোবাইলের ছবি ও ভিডিওর সূত্র ধরে উদঘাটন করা হয় হত্যা রহস্য।
উদ্ধারকৃত ভিডিও বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, মনির একটি সুইচ গিয়ার চাকু দিয়ে লাইকির জন্য ভিডিও তৈরি করেন এবং বিভিন্ন স্টাইলে এই চাকুর ব্যবহার করার ভিডিও করেন। সুমাইয়ার লাশের পাশ থেকে সেই রক্তাক্ত সুইচ গিয়ার উদ্ধার করা হয়েছে। এভাবেই র্যাবের ছায়া তদন্তে স্কুলছাত্রী সুমাইয়া আক্তারকে হত্যার প্রধান সন্দেহভাজন হিসেবে মাদকাসক্ত মনিরকে শনাক্ত করা হয়।
কালিহাতী থানার ওসি মোল্লা আজিজুর রহমান নয়া দিগন্তকে জানান, এ ঘটনায় বখাটে মনিরসহ অজ্ঞাত আরো চারজনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন ভিকটিমের বাবা মো: ফেরদৌস। এর মধ্যে প্রধান আসামি মনির বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
উল্লেখ্য, সুমাইয়া কালিহাতী উপজেলার পালিমা (উত্তরপাড়া) গ্রামের মো: ফেরদৌসের মেয়ে। তিনি এলেঙ্গার একটি ভাড়া বাসায় পরিবারের সাথে থেকে এলেঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীতে পড়তেন। এছাড়া মনির হোসেন একই উপজেলার ভাবলা গ্রামের মেহের আলীর ছেলে। বুধবার বিকেলে ময়নাতদন্ত শেষে সুমাইয়ার লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। বাদ মাগরিব জানাজার নামাজ শেষে পালিমা গোরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।