বাজারে গিয়ে যদি দেখেন টমেটোর রং লাল বা সাদাটে সবুজ নয়, কুচকুচে কালো র – নিঃসন্দেহে অনেকেই ভড়কে যাবেন।
কেনার আগে অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগবে, খেতে সাধারণ টমেটোর মতোই হবে তো? ভেতরের রং কেমন? এই টমেটোর রং কালোই বা কেন?
বাংলাদেশের কুমিল্লায় এক সৌখিন চাষীর বাড়িতে চাষ হচ্ছে এই কালো টমেটো। যদিও এখনো বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ শুরু হয়নি।
কালো টমেটো দেখতে প্রচলিত দেশী জাতের টমেটো যা সাধারণত লাল এবং গবেষণাগারে উদ্ভাবিত সাদাটে সবুজ টমেটোর মতোই দেখতে।
কিন্তু এটি আকারে বড় হয়। এই টমেটো গাছের উচ্চতাও বেশি। এর ফলন কেবলমাত্র শীতকালে হয়। স্বাভাবিক তাপমাত্রায় কালো টমেটো বেশি দিন সংরক্ষণ করা যায়। এর নানা রকম ঔষধি গুণাগুণ রয়েছে বলে ধারণা করা হয়।
যদিও বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট জানিয়েছে ঔষধি গুণাবলী নিয়ে দেশে কোনো পরীক্ষা এখনো হয়নি।
কালো টমেটো কোথা থেকে এলো?
বাংলাদেশে প্রথম কালো টমেটোর চাষ করেন কুমিল্লার সৌখিন চাষি আহমেদ জামিল। পেশায় ব্যবসায়ী জামিল যুক্তরাষ্ট্রের সাউথ ক্যারোলিনা থেকে কালো টমেটোর বীজ আনান ২০১৭ সালে।
পরের বছর প্রথম নিজের বাড়িতে টবে কালো টমেটো চাষ করেন।
বিবিসিকে তিনি বলেছেন, শুরুতে বর্ষা মৌসুমে টমেটোর বীজ বুনলেও বৃষ্টির কারণে তখন ফলন হয়নি। পরে শীতে বীজ বোনার পর গাছ হয়, এবং ফল পান তিনি।
এখনো পর্যন্ত কুমিল্লা শহরে নিজের বাড়ির বাগানে চাষ করছেন এই টমেটো।
তবে দেশের আরো বিভিন্ন জায়গায় চাষ হচ্ছে এই টমেটো, তবে তা সৌখিন পর্যায়েই হচ্ছে।
কালো টমেটো অনেক দেশে ‘অর্নামেন্টাল ফ্রুট’ হিসেবে চাষ হয়। আমেরিকাতে যেখান থেকে প্রথম বীজ সংগ্রহ করেন জামিল, সেখানে একেকটি গাছে ৪-৫টি টমেটো হয় বলে তিনি জানতে পেরেছেন।
কিন্তু জামিল দাবি করেছেন, তার টমেটোর ফলন অনেক বেশি হয়েছে। তার লাগানো প্রতিটি গাছে ৫০-৬০টির মতো কালো টমেটো ধরেছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, দেশী টমেটোর চাইতে এগুলোর আকারও বড়। এই টমেটোর ভেতরটা লাল, এবং খেতে টক-মিষ্টি স্বাদের।
ইতিমধ্যে জামিলের কালো টমেটো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখছে কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট এবং কৃষি অধিদফতর।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে অনুমোদন পাবার পর তিনি বাণিজ্যিক চাষাবাদ শুরু করবেন।
কালো টমেটোর গুণ
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউটে টমেটো নিয়ে গবেষণা করছেন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ফেরদৌসি ইসলাম। তিনি বলছেন, প্রচলিত টমেটোর সাথে কালো টমেটোর কিছু গুণগত পার্থক্য রয়েছে।
যদিও কালো টমেটো নিয়ে বিস্তারিত গবেষণা এখনো হয়নি জানিয়ে ইসলাম বলেছেন, প্রাথমিক বিশ্লেষণে তারা দেখেছেন এই টমেটোর খাদ্যগুণ দেশি টমেটোর চেয়ে বেশি।
এই টমেটোতে ভিটামিন এ এবং আয়রনের পরিমাণ বেশি থাকে। একইসাথে এতে অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের পরিমাণও সাধারণ টমেটোর চেয়ে বেশি।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, এর ফলন অনেক বেশি হয়, যা দেশীয় চাষিদের জন্য উপকারী ব্যাপার, মানে তারা অল্প জমিতে চাষ করে অধিক লাভবান হতে পারবেন।
সরকারি নার্সারিতে কালো টমেটো বীজ
এখনো বাণিজ্যিক চাষাবাদ শুরু না হলেও ইতিমধ্যেই কৃষি অধিদপ্তর দেশের বিভিন্ন সরকারি নার্সারিতে কালো টমেটোর বীজ ও চারা রাখতে শুরু করেছেন।
রাজশাহী মেট্রোপলিটন কৃষি কর্মকর্তা পাপিয়া রহমান মৌরি বিবিসিকে বলেছেন, কুমিল্লাতে এখনো স্বল্প পরিসরে এই টমেটোর চাষ হলেও এখন দেশের বিভিন্ন জায়গায় সরকারি নার্সারিতে এই টমেটো প্রমোট করা হচ্ছে।
তিনি বলেছেন, কালো টমেটোর ভেতরে পানি কম থাকে, যে কারণে এই টমেটো সহজে নষ্ট হয় না। ফলে কৃষকদের কাছ থেকে আগ্রহ দেখা যাচ্ছে।
সূত্র : বিবিসি