কোম্পানির ১৭ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় সঙ্কটে পড়তে পারে ফেসবুক। এমনকি তাদের ভবিষ্যত অনিশ্চিত হয়ে যেতে পারে। এমনও হতে পারে যে, বন্ধও হয়ে যেতে পারে সবচেয়ে বৃহৎ সামাজিক যোগাযোগ বিষয়ক এই প্লাটফর্ম- ফেসবুক। এ খবর দিয়েছে অনলাইন সিএনএন। এর আগে হুইসেলব্লোয়ার, পিআর ফায়ারস্ট্রোর্মস এবং কংগ্রেশনাল শুনানির মুখোমুখি হয়েছে তারা। কোনোমতে তাদেরকে সামাল দিয়েছেন মার্ক জাকারবার্গ। কিন্তু এই তিনটি প্রতিষ্ঠানের সম্মিলিত প্রচেষ্টাকে মোকাবিলা করতে হবে ফেসবুককে। ১৭ বছরের ইতিহাসে এত ভয়াবহ বিরোধিতা এবং সঙ্কট মোকাবিলা করেনি তারা।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের ১৭টি সংবাদ ভিত্তিক কনসোর্টিয়াম ধারাবাহিক রিপোর্ট প্রকাশ শুরু করেছে। এর নাম দেয়া হয়েছে ‘দ্য ফেসবুক পেপারস’। কোম্পানিটির আভ্যন্তরীণ শত শত ডকুমেন্টের ভিত্তিতে এসব রিপোর্ট করা হচ্ছে। সিকিউরিটি এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে প্রকাশিত ডকুমেন্ট রয়েছে এর মধ্যে। এ ছাড়া কংগ্রেসের শুনানিতে ফেসবুকের হুইসেলব্লোয়ার ফ্রাঁসেস হিউগেনের আইনজীবীর দেয়া ফরমও ব্যবহার করা হয়েছে। এই কনসোর্টিয়ামের মধ্যে আছে সিএনএন’ও। কংগ্রেস যেসব ডকুমেন্ট হাতে পেয়েছে, তা নতুন করে পর্যালোচনা করেছে তারা। সিএনএন যে বিষয়গুলোতে জোর দিয়েছে তাতে দেখানো হয়েছে ৬ই জানুয়ারি ক্যাপিটল হিলে সহিংসতা সহ কিভাবে ফেসবুকে বিভিন্ন গ্রুপ গোষ্ঠীগত বিরোধ এবং সহিংসতা ছড়িয়ে দিয়েছে। একই সঙ্গে রয়েছে ইংলিশভাষী নয় এমন কিছু দেশে বড় রকম চ্যালেঞ্জ। এ ছাড়া দেখানো হয়েছে, কিভাবে মানব পাচারকারীরা ফেসবুককে প্লাটফরম হিসেবে ব্যবহার করেছে। সিএনএন এবং অন্য সংবাদ ভিত্তিক কনসোর্টিয়াম ফেসবুকের দিকে কয়েক মাস ধরে কড়া দৃষ্টি রেখেছে। এর আগে ফ্রাঁসেস হিউগেন ফেসবুকের যেসব ডকুমেন্ট ফাঁস করে দেন, তার সংখ্যা হাজার হাজার পৃষ্ঠা। এর ওপর ভিত্তি করে এর আগে ধারাবাহিকভাবে রিপোর্ট প্রকাশ করে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল। তারা এই ধারাবাহিক রিপোর্টের নাম দিয়েছিল ‘ফেসবুক ফাইলস’। এতে ইনস্টাগ্রামে টিনেজ মেয়েদের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ তুলে ধরা হয়। এর সঙ্গে যুক্ত ছিল অন্যান্য ইস্যু। এর ফল হিসেবে ফেসবুকের বৈশ্বিক নিরাপত্তা বিষয়ক প্রধান অ্যান্টিগোন ডেভিসকে সিনেট সাবকমিটিতে শুনানির জন্য ডাকা হয়। ওই সময় সিনেট সাব কমিটির শুনানিতে অংশ নেন ফ্রাঁসেস হিউগেন নিজেও। তিনি তাতে সাক্ষ্য দেন। এতে তিনি বলেছিলেন, তিনি বিশ্বাস করেন ফেসবুকের যেসব প্রোডাক্ট আছে তা শিশুদের ক্ষতি করছে। বিভাজন বাড়াচ্ছে এবং গণতন্ত্রকে দুর্বল করছে। কিন্তু এখানেই ফেসবুকের সমস্যার শেষ হচ্ছে না। সাক্ষ্য দিতে সিনেট সাব কমিটির সদস্যরা প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গকে ডেকেছে। উপরন্তু ফেসবুকের সাবেক আরেকজন কর্মচারী সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে ফেসবুকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল করেছেন। তার অভিযোগও হিউগেনের মতো। কিন্তু এর আগে ডাটা প্রাইভেসি, কন্টেন্ট মডারেশন এবং প্রতিযোগীদের বিরুদ্ধে স্ক্যান্ডাল মোকাবিলা করেছে ফেসবুক। তবে যে স্তূপ স্তুপ ডাটা প্রকাশ করা হচ্ছে, তাতে ফেসবুক ভয়াবহ সমস্যায় পড়তে পারে। বিশেষ করে ঘৃণাপ্রসূত বক্তব্য, ভুল তথ্যের প্রচার, যুবসমাজকে রক্ষায় ব্যর্থতার দায় নিয়ে ফেসবুক কিভাবে সামাল দেয় তা এখন দেখার বিষয়। এসব বিষয় এখন এই কোম্পানির জন্য অস্বস্তির জন্ম দিচ্ছে। ফেসবুক কি বাস্তব জগতের ক্ষতিকর দিক মোকাবিলায় সক্ষম? দৃশ্যত ফেসবুক দ্রুত আস্থা হারাচ্ছে। শুধু এর ব্যবহারকারী এবং নিয়ন্ত্রকদের মধ্যে এই আস্থার সঙ্কট নয়। একই সঙ্গে তা বৃদ্ধি পাচ্ছে আভ্যন্তরীণভাবে। এ অবস্থায় ফেসবুকের ভবিষ্যত কি দাঁড়ায় তা বলা কঠিন।