লিটন দাস ব্যাটিংয়েও খুব ভালো করতে পারেননি। ফিল্ডিংয়েও ব্যর্থ। তার এই ব্যর্থতায় শ্রীলঙ্কাকে হারাতে ব্যর্থ হলো বাংলাদেশ। লিটন দাস দু’টি ক্যাচ মিস করেছেন। সাইফুদ্দিনও ক্যাচ মিস করেছেন একটি। আর সাইফুদ্দিন বল করতে গিয়েও ভালো কিছু করতে পারেননি রোববার। আর বাংলাদেশের ফিল্ডিং যেন ক্যাচ মিসের মহড়ায় রূপ নেয় এদিন। ফলে শেষ পর্যন্ত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সুপার টুয়েলভে নিজেদের প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার কাছে ৫ উইকেটে হেরে গেল বাংলাদেশ।
ক্যাচ মিস তো ম্যাচ মিস। ক্রিকেটে সর্বজনবিদিত প্রবাদ বাক্য। শারজায় এই আপ্ত বাক্যটি সত্যি হলো। দুই ক্যাচ মিসের খেসারত দিতে হলো বাংলাদেশকে। চ্যালেঞ্জিং স্কোর গড়েও হেরে গেল বাংলাদেশ। সুপার টুয়েলভ পর্বের প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার কাছে ৫ উইকেটে হেরেছে মাহমুদউল্লাহ শিবির।
রোববার শারজায় টস হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে ২০ ওভারে ১৭১ রান করে বাংলাদেশ। জবাবে শ্রীলঙ্কা সাত বল হাতে রেখে জয়ের বন্দরে পৌছায় ৫ উইেেকট। ৪৯ বলে পাচটি করে চার ও ছক্কায় ৮০ রানে অপরাজিত থাকা আসালাঙ্কা জিতে নেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার। আগামী ২৭ অক্টোবর সুপার টুয়েলভ পর্বে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশ মোকাবেলা করবে ইংল্যান্ডের।
বড় লক্ষ্যে ব্যাট করতে নামা শ্রীলঙ্কাকে প্রথম ওভারেই চেপে ধরে বাংলাদেশ। দলে ফিরেই চমক দেখান স্পিনার নাসুম আহমেদ। ইনিংসের চতুর্থ বলেই ফিরিয়ে দেন বিপজ্জনক কুশল পেরেরাকে। নাসুম বলটি করেছিলেন অনেকটা ঝুলিয়ে, লেংথ ডেলিভারি। পিচ করে বলটি একটু স্কিড করে। অফ স্টাম্প থেকে সেটি সুইপ করার চেষ্টায় লাইন মিস করেন পেরেরা। বল ছোবল দেয় স্টাম্পে। ৩ বলে ১ রানে আউট আউট পেরেরা।
শুরুর হতাশা শ্রীলঙ্কা কাটিয়ে দেয় দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে। আসালাঙ্কার সাথে নিশাঙ্কার মারমুখি জুটি বাংলাদেশকে ভয় পাইয়ে দিতে শুরু করে। পাওয়ার প্লেতে লঙ্কানরা তোলে ৫৪ রান। সপ্তম ওভারে মুস্তাফিজকে দুই চার হাকান আসালাঙ্কা। ম্যাচ যেন শেষ হয়ে যাচ্ছিল তখনই।
তবে নবম ওভারে বাংলাদেশকে ব্রেক থ্রু এনে দেন সাকিব আল হাসান। স্বস্তি ফেরে বাংলাদেশ শিবিরে। প্রথম বলে নিশাঙ্কাকে বোল্ড করেন তিনি। ২১ বলে ২৪ রান করেন তিনি। এই উইকেট নেয়ার সুবাদে শহীদ আফ্রিদিকে ছাপিয়ে টি টোয়েন্টি বিশ^কাপে সর্বোচ্চ উইকেটের মালিক বনে যান সাকিব।
একই ওভারের চতুর্থ বলে অভিষেক ফার্নান্দোকে বোল্ড করেন সাকিব। ৭১ রানে তিন উইকেট হারায় শ্রীলঙ্কা। দলীয় ৭৯ রানের মাথায় সাইফউদ্দিনের আঘাত। বিদায় করেন হাসারাঙ্গাকে। ৫ বলে ৬ রান করা হাসারাঙ্গা ক্যাচ দেন মোহাম্মদ নাঈমের হাতে। ৯.৪ ওভারে ৪ উইকেটে লঙ্কানদের সংগ্রহ তখন ৭৯ রান।
এর পরের অধ্যায়টা বাংলাদেশের হতাশারই। দুইবার ক্যাচ ছাড়েন লিটন দাস। একবার আসালাঙ্কার আরেকবার রাজাপাকসের। এখানেই যেন ম্যাচ ঘুড়ে যায়। ১৩তম ওভারে আফিফের বলে ক্যাচ দেন রাজা পাকসে, তা লুফে নিতে ব্যর্থ হন লিটন দাস। ১৫তম ওভারে মুস্তাফিজের বলে একই জায়গায় ক্যাচ দেন সবচেয়ে ভয়ংকর ব্যাটসম্যান আসালাঙ্কা। এই ক্যাচও ছাড়েন লিটন। এরপর ১৬তম ওভারে ২২ রান দেন সাইফউদ্দিন। সব যেন হ য ব র ল। শেষের দিকে রাজা পাকসে আউট হলেও জয় পেতে বেগ পেতে হয়নি শ্রীলঙ্কাকে।
এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমেও শুরুটা দারুণ হয় মাহমুদউল্লাহদের। ওপেনিং জুটি বরাবরই হতাশ করে দলকে। বিশ^কাপে মূল পর্বে সে ধারা থেকে বের হতে পারলো টাইগাররা। মোহাম্মদ নাঈম ও লিটন দাসের সতর্ক শুরুর কারণেই এমনটি হয়।
প্রথম চার ওভারে দলের চার পেসারকে ব্যবহার করে শ্রীলঙ্কা। তবে উদ্বোধনী জুটি ভাঙতে করতে পারেনি তারা। রানের গতি খুব বেশি না হলেও বাংলাদেশকে স্বস্তির শুরু এনে দেন দুজন। ৪ ওভারে বাংলাদেশের রান ২৯, উইকেট পড়েনি । চলতি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সেরা উদ্বোধনী জুটি এটিই। প্রথম পর্বের তিন ম্যাচে শুরুর জুটির সর্বোচ্চ রান ছিল ১১।
পাওয়ার প্লেটা উইকেশূন্য রাখতে পারেনি বাংলাদেশ। ৫.৫ ওভারে প্রথম উইকেটের পতন। বিদায় নেন লিটন দাস। নাঈম একটু আগ্রাসী থাকরেও লিটন ছিলেন ধীরলয়ে। ১৬ বলে দুই চারে ১৬ রান করে তিনি ফেরেন সাজঘরে।
লাহিরু কুমারার বলে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে জায়গা বানিয়ে লফটেড অফ ড্রাইভ খেলেন লিটন। কিন্তু বলের নিচে যেতে পারেননি। তাই মিড অফ ফিল্ডারের নাগালের বাইরে রাখতে পারেননি বল। মারে ছিল না তেমন জোর। একটু লাফিয়ে ক্যাচ নেন লঙ্কান অধিনায়ক দাসুন শানাকা। আগের তিন ম্যাচে লিটনের রান ছিল ৫, ৬ ও ২৯।
পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে বাংলাদেশের রান ১ উইকেটে ৪১ রান। ক্রিজে আসেন এরপর সাকিব আল হাসান। এসেই পরের ওভারে আসালাঙ্কাকে দুই বাউন্ডারি মেরে নিজেকে জানান দেন বিশ^সেরা অলরাউন্ডার। কিন্তু আফসোস, ঠিক তার পরের ওভারেই সাজঘরে ফেরেন সাকিব।
আগের দুই ম্যাচে দলের জয়ে ব্যাট হাতে বড় অবদান রাখা সাকিব আউট হয়ে যান ৭ বলে ১০ করে। চামিকা করুনারত্নের বলটি ছিল দারুণ লেংথে। সাকিব ফ্লিক আর পুল শটের মাঝামাঝি কিছু করতে চেষ্টা করেন। তবে বলটি তত শর্ট ছিল না। বল স্কিড করে উড়িয়ে দেয় বেলস। বোল্ড সাকিব। উল্লাসে মেতে ওঠেন করুনারত্নে। ৭.৪ ওভারে বাংলাদেশের রান ২ উইকেটে ৫৬।
রানের মধ্যে থাকা নাঈম এরপর দেখা পান ফিফটির। কুমারাকে মাথার ওপর দিয়ে চার মেওে পঞ্চম পূর্ণ করেন ৪৪ বলে, চারটি চারে। টি-টোয়েন্টিতে ২৫ ম্যাচে তার চতুর্থ ফিফটি এটি, চলতি বিশ্বকাপে তিন ম্যাচে দ্বিতীয়। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ফিফটি করেন নিজের প্রথম ম্যাচেই। ব্যক্তিগত ৪৬ রানে অবশ্য তিনি আউট হতে পারতেন। তবে সরাসরি থ্রোয়ে বল স্টাম্পে লাগাতে পারেননি আভিশকা ফার্নান্দো।
মুশফিকের সঙ্গে নাঈমের জুটিটা বেশ জমে যায়। এই জুটি দলকে নিয়ে যান ১২৯ রান পর্যন্ত। ব্যক্তিগত ৬২ রানে থামেন মোহাম্মদ নাঈম। ফার্নান্দোর বলে তার হাতেই ক্যাচ দেন তিনি। ৫২ বলের ইনিংসে নাইম হাকান ছয়টি চার। অবশ্য নেই কোন ছক্কা।
নাঈম বিদায় নিলেও রানের গতি কমেনি। জ্বলে উঠেন মুশফিক। দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে রানের গতি বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে টি টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ ফিফটির দেখাও পান তিনি। ৩২ বলে তিনি স্পর্শ করেন পঞ্চাশ। কিন্তু অপর প্রান্তে থাকা আফিফ হোসেন নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি। ৬ বলে মাত্র সাত রান করে তিনি রান আউট। তার ইনিংসে ছিল একটি চারের মার।
শেষের দিকে রানের গতি বেশ বাড়িয়েছেন মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহ। ৩৭ বলে ৫৭ রানে অপরাজিত থাকেন মুশফিক। তার ইনিংসে ছিল পাচটি চার ও দুটি ছক্কা। ৫ বলে দুই চারে ১০ রান করেন মাহমুদউল্লাহ। বল হাতে শ্রীলঙ্কার হয়ে একটি করে উইকেট নেন চামিকা, বিনুরা ও লাহিরু।