জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সামনের শীতে প্রচণ্ড ঠাণ্ডার সম্মুখীন হতে হবে বলে বিজ্ঞানীরা পূর্বাভাস দিচ্ছেন। তবে তা হবে অল্প সময়ের জন্য। অল্প সময় হলেও তখন প্রচণ্ড রকমের ঠাণ্ডা অনুভূত হবে। বাংলাদেশে ওই ঠাণ্ডার প্রভাবটা যত না বেশি হবে তার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি অনুভূত হবে এশিয়া, ইউরোপ ও উত্তর আরেমিকার দেশগুলোতে। এ ব্যাপারে মালদ্বীপের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ফুলব্রাইট ইউএস স্কলার অধ্যাপক ড. রাশেদ চৌধুরী বলেন, ‘লা নিনা ও দুর্বল পোলার ভরটেক্সের কারণে এবারের শীতকালে স্বল্প সময়ের জন্য হঠাৎ হঠাৎ খুব ঠাণ্ডা অনুভূত হতে পারে বাংলাদেশসহ এশীয় অঞ্চলের দেশগুলোতে। পৃথিবীর জলবায়ু পরির্তনের সাথে প্রক্রিয়াটি যুক্ত।’ পোলার ভরটেক্স বাধাপ্রাপ্ত হলে অথবা স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় চলতে না পারলে ইউরোপ ও এশিয়ার বেশির ভাগ অঞ্চলে ঠাণ্ডা বায়ু ছড়িয়ে পড়ে এবং চলতি বছর এ কারণে বাংলাদেশে শীতের কোনো কোনো সময় প্রচণ্ড ঠাণ্ডা পড়তে পারে। ঠিক এর বিপরীত কারণেই এশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরোপে স্বাভাবিক তাপমাত্রার চেয়ে বেশি গরম ছিল।
পোলার ভরটেক্স হলো- পৃথিবীর উভয় মেরু অঞ্চলের বিশাল অঞ্চলের লঘুচাপ এবং ঠাণ্ডা বায়ুর এলাকা। এটা সব সময় মেরু অঞ্চলের কাছাকাছি অবস্থান করে এবং গ্রীষ্মে দুর্বল হয়ে যায় ও শীতে শক্তিশালী হয়। মেরু অঞ্চলের কাছের বায়ুমণ্ডলে ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে ঘুরে মেরু অঞ্চলের পরিবেশ ঠাণ্ডা রাখে। অনেকসময় উত্তর গোলার্ধের ভরটেক্সের সম্প্রসারণ ঘটে এবং জেট স্ট্রিমের (খুবই ঠাণ্ডা বায়ুপ্রবাহ) সাথে ঠাণ্ডা বায়ু দক্ষিণ দিকে পাঠিয়ে থাকে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, শীতকালে ভরটেক্সের এই অবস্থা নিয়মিত ঘটে। ২০১৪, ১৯৮৯, ১৯৮৫, ১৯৮২ এবং ১৯৭৭ সালের ঠাণ্ডা মেরু অঞ্চলের ভরটেক্সের কারণে ঘটেছিল।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, এটা শুধু যুক্তরাষ্ট্র বা উত্তর আমেরিকা মহাদেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। পোলার ভরটেক্স ইউরোপ ও এশিয়া মহাদেশে ঠাণ্ডার প্রবাহ ঢেলে দিয়ে থাকে। পোলার ভরটেক্সের সম্প্রসারণ ঘটলে মেরু অঞ্চল থেকে দক্ষিণ দিকে প্রচণ্ড ঠাণ্ডার সম্প্রসারণ ঘটে, যা বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের জন্য অসহনীয় হয়ে ওঠে। পোলার ভরটেক্সের ব্যাপারে সতর্ক করার কিছু নেই তবে আগে থেকে বলতে পারলে মানুষ এ ব্যাপারে যথেষ্ট প্রস্তুতি নিতে পারে।
গত পাঁচ দশকে স্যাটেলাইট রেকর্ড দেখাচ্ছে, কিভাবে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং বৈশ্বিক তাপমাত্রা কিভাবে মেরু অঞ্চলের তাপমাত্রার ওপর গভীর প্রভাব ফেলছে। বিজ্ঞানীরা দীর্ঘ দিন থেকে বৈশ্বিক পরিবর্তনের ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছেন। গবেষণা প্রমাণ করেছে যে, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি উত্তর আমেরিকা ও এশিয়ার দেশগুলোতে কি প্রভাব ফেলতে যাচ্ছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, বেরেন্টস সাগর ও কারা সাগরের বরফ গলনে সাইবেরয়িাতে তুষারপাত বৃদ্ধি করেছে এবং উত্তর মেরুর ট্র্যাটোস্ফিয়ারে (ট্র্যাপোস্ফিয়ারের উপরে ১৮ থেকে ৫০ কিলোমিটার উচ্চতা পর্যন্ত অবস্থিত বায়ুস্তরকে স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার বলে। এই স্তরে ধূলিকণা, মেঘ প্রভৃতি না থাকায় এখানে ঝড়, বৃষ্টি, বজ্রপাত প্রভৃতি প্রাকৃতিক ঘটনাগুলো ঘটে না, একে শান্তমণ্ডলও বলা হয়। এ কারণে দ্রুত গতির বিমান এই অঞ্চলে চলাচল করে। অতিরিক্ত শক্তির স্থানান্তর হয় বলে বায়ুমণ্ডলের ঘূর্ণাবর্ত সৃষ্টি হয়ে থাকে। ফলত এই তাপ মেরু ভরটেক্সের দিকে টেনে নিয়ে যায় এবং উত্তর মেরুর ওই অঞ্চলের সাথে উত্তর আমেরিকার সংযোগ রয়েছে বলে সেখানে ওই অঞ্চলে প্রচণ্ড ঠাণ্ডা অনুভূত হয় এবং একই সাথে তা এশিয়া পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে।
মেসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির অধ্যাপক এবং একই ইনস্টিটিউটের এটমসফেরিক অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চের পরিচালক ড. জোদাহ কোহেন বলেন, আমরা জানি যখন তাপমাত্রার বিভিন্নতা বৃদ্ধি পায় তা মেরু অঞ্চলের ভরটেক্সের স্বাভাবিক গতিকে বাধা দেয় এবং যখন এই ভরটেক্স দুর্বল হয়ে যায় তাতে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঞ্চলে চরম আবহাওয়া বিরাজ করে।