স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল গতকাল বলেছেন, কুমিল্লায় পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন রাখা ব্যক্তি ইকবাল হোসেনকে ধরার সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে। মন্ত্রীর এ কথার পর রাতেই কক্সকাবাজারে সেই ইকবাল সন্দেহে একজনকে আটক করা হয়েছে।
গতকাল মন্ত্রী বলেছিলেন, কারও প্ররোচনায় ইকবাল এ ঘটনা ঘটিয়েছে। তাকে ধরতে পারলেই সবকিছু পরিষ্কার হবে। গতকাল সচিবালয়ে বলপ্রয়োগে বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের (রোহিঙ্গা) সমন্বয়, ব্যবস্থাপনা ও আইনশৃঙ্খলা সম্পর্কিত জাতীয় কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এসব কথা বলেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কুমিল্লার ঘটনাটি যে লোকটি করেছেন, তাকে ক্যামেরার মাধ্যমে চিহ্নিত করা হয়েছে। তিনি মাজারের সঙ্গের মসজিদে রাত ৩টার দিকে গিয়েছিলেন। একবার, দুইবার নয় তিনবার গিয়েছেন। ওই মসজিদের দুজন খাদেম ছিলেন, তাদের সঙ্গে ইকবাল কথা বলেছেন।
মন্ত্রী বলেন, আমাদের অভিজ্ঞ টিম দীর্ঘক্ষণ এটা বিশ্লেষণ করে সুনিশ্চিত হয়েছে যে, এই ব্যক্তিটি (ইকবাল) মসজিদ থেকে পবিত্র কোরআন শরীফ এনে রেখেছেন, সেটা তারই কর্ম। পরে তিনি প্রতিমার গদাটি সেখান থেকে কাঁধে করে নিয়ে এসেছেন। আসাদুজ্জামান খান বলেন, কাজটি পরিকল্পনামাফিক করা হয়েছে। দুই থেকে তিনবার যাওয়া- আসার মধ্যে তিনি এই কর্মটি শেষ করেছেন। কাজেই এটি নির্দেশিত হয়ে কিংবা কারও প্ররোচনা ছাড়া এটি করেছেন বলে মনে করেন না। তাকে ধরতে পারলে বাকি সব উদ্ধার হবে বলে মন্ত্রী বিশ্বাস করেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ইকবাল হোসেন মোবাইল ফোন ব্যবহার করছে না। যারা তাকে পাঠিয়েছিলেন, তারাও তাকে লুকিয়ে রাখতে পারেন। তবে বের করার সর্বোচ্চ চেষ্টা নেয়া হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে কুমিল্লার ঘটনার মূল হোতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে-সাংবাদিকদের এমন মন্তব্যের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, গ্রেপ্তারের কাজটি তো আমরা করছি, পুলিশ করছে। ভারপ্রাপ্ত পুলিশ প্রধানও এখানে আছেন। আমরা যেটুকু বলেছি, সেটুকুই আমরা জানি। এরপর যদি কেউ কিছু বলে থাকে হয়তো তিনি আরও তথ্য জেনে বলেছেন। কিন্তু আমাদের কাছে এর বেশি তথ্য নেই। রামু, নাসিরনগরসহ অন্যান্য স্থানে হিন্দুদের ঘরবাড়িতে হামলার ঘটনায় বিচার না হওয়ায় এমন ঘটনা ঘটছে বলে দাবি করছেন সমালোচকরা, এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীন। রামুর তদন্ত প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে, সেখানে সাক্ষী যাচ্ছে না। কী করবেন আপনি? নাসিরনগরে একটি মামলা বাকি রয়েছে, সবগুলোর চার্জশিট দেয়া হয়েছে। সেখানেও সাক্ষীরা যাচ্ছে না। ভোলায় দু’পক্ষই মিলেমিশে একটা সেটেলমেন্ট হয়েছে, সেখানে আর অসুবিধা হয়নি। তিনি বলেন, আমার মনে হয় নাসিরনগরে যেটুকু বাকি আছে, সেটুকুও শেষ হবে। আরেকটা ইনফরমেশন দেই। যাদের সাক্ষী করা হয়েছে, পুলিশ আমাদের এসে রিপোর্ট করে গেছে, সাক্ষীরা এখন সাক্ষ্য দিতে যায় না। সাক্ষীরা অনীহা প্রকাশ করছে। সে জন্য বিচার হয়তো দেরি হতে পারে। সেটাও একটা কারণ হতে পারে। বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীন, তারা তাদের জুরিসডিকশনে চলে। কোথাও এখন আতঙ্ক নেই দাবি করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা। উদ্দেশ্যমূলকভাবে ঘটিয়েছে। উদ্দেশ্যমূলকভাবে ঘটনার পর আকস্মিকভাবে যেগুলো হয়েছে সেগুলোই হয়েছে। এরপর এখন পরিবেশ সম্পূর্ণ শান্ত। সবাই যার যার কাজে চলে গেছে। সভায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান, মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউসসহ কমিটির অন্যান্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।