প্রবারণা বৌদ্ধদের অন্যতম একটি ধর্মীয় উৎসব। ” প্রবারণা “বা পালিতে “পবারণা”শব্দের আভিধানিক অর্থ -নিমন্ত্রন, আহ্বান, নিষেধ,ত্যাগ,শেষ, সমাপ্তি,ভিক্ষুদের বর্ষাবাস পরিসমাপ্তি, শিষ্টাচার, বিধি ইত্যাদি। আবার প্রবারণার অর্থ প্রকৃষ্ট রূপে বরণ করা, নিষেধ করা ইত্যাদি ও বোঝায়। অতএব, প্রবারণা বলতে অসত্য অন্যায়, অপরাধমূলক কাজ বর্জন করে সত্য,ন্যায় এবং কুশল কর্ম বরন কে বুঝায়।
প্রবারণা একটি পারষ্পরিক মিলন উৎসব ও বটে। পূর্বের সব ত্রুটি -বিচ্যুতি ক্ষমা করে পারষ্পরিক মিলন ঘটে প্রবারণার মাধ্যমে। আশ্বিন মাসের পূর্ণিমা তিথিতে প্রবারণা পালিত হয়।প্রবারনার পর ভিক্ষু সংঘকে তাদের অধীত জ্ঞান প্রচারের জন্য গ্রামের গঞ্জে যেতে হয়। এ সময় তারা কল্যানের বাণী প্রচার করেন যাতে দেব- মনুষ্য সহ সকল জীবের কল্যান সাধিত হয়।বুদ্ধ মতে, এ পূণ্যময় পূর্ণিমা তিথীতে গৌতম বুদ্ধ তাবতিংস স্বর্গে মাতৃদেবীকে অভিধর্ম দেশনার পর ভারতের সংকাশ্য নগরে অবতরণ করেন এবং মানবজাতির সুখ, শান্তি ও কল্যাণে দিকে দিকে স্বধর্ম প্রচারের জন্য ভিক্ষু সংঘকে নির্দেশ প্রদান করেন। একই সাথে এ দিনেই তাঁর তিন মাসের বর্ষাবাসের পরিসমাপ্তি ঘটে। বৌদ্ধরা অত্যন্ত আড়ম্বরের সাথে এ উৎসব পালন করে থাকে।
এ দিনে প্রতিটি বৌদ্ধ পরিবারে আয়োজন করা হয় নানা মুখরোচক খাদ্য -ভোজ্যের। সকাল বেলা আবাল,বৃদ্ধ,বনিতা সবাই নতুন পোশাক পরে স্হানীয় বিহারে গিয়ে পঞ্চশীল/অষ্টশীল ইত্যাদি ব্রত পালন করে। বিকেলে ধর্মীয় আলোচনা এবং সন্ধ্যায় কীর্তন সহকারে অত্যন্ত উৎসব মুখর পরিবেশে ওড়ানো হয় আকাশ প্রদীপ বা ফানুসবাতি। এ সময় জাতী-ধর্ম নির্বিশেষে সকল শ্রেণীর মানুষ সমবেত হয়ে উৎসবে মেতে ওঠে এবং এটি পরিনত হয় একটি অসাম্প্রদায়িক সার্বজনীন উৎসবে। সব বাদ- বিসংবাদ ভুলে গিয়ে শাশ্বত সত্যকে গ্রহন করে। পারষ্পরিক সহাবস্হান প্রবারণার মূল আদর্শ।এ আদর্শকে ধারন ও অনুশীলন ই দিতে পারে আমাদের একটি পরিচ্ছন্ন- অসাম্প্রদায়িক সমাজ। ( কৃতজ্ঞতা : ডঃ দীপংকর শ্রী জ্ঞান বড়ুয়া ও ডঃ সুকোমল বড়ুয়া)