যুগ্ম সচিব পদে চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে বড় আকারে পদোন্নতি দিতে যাচ্ছে সরকার। এ জন্য বিসিএস ২০তম ব্যাচ পর্যন্ত ৫৫৩ যোগ্য কর্মকর্তাকে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে তিন শতাধিক কর্মকর্তা যুগ্ম সচিব হবেন বলে আভাস। গত ৩১ আগস্ট সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ডের (এসএসবি) প্রথম বৈঠকের মধ্য দিয়ে পদোন্নতির প্রক্রিয়া শুরু হয়। বৈঠক হয়েছে গতকাল রবিবারও। তবে আরও দু-একটি বৈঠকের পর তালিকা চূড়ান্ত করা হবে বলে জানা গেছে। এর পর প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন পেলেই প্রজ্ঞাপন জারি করবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া ছয় দপ্তরে শূন্যপদে চলতি মাসেই নতুন সচিব নিয়োগ হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানিয়েছে।
এ বিষয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন আমাদের সময়কে বলেন, ‘পদোন্নতির বিষয়টি চলমান প্রক্রিয়া। প্রশাসনে যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি দিতে কাজ চলছে। তবে কতজন কর্মকর্তা পদোন্নতি পাবেন, তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। এর জন্য যোগ্য কর্মকর্তাদের তালিকা এসএসবি প্রস্তুত করে। তারাই পদোন্নতিযোগ্য কর্মকর্তাদের বিবেচনায় নেয়।’
এদিকে অবসর ও বদলিজনিত কারণে পাঁচ দপ্তরে কয়েকদিন ধরেই সচিব পদ শূন্য। এগুলো হলো- পরিকল্পনা বিভাগ, পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ, ভূমি সংস্কার বোর্ড, ভূমি আপিল বোর্ড এবং ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়। শূন্য এসব পদে শিগগিরই সচিব নিয়োগ দেবে সরকার। এ ছাড়া আগামী ২৫ অক্টোবর অবসর-উত্তর ছুটিতে (পিআরএল) যাচ্ছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ সচিব রওনক মাহমুদ। ফলে চলতি মাসে অতিরিক্ত সচিব থেকে সচিব হচ্ছেন ছয় কর্মকর্তা। বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ১১তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে সচিব করতে ফিটলিস্ট তৈরি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া তালিকায় ১০ম ব্যাচের একজন কর্মকর্তাও রয়েছেন বলে জানা গেছে।
সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে, এবারের পদোন্নতিতে উপসচিব পদমর্যাদার ৫৫৩ যোগ্য কর্মকর্তাকে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ২০তম ব্যাচ পর্যন্ত (লেফট আউটসহ) ৩২৪ কর্মকর্তা রয়েছেন। প্রশাসনের সঙ্গে একীভূত হয়ে যাওয়া ইকোনমিক ক্যাডারের কর্মকর্তা রয়েছেন ৩৮ জন এবং অন্যান্য ক্যাডারের ১৯১ জন। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, বিসিএস ২০তম ব্যাচে যোগ দিয়েছিলেন ২৯৭ জন। তাদের মধ্যে ২৬৮ জনই উপসচিব হয়েছেন। এর মধ্যে যুগ্ম সচিব হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছেন ২৪৮ কর্মকর্তা। দুর্নীতিমুক্ত-পরিচ্ছন্ন ইমেজের কর্মকর্তাদের পদোন্নতিতে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। তবে পদোন্নতি বৈতরণী পার হতে অনেক অযোগ্য কর্মকর্তাও জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন বলে খবর।
কর্মকর্তারা আরও জানান, উপসচিব থেকে যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি দিতে ইতোমধ্যে কয়েকটি বৈঠক করেছে এসএসবি। সেখানে কর্মকর্তাদের কর্মজীবনের সমস্ত নথিপত্র পর্যালোচনা করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় নম্বর, চাকরিজীবনের শৃঙ্খলা, দুর্নীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা, কিংবা সরকারবিরোধী দলের সঙ্গে কারও সংশ্লিষ্টতা রয়েছে কিনা- তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ফলে পদোন্নতিপ্রত্যাশী কর্মকর্তাদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাও ভর করেছে। অবশ্য যেসব কর্মকর্তা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগসহ গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে দায়িত্ব পালন করছেন তারা নির্ভার রয়েছেন। আবার যারা ব্যাচভিত্তিক সংগঠনের প্রভাবশালী নেতা কিংবা নেতাদের সঙ্গে যাদের সুসম্পর্ক রয়েছে, তারাও আছেন বেশ ফুরফুরে মেজাজে।
অনেকে দৌড়াঝাঁপ করে নিজেদের পদোন্নতি নিশ্চিতের চেষ্টা করছেন। কোনো কোনো কর্মকর্তা আবার এসএসবির সদস্যদের সঙ্গেও গোপনে দেখা-সাক্ষাৎ করছেন বলে জানা গেছে। প্রশাসনে এও গুঞ্জন রয়েছে, এসএসবি সদস্যদের সঙ্গে ভালো পরিচয় ও সম্পর্ক থাকলে পদোন্নতির সময় সুবিধা মেলে। অবশ্য এ বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কেএম আলী আজম আমাদের সময়কে বলেন, ‘পদোন্নতি দেওয়ার একটি নির্দিষ্ট নীতিমালা আছে। আমরা নীতিমালার ভেতরে থেকেই পদোন্নতি দিচ্ছি। এর বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’
সূত্র জানায়, অনেক এমপি কিংবা মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী নিজেদের পছন্দের কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দিতে জনপ্রশাসন সচিব বরাবর ডিও (আধা সরকারিপত্র) লেটার দিচ্ছেন। এ নিয়ে প্রশাসনে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চাউর হয়েছে। কেউ কেউ বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবে নিচ্ছেন; আবার কেউ কোনোভাবেই সমর্থন করতে পারছেন না। সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার মনে করেন, সরকারি কর্মচারীদের পদোন্নতি দিতে কোনো মন্ত্রী কিংবা এমপি তদবির করতে পারেন না। সরকারি বিধিতে তদবির নিষিদ্ধ। এর পরও যারা তদবির করেন, তারা গুরুতর অন্যায় করেন বলে মনে করেন সাবেক এই মন্ত্রিপরিষদ সচিব।