অবিশ্বাস্য সব অফার দিয়ে আলোচনায় আসা ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আলিশা মার্ট গ্রাহকের পণ্য ডেলিভারি নিয়ে টালবাহানা শুরু করেছে। চলতি বছরের ১লা জানুয়ারিতে অনলাইনে পণ্য বিক্রির কার্যক্রম শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। পণ্য দেয়ার নাম করে তারা সংগ্রহ করেছে গ্রাহকের কোটি কোটি টাকা। কিন্তু, অনেক গ্রাহককে তারা পণ্য বুঝিয়ে দেয়নি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ই-কমার্স-এর লেনদেনের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম উঠে আসার পর আলিশা মার্টে পণ্যের জন্য টাকা প্রদানকারী গ্রাহকেরা তাদের টাকা ফেরত নেয়ার জন্য ঢাকার বনানীসহ একাধিক
অফিসে ভিড় করছেন। কিন্তু, তাদের টাকা ফেরত দেয়া হচ্ছে না। পণ্যের অর্ধেক দামের অফার দিয়ে গ্রাহককে ফাঁদে ফেলে প্রতিষ্ঠানটি কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য করছে। ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে আলিশা মার্ট এ ক্যাশ অন ডেলিভারি (সিওডি) বা পণ্য হাতে পাওয়ার পর পেমেন্ট পদ্ধতি নেই।
ফলে সেখানে পণ্য ক্রয় করতে হলে অবশ্যই আগে থেকে অনলাইনে পেমেন্ট দিতে হবে। পেমেন্ট দেয়ার কয়েকমাস পর পণ্য দেয়ার আশ্বাস দেয়া হয় গ্রাহকদের। কিন্তু, গ্রাহকেরা যথাসময়ে পণ্য ডেলিভারি পান না। আলিশা মার্ট প্রতিষ্ঠানটি দাবি করেছে যে, মোট ৩২ হাজার পণ্যের মধ্যে কেবলমাত্র মোটরসাইকেলে উচ্চ ডিসকাউন্ট দেয়া হয়। তবে অন্য পণ্য থেকে তারা লাভ করেছেন বেশি। তবে তাদের এই তথ্যে গরমিল পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বিষয়টি তদন্ত চলছে। আলিশা মার্টের লেনদেনে অস্বচ্ছতা থাকার কারণে গত ১৭ই জুলাই ওই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বিকাশ কর্তৃপক্ষ লেনদেন বন্ধ করেছে। এ ছাড়াও গত ২২শে সেপ্টেম্বর বাণিজ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন যে, আলিশা মার্টের পণ্য লেনদেনের বিষয়টিতে স্বচ্ছতা রয়েছে কিনা তার খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। এ ছাড়াও গত ৩১শে আগস্ট রাজধানীর বনানীতে আলিশা মার্টের বনানী অফিসে ৫২ লাখ টাকার ভ্যাট ফাঁকি উদ্ঘাটন করেছে ভ্যাট গোয়েন্দারা। যা পরে ওই টাকা আদায় করেছে ভ্যাট গোয়েন্দা কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে সিআইডি’র অতিরিক্ত ডিআইজি খন্দকার রফিকুল ইসলাম মানবজমিনকে জানান, ‘কোনো ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ এলে আমরা তাদের আইনের আওতায় আনবো।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ১লা জানুয়ারি রাজধানীর একটি হোটেলে আলিশা মার্টের অনলাইন শপিংয়ের যাত্রা শুরু হয়। আলিশা মার্টের বর্তমানে ১৯টি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান রয়েছে। কমমূল্যের কারণে ওই প্রতিষ্ঠানে লোকজন হুমড়ি খেয়ে পড়ছে। কখনো কখনো পণ্যের মূল দামের সঙ্গে প্রায় ৭৫ ভাগ ছাড়ের ঘোষণা থাকতো। যেসব গ্রাহকেরা অর্থ পাবেন তারা পড়েছেন বিপাকে। প্রতিষ্ঠানটি ব্যবসার শুরুর দিকে প্রথমে কিছু গ্রাহকদের পণ্য ঠিকমতো বুঝিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু, পণ্য ডেলিভারি নিয়ে তারা টালবাহানা শুরু করেছে।
সূত্র জানায়, অবিশ্বাস্য ডিসকাউন্ট, আকর্ষণীয় মেম্বারশিপ প্যাকেজ, বাকিতে গ্রোসারি পণ্য কেনার সুবিধা ও ফ্রি-ল্যান্সারদের কাজের সুযোগের অফার দিয়ে প্রতারণার অভিযোগ পাওয়া গেছে। যাদের পণ্য ডেলিভারি দেয়া হয় না তাদের সরাসরি টাকা ফেরত দেয়া হয় না। পণ্য অর্ডার করে টাকা পরিশোধ করার পরেও সেটা নির্ধারিত সময়ে গ্রাহক না পাওয়া, প্রসেসিংয়ের নামে দিনের পর দিন পণ্য আটকে রাখা, হেল্প লাইনে কল করে অভিযোগ করলে সেটা আমলে না নিয়ে তার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নেয়া, সাধারণ গ্রাহকদের এমন নানান ধরনের হয়রানি আর দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন না করার অভিযোগ রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে।
সুমন নামে এক যুবক অভিযোগ করে জানান, আলিশা মার্টের পেইজে ৫০% অফারে একটা পণ্য অর্ডার করি। সব মিলিয়ে ৩ মাস অতিবাহিত হয়েছে কিন্তু, পণ্যটি ফেরত পায়নি। তাদের ফোনে কল দিয়ে পাওয়া যায় না। এ ছাড়াও ই-মেইলেও বিষয়টি জানলেও তারা কোনো সাড়া দেয়নি বলে অভিযোগ করেন। আজিজ নামে আরেকজন তরুণ জানান, গত ২ মাস আগে তিনি আলিশা মার্টে একটি পণ্য কেনার জন্য টাকা দেন। কিন্তু, তিনি এখনো পণ্য বুঝে পাননি।
এ ছাড়াও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শত শত ব্যক্তি আলিশা মার্ট থেকে তাদের পণ্য না পাওয়ার বিষয়টি জানিয়ে পোস্ট দিচ্ছেন। যারা মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে পণ্য কেনার অর্ডার দিয়েছেন তারা পথে বসার উপক্রম হয়েছে।
সূত্র জানায়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রতিষ্ঠানটির অর্থের উৎস এবং গ্রাহকের অর্থ তারা কোথায় রেখেছে তা খুঁজছে। প্রতিষ্ঠানটির একাধিক ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট আছে। সেই অ্যাকাউন্টগুলোতে কতো টাকা রয়েছে এবং কতো টাকা লেনদেন হয়েছে তথ্য সংগ্রহ করছে পুলিশ।
এ বিষয়ে চেয়ারম্যান মো. মঞ্জুর আলম শিকদারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি। এ ছাড়াও প্রতিষ্ঠানের একাধিক কর্মকর্তার কাছে বক্তব্য চাওয়া হলেও তারা বক্তব্য দিতে রাজি হননি। বক্তব্য নেয়ার জন্য কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলার চেষ্টা করা হলে তাদের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।