বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের মহানায়ক মান্নার না ফেরার দেশে চলে যাওয়ার সাত বছর পূর্ণ হলো আজ। ২০০৮ সালে এই দিনে চলচ্চিত্র শিল্পসহ সমগ্র দেশবাসীকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে দিয়ে মান্না চলে যান সুন্দর এই পৃথিবীর মায়া ছেড়ে। ওই দিন মান্নার অকাল ও আকস্মিক মৃত্যু ছিল বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো। যে মানুষটি রাত অবধি শুটিং করলেন, প্রিয় কর্মস্থল এফডিসি থেকে হাসিমুখে বিদায় নিলেন, সকালবেলা জানা গেল তিনি হাসপাতালে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। বিস্মিত হতবাক সবাই। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে লাগলো উদ্বেগ উৎকণ্ঠা। লাইফ সাপোর্টে রয়েছেন মান্না- এমন সংবাদে যে যেভাবে পারলেন ছুটলেন ইউনাইটেড হাসপাতালে। দুপুরবেলা সবাইকে শোকে পাথর করে চিকিৎসকরা জানালেন, মান্না নেই, চলে গেলেন সব বাঁধন ছিঁড়ে। ফিরবেন না আর কোন দিনই। এমন দুঃসংবাদের জন্য কেউ প্রস্তুত ছিলেন না। সবার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো। তারপরের ঘটনাগুলো আজও সবার চোখের সামনে জ্বল জ্বল করে। প্রিয় নায়ক মান্নাকে শেষবারের মতো একনজর দেখার জন্য ভক্তদের সে কি উন্মাদনা। এফডিসিজুড়ে আপনজনদের আহাজারি। বিস্ময়ে হতবাক পুরো জাতি। সবার চোখেমুখে অভিব্যক্তি একটাই, সব শেষ। মান্নার চলে যাওয়ায় চলচ্চিত্রের সব শেষ না হয়ে গেলেও এখন সব শেষ হওয়ার পথে। এক শাকিব খান একা টেনে নিয়ে যাচ্ছেন। তাকে সমর্থন দেয়ার মতো কেউ নেই। তাই তো আজও চলচ্চিত্রের শুটিং ডাবিং থেকে শুরু করে নেতৃত্ব আন্দোলন যে কোন ভাল বিষয়েই উঠে আসে মান্নার নাম। আজও সবাই মান্নার অভাবটা প্রতিটি মুহূর্তে অনুভব করেন। মান্নাবিহীন ঢাকাই সিনেমা যেন অনেকটাই অসার। মান্নাবিহীন যে কোন আন্দোলনই যেন গতিহারা, মান্নাবিহীন পুরো চলচ্চিত্রটাই যেন কেমন যেন ছন্নছাড়া। তাই তো শুটিং থেকে শুরু করে ব্যবসা এমনকি আন্দোলনের সময়ও মান্নার কথা সবার মনে পড়ে। সবাই অকপটে স্বীকার করেন, মান্না থাকলে এমনটি হতো, কিংবা মান্না থাকলে এমনটি হতো না। কারণ, মান্না শুধু একজন নায়ক কিংবা অভিনয় শিল্পীই ছিলেন না। তিনি ছিলেন আপাদমস্তক নিবেদিতপ্রাণ একজন সিনেমাপ্রেমী। যার কাজে কর্মে শয়নে স্বপ্নে ভাল চিন্তায় থাকতো শুধুই চলচ্চিত্র। কি করলে চলচ্চিত্রের ভাল হবে, মৃত্যুর আগে পর্যন্ত মান্না কেবল এটাই ভেবেছেন। দিনরাত শুটিং করার পর যেটুকু সময় পেয়েছেন, আরাম আয়েশ বিশ্রাম ত্যাগ করে মান্না অনেক বেশি সময় চলচ্চিত্রের জন্যই ব্যয় করেছেন। তার জীবনে চলচ্চিত্র ছাড়া আর কোন কিছুই ছিল না। মান্নার মতো একজন আপাদমস্তক চলচ্চিত্রপ্রেমী, একজন নিবেদিতপ্রাণ কর্মীকে হারিয়ে বিগত ৭ বছর ধরে চলচ্চিত্র শিল্প ধুঁকতে ধুঁকতে শেষ পর্যায়ে চলে এসেছে। পর্দায় প্রতিবাদী নায়ক মান্না ছিলেন বাস্তবেও একটি প্রতিবাদী চরিত্র। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করাই ছিল তার স্বভাব। প্রতিবাদই তাকে দর্শক মনে যেমন স্থায়ী আসন দিয়েছে তেমনি চলচ্চিত্র শিল্পেও অদ্বিতীয় করে রেখেছে। দর্শকদের ভালবাসা পাওয়া একজন শিল্পীর জন্য যা সবচেয়ে বড় পাওয়া। মান্না এই ভালবাসা এত বেশি পেয়েছেন যা হিসাব করে বলা যাবে না। চলচ্চিত্র শিল্পের সর্বস্তরের মানুষদের মনে আলাদাভাবে জায়গা করে আছেন মান্না। তাই তো সাত বছরেও মান্নাকে কেউই ভুলতে পারেননি। কোনদিন পারবেন বলেও মনে করেন না ঘনিষ্ঠজনরা। তাই তো সপ্তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে সবার মধ্যেই বেজে উঠেছে শ্যামল মিত্রের কালজয়ী গান- ‘তোমার সমাধি ফুলে ফুলে ঢাকা, কে বলে আজ তুমি নাই, তুমি আছো মন বলে তাই।’
শিল্পী সমিতিতে দোয়া মাহফিল
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মান্নার মৃত্যুবার্ষিকীর দিনে কোরআনখানি ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছে শিল্পী সমিতি। এফডিসিস্থ আর্টিস্ট স্ট্যাডি রুমে আয়োজিত দোয়া মাহফিলে (বাদ আসর) উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মান্নার মৃত্যুবার্ষিকীর দিনে কোরআনখানি ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছে শিল্পী সমিতি। এফডিসিস্থ আর্টিস্ট স্ট্যাডি রুমে আয়োজিত দোয়া মাহফিলে (বাদ আসর) উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।