ঢাকার উত্তরায় ক্ষমতার অপব্যবহারপূর্বক প্লট বরাদ্দ ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের জন্য সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বৃহস্পতিবার দুদকের উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান কমিশনের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১ এ মামলাটি দায়ের করেন। এ ব্যাপারে দুদকের মুখপাত্র আরিফ সাদেক গণমাধ্যমকে বলেন, সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার (এসকে সিনহা) বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার করে সরকারি প্লট বরাদ্দ নেয়া ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১ এর উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার খান বাদী হয়ে এই মামলা দায়ের করেছেন।
দুদক সূত্র জানায়, সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা তার নিজ নামে ইতিপূর্বে রাজউক থেকে উত্তরা আবাসিক এলাকায় একটি প্লট বরাদ্দপ্রাপ্ত হন। পরবর্তীতে তিনি অসৎ উদ্দেশ্যে নিজ ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধ প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে প্রতারণার আশ্রয়ে তার ভাই নরেন্দ্র কুমার সিনহার নামে রাজউক পূর্বাচল প্রকল্পে প্লটের জন্য আবেদন করান এবং ৩ কাঠার একটি প্লট বরাদ্দ করান। অতঃপর তিনি তার ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে উক্ত তিন কাঠার প্লটটিকে ৫ কাঠার প্লটে উন্নীত করান। অতঃপর পুনরায় নিজ ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে পূর্বাচল থেকে প্লট স্থানান্তর করে উত্তরার সেক্টর-৪, রোড নং-৬, বাড়ি নং-১/এ প্লটটি রাজউক থেকে অনুমোদন করান। সুরেন্দ্র কুমার সিনহা নিজেই উক্ত প্লটের যাবতীয় অর্থ মোট ৭৫ লাখ টাকা পরিশোধ করেন। পরবর্তীতে উক্ত প্লটে ৯ তলা ভবন নির্মাণ করেন।
তিনি আরও জানান, অনুসন্ধানকালে নিরপেক্ষ প্রকৌশলীর প্রতিবেদন অনুযায়ী উত্তরা আবাসিক এলাকায় সেক্টর-৪, রোড নং-৬, বাড়ি নং-১/এ’ ভবনের নির্মাণ ব্যয় ৬ কোটি একত্রিশ লাখ পাঁচ হাজার আট শত পঁচাশি টাকা (৬,৩১,০৫,৮৬৫)।
এ ছাড়া, উক্ত প্লটের মূল্য হিসেবে রাজউকে পরিশোধ করা হয় পঁচাত্তর লাখ টাকা (৭৫,০০,০০০)। সে হিসাবে প্লটের মূল্যসহ ভবন নির্মাণে মোট ব্যয় (৬,৩১,০৫,৮৬৫ + ৭৫,০০,০০০) = ৭,০৬,০৫,৮৬৫ টাকা। উক্ত সম্পদের মধ্যে কেবল জনৈক খালেদা চৌধুরীর নিকট থেকে ফ্ল্যাট বিক্রির অগ্রিম বাবদ ৭০ লাখ টাকা টাকা প্রাপ্ত হয়েছেন। উক্ত টাকা বাদে অবশিষ্ট ৬,৩৬,০৫,৮৬৫/- টাকা এবং জনাব শঙ্খজিৎ সিংহের নামীয় হিসাবে স্থায়ী ও নগদে জমা আছে ৭৮ লাখ টাকা। অর্থাৎ (৬,৩৬,০৫,৮৬৫+ ৭৮,০০,০০০)= ৭,১৪,০৫,৮৬৫ টাকার (সাত কোটি চৌদ্দ লাখ পাঁচ হাজার আটশত পঁয়ষট্টি টাকা) সম্পদ সুরেন্দ্র কুমার সিনহা অসৎ উদ্দেশ্যে নিজ ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রতারণার মাধ্যমে নিজ ভাই ও নিজের আত্মীয়ের নামে বেনামে অর্জন করেছেন। যার কোনো বৈধ উৎস নেই বা তার জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ ও উক্ত সম্পদ অর্জনের ক্ষেত্রে অবৈধ পন্থায় অর্জিত অর্থ বিভিন্ন ব্যক্তির হিসাবের মাধ্যমে স্থানান্তর, রূপান্তর ও হস্তান্তর করে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭ (১) ধারা; ও ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারা এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪ (২), (৩) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করায় কমিশন কর্তৃক তার বিরুদ্ধে উক্ত ধারায় মামলা রুজুর অনুমোদন দেন এবং দুদকের উপ-পরিচালক মো. গুলশান আনোয়ার প্রধান তার বিরুদ্ধে একটি মামলা রুজু করেন।