ঢাকা: সাম্প্রতিক সময়ে গাজীপুর মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পদাক ও গাসিক মেয়র এ্যাড. জাহাঙ্গীর আলমকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোলপার চলছে। একটি অডিওতে জাহাঙ্গীর আলমের কন্ঠ দাবি করে বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ সহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে অবমাননার অভিযোগ বিদ্যমান। বাংলাদেশের সংবিধান, আইন ও আওয়ামীলীগের গঠনতন্ত্র পরিপন্থি ওই অডিও বক্তব্যের প্রেক্ষিতে রাজপথে জ্বালাও পোড়াও আন্দোলন চলমান । অডিওকে কেন্দ্র করে গাজীপুর মহানগর আওয়ামীলীগে মেয়র বিরোধী পক্ষ রাজপথে আন্দোলন করছে। ঝাড়ু মিছিল, বিক্ষোভ মিছিল কুশপুত্তলিকা দাহ ও ব্যানারে অগ্নি সংযোগ করে রাজপথে ব্যানারে পশ্রাব পর্যন্ত করা হয়েছে। এই অডিওকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট জটিলতা সম্পর্কে মেয়র ও মেয়র পন্থিরা বলছেন, মেয়রের মিথ্যা অডিও। মেয়র এমন বক্তব্য দেননি। মেয়র বিরোধীরা বলছেন, এটি মেয়রের বক্তব্য। এই প্রেক্ষিতে গত ৩ অক্টোবর ২০২১ জাহাঙ্গীর আলমকে ১৫ দিনের মধ্যে ব্যাখ্যা দিতে বলেছে কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগ।
চিঠিতে বলা হয়, অতি সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত ও প্রকাশিত আপনার বক্তব্য বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ এর সুনাম ও ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করেছে। যা বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ এর স্বার্থ পরিপন্থি কর্মকান্ড ও সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের শামিল। এবং সংগঠনের গঠনতন্ত্রের ৪৭ ধারা মোতাবেক শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
পর্যালোচনায় দেখা যায়, চিঠির কোথাও অডিওর কথা উল্লেখ নেই। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত ও প্রচারিত জাহাঙ্গীর আলমের কোন বক্তব্য, উল্লেখিত চিঠির প্রেক্ষিতে সৃষ্ট আলামতের অস্তিত্ব নেই। চিঠিতে সুস্পষ্টভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জাহাঙ্গীর আলম গঠনতন্ত্র বিরোধী কোন বক্তব্য দিয়েছেন কিনা জানতে চাওয়া হয়। দৃশ্যমান যে, নালিশি অডিও ব্যাতিত সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জাহাঙ্গীর আলমের কোন বক্তব্য অভিযোগ আকারে উত্থাপিত হয়নি। চিঠির ভাষা বলছে, অডিও নালিশি বিষয় নয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জাহাঙ্গীর আলম দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার মত কিছু বলেছেন কিনা তাই জানতে চাওয়া হয়।
প্রকৃত অর্থে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জাহাঙ্গীর আলমের কোন বক্তব্য নিয়ে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়নি। নালিশি অডিওকে কেন্দ্র করে শৃঙ্খলা ভঙ্গ হয়েছে। এক্ষেত্রে চিঠির ভাষায় অডিও উল্লেখ না থাকায় চিঠির ব্যাখ্যা ইতোমধ্যে জাহাঙ্গীর আলমের বক্তব্যে প্রকাশি হয়ে গেছে। জাহাঙ্গীর আলম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ এর সুনাম ও ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করে কোন বক্তব্য দেননি মর্মে একাধিকবার বলেছেন।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, যে অডিওকে ঘিরে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে, সেই অডিও সম্পর্কে শোকজ চিঠিতে কিছু বলা নেই। মিমাংসিত বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়ে অমিমাংসিত বিষয় নিস্পত্তি করা যায়না। এ ধরণের চিঠি প্রকৃত সমস্যা সমাধানে কতটুকু সহায়ক হবে তা নিয়ে জল্পনা কল্পনা রয়েই গেল। বরং চিঠির ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও রাজপথে সংবিধান আইন ও আওয়ামীলীগ এর সুনাম ও ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হওয়ার যে সকল ঘটনা ঘটেছে, সেগুলো উত্থাপন করে দলীয় গঠনতন্ত্র ও আইন অনুসারে ব্যবস্থা গ্রহণের সুযোগ তৈরি হয়েছে। কারণ বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় থাকাকালীন সময় বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধকে সম্মান ক্ষুন্নের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য রাজপথে আন্দোলন আওয়ামীলীগ এর জন্য ভালো সংবাদ নয়। আওয়ামীলীগ বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ ও মুক্তিযোদ্ধের আদর্শে গড়া একটি সংগঠন।
এমতবস্থায় গাজীপুর মহানগর আওয়ামীলীগ এর আভ্যন্তরীণ বিরোধ নিস্পত্তিতে দলের কেন্দ্রীয় চিঠি ও চিঠির জবাব, কোন পক্ষের উপর ঢলে পড়ে তা সময়েই বলে দিবে। তবে আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মীরা চায়, আভ্যন্তরীন বিরোধ নিস্পত্তি হয়ে দল ঐক্যবদ্ধ হবে এমন চিঠিই বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ দিয়েছে।