গাজীপুর: হাত থেকে ফেলে দিলে বিস্ফোরিত হবে এই সব কাজে যে সকল শিশুদের ব্যবহার করা হয় কেউ এক বেলা খাবার দিলে যাদের ভাল খাবার কপালে জোটে তাদের একত্র করে লেখাপড়া করানো হচ্ছে। ওই সকল শিশুদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতাও। স্কুলের পোষাক ভাগ্যে না জোটলেও ময়লা আবজনাপূর্ন পোষাকেই তারা মাটির উপর পায়ের গোড়ালী দিয়ে জোরে শব্দ করে জাতীয় পতাকাকে সালাম জানাচ্ছে। রাষ্ট্রীয় সালাম।
সোমবার(১৬ জানুয়ারী) সকাল থেকে বিকাল পযন্ত গাজীপুর মহানগরের হাড়িনাল লেবু বাগান এলাকায় বিলের দ্বারে পরিত্যক্ত একটি খালি জায়গায় অনুষ্ঠিত হলো ব্যাক্রিমধমী ওই আয়োজন।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, হাড়িনাল এলাকায় বিলের দ্বারে একটি পরিত্যক্ত জায়গায় চলছে পথ শিশুদের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা। একটি সামিয়ানা টানিয়ে মঞ্চ করে চলছে অনুষ্ঠানের কাজ। শিশুদের মনোরঞ্জনের জন্য মঞ্চের সামনে একটু লাল কাপেট বিছিয়ে তৈরী করা হয়েছে পুরস্কার বিতরণের মঞ্চ। মঞ্চের সামনে খলি জায়গার চারিদিকে সূতা দিয়ে সীমানা তৈরী করে করা হয়েছে খেলার মাঠ। প্রকৃতি ঘেরা মাঠের চারিদিকে রঙিন কাগজে সাজানো ভ্যানুতে বাশেঁর খুঁটির উপরে উড়ছে জাতীয় পতাকা। ক্রীড়ানুষ্ঠানের শুরুতে অনুষ্ঠিত কুচকাওয়াজে সুবিধা বঞ্চিত ও অসহায় শিশু কিশোর কিশোরী শিক্ষাথীরা জাতীয় পতাকাকে জানিয়েছে রাষ্ট্রীয় সালাম। স্কুলের পোষাক ভাগ্যে না জোটলেও ময়লা আবজনাপূন পোষাকেই তারা মাটির উপর পায়ের গোড়ালী দিয়ে জোরে শব্দ করে জাতীয় পতাকাকে সালাম জানাচ্ছে। রাষ্ট্রীয় সালাম।
ব্যাতিক্রম দেখা গেল ক্রীড়ানুষ্ঠানের অতিথি বিন্যাসেও। গরীব ও অসহায় শিশুদের ময়লা কাপড়ে রুগ্ন চেহারার সালাম নিতে নারাজ রাজনৈতিক কোন ব্যাক্তি অতিথি হয়নি। প্রতিবেদন তৈরী করার জন্য অনুষ্ঠানে উপস্থিত হওয়ার কারণে প্রধান অতিথি ছিলেন গাজীপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এ কে এম রিপন আনসারী।
ওই ফাউন্ডেশন স্কুলের হেড অব অপারেশন ডাঃ বোরহান উদ্দিন অরণ্যের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে পুরস্কার বিতরণ করেন বাংলাদেশ নদী বাঁচাও আন্দোলনের কেন্দ্রিয় সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেন ও চেতনা গাজীপুর নামে একটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মনোয়ার হোসেন রনি।
ওই ফাউন্ডেশনের হেড অব অপারেশন ডাঃ বোরহান উদ্দিন অরণ্য জানালেন, ২০১২ সালে কানাডায় পিএইচডিতে অধ্যয়নরত যুবক ফিরোজ আলম প্রতিষ্ঠিত করেছেন ওই ফাউন্ডেশন। এই সংস্থায় সুবিধা বঞ্চিত শিশু কিশোর ও কিশোরীদের লেখা পড়া করানো হয়। সকাল বিকাল দুই শিফটে চলে অধ্যয়ন। ফউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ফিরোজ আলম। ভাইস চেয়ারম্যান রুপা রেজিনা খান।
ওই ফাউন্ডেশন স্কুলের বতমানে ৪টি শাখা রয়েছে। গাজীপুর মহানগরের হাড়িনাল লেবু বাগান এলাকায় একটি শাখা। এই শাখায় ১৩৯জন শিশু সকালের শিফটে লেখা পড়া করে। বিকালে ৬০জন কিশোর ও কিশোরী শিক্ষাথী অধ্যয়ন করছে।
তিনি আরো জানান, ওই ফাউন্ডেশনের অধীন স্কুলের ৪টি শাখা রয়েছে। ৪টি শাখার মধ্যে রাজধানী ঢাকার বাড্ডায় ৪০ জন, কালাচাঁদপুরে ৮০ জন ও পাবনা জেলার সুজানগর থানার শ্রীরামপুরে ১২০জন শিশু লেখা পড়া শিখছে।
গাজীপুরের হাড়িনালে অবস্থিত ওই ফাউন্ডেশন স্কুলের অধ্যক্ষ নাসিমা বেগম জানান, সরকারী সিলেবাস অনুযায়ী রীতিমত পাঠদানের পাশাপাশি শিক্ষাথীদের হাতে কলমে শিক্ষা দেয়া হচ্ছে। আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে তাদের পরিচয় করানো হচ্ছে। বাংলা ও ইংরেজীতে কথোপকথনের বিষয়টির উপর গুরুত্ব দেয়া হয় ক্লাশে। নিয়মিত খেলাধূলা ও বিনোদনের জন্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি ক্লাশের বাইরে আবহমান বাংলার ইতিহাস ঐতিহ্যৃ সম্পকে সম্মক ধারণা দিতে মনোলোভা প্রকৃতির বিভিন্ন স্পটে নিয়ে যাওয়া হয় শিক্ষাথীদের।
অধ্যক্ষা নাসিমা আরো বলেন, পড়ানোর ক্ষেত্রে বই খাতা কলম সহ শিক্ষার যাবতীয় উপকরণ বিনা মূল্যে সরবরাহ করা হয়। আথিক কারণে শিক্ষাথীদের টিফিনের ব্যবস্থা করা কষ্টকর হয়ে যায়। মাঝে মধ্যে সমাজের বিত্তবান মানুষেরা খাবার নিয়ে আসলে শিশুদের ভগ্যে ভাল খাবার জোটে।
স্কুল কতৃপক্ষের অভিমত, ঝড়ে পড়া শিশু কিশোর ও কিশোরীদের লেখাপড়ার ক্ষেত্রে ভাল খাবারা দাবার ও পোষাক পরিচ্ছেদ খুবই জরুরী। সরকার, বিভিন্ন সংস্থা ও সমাজের বিত্তবান শ্রেনীর লোকজন যদি একটু সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন তবে ভাগ্যাহত এই সকল শিশুরা সামজে প্রতিষ্ঠিত হতে পারবে। এরা দেশের মুখ উজ্জ্বল করতে সক্ষম হবে।