শেখ ফরিদ, দেবীগঞ্জ (পঞ্চগড়): কাশফুল, শোভন শুভ্র ফুল। প্রকৃতিতে কাশফুলের আনাগোনা দেখলেই প্রাণবন্ত ঋতু শরৎকালের রবি উদয় ঘটে প্রাণে। শরৎ ও কাশফুল যেন একই সুতায় গাথা। কাশফুলের সাথে সাদা মেঘের মিতালি দেখা যায় পুরো শরৎকাল জুড়েই। কিন্তু গ্রামবাংলার অপরুপ শোভা ও সৌন্দর্যের অধিকারী কাশবন এখন আর চোখে পড়ে না। কালের বিবর্তনে বিলুপ্তির পথে।
যুগ যুগ ধরে গ্রামের নদ-নদীর ধার, ঝোপ-ঝাড়, জঙ্গল, পুকুর, খাল-বিল, ঈদ গাঁহ মাঠ ও ফাঁকা জায়গায় পথচারীদের দৃষ্টি কাড়ত কাশফুল। রাস্তা দিয়ে যাওয়ার পথে মানুষের হৃদয় ছুঁয়ে যেত কাশফুলের সৌন্দর্য্যে। ধবল কাশফুল শোভন সুন্দর বলে সবুজ প্রাণ আর মেঘের আকাশ মিলে প্রকৃতি নয়নাভিরাম হয়ে উঠত।
কিন্তু এখন সেভাবে দেখা যায় না কাশবন। পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার গ্রামগঞ্জে বিচ্ছিন্নভাবে থাকা যে কয়টি কাশফুল চোখে পড়ে সেগুলোও হারিয়ে যাচ্ছে। সময়ের সাথে তাল মেলাতে গিয়ে সেখানে এখন তৈরি হয়েছে মৌসুমী ফসলের ক্ষেত। নদীর পাড়ে গড়ে ওঠা গ্রামগুলো এভাবেই শরতের সৌন্দর্যকে মুড়িয়ে দিচ্ছে সাদা কাফনে। সাধারণ মানুষের বিনোদন-প্রকৃতিতে দেখার শখ-আহ্লাদ যেন হারিয়ে যেতে বসেছে।
কাশবনের ব্যবহার বহুবিধ। চারাগাছ একটু বড় হলেই এর কিছু অংশ কেটে গরু-মহিষের খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা যায়। কাশ দিয়ে গ্রামের বধূরা ঝাটা, ডালি তৈরি করে আর কৃষকরা ঘরের ছাউনি হিসেবেও ব্যবহার করে থাকেন।
দেবীগঞ্জ করতোয়া ব্রিজের পশ্চিম দক্ষিণ দিকে প্রায় চার কিলোমিটার দূরে নদীর চরে দেখা মিলে সাদা কাশফুলের। এ যেন না চাইতে পাওয়া। কিছু তাই সকাল-বিকেল কাশফুলের সাথে মিতালী করতে যাচ্ছে অনেক মানুষ। সেলফি তুলতে দেখা যায় অনেককে।
দেবীগঞ্জ বাজার পাড়ার আল মুকতাদির নামের একজন বলেন, এখন কাশফুল আগের মত দেখা যায় না তাই চার কিলিমিটার দূরে মোটরসাইকেল নিয়ে আসি প্রশান্তি পেতে।
দেবীগঞ্জ সরকারি কলেজের ছাত্র নিয়াজ বলেন,আমি গল্প শুনছি দেবীগঞ্জের চারদিকে শুধু কাশফুল আর কাশফুল ছিল। এখন আর চোখে পরে না। তাই এত দূরে নদীর চরে এসেছি সেলফি তোলার জন্য। ময়নামতির চরের পশ্চিম পারে এই কাশফুলের মেলা। কিন্তু নদীতে পানি থাকায় অনেক ঘুরে যেতে হয় এই কাশবনে।
ঝাড় বাড়ি এলাকার জাকির হোসেন বলেন, বিকেলবেলা কাশফুল দেখার জন্য আমি আর আমার স্ত্রী এসেছি। কাশফুল দেখতে অনেক ভাল লাগে। তাই স্মৃতি করে রাখতে ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট দেই। আমার ফেসবুকে কাশফুলের ছবি দেখে কমেন্ট করে অনেকেই আসার ইচ্ছা প্রকাশ করেন।