রেজা-নুরের নেতৃত্বে আসছে নতুন দল

Slider রাজনীতি

অর্থনীতিবিদ ড. রেজা কিবরিয়া ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের নেতৃত্বে নতুন একটি রাজনৈতিক দল আত্মপ্রকাশ হতে যাচ্ছে। নতুন এই দলের নাম হতে পারে বাংলাদেশ অধিকার পার্টি (বিআরপি)। আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে ১০১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি ঘোষণার মধ্যদিয়ে এই দলের আত্মপ্রকাশ হওয়ার কথা রয়েছে। এ উপলক্ষে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার চেষ্টা করছেন দলটির নেতারা। যদিও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে এখনো অনুমতি মেলেনি। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে না পারলেও যেকোনো অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নতুন এই দলের নাম ঘোষণা করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

জানা যায়, বাংলাদেশ অধিকার পার্টির সঙ্গে একীভূত হতে পারে বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের নেতারা।
ড. রেজা কিবরিয়া আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়ার ছেলে। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফের মতো বড় বড় প্রতিষ্ঠান ছেড়ে রাজনীতিতে নেমেছেন পুরোদমে।

এর আগে ৩ বছর দায়িত্বে ছিলেন ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে গণফোরাম থেকে পদত্যাগ করেন তিনি। এর পরে প্রায় বিভিন্ন ইস্যুতে মাঠে সরব রয়েছেন বিশিষ্ট এই অর্থনীতিবিদ। গত ১৭ই সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের আংশিক কমিটি বর্ধিত করার লক্ষ্যে বিভিন্ন ইউনিটের নেতাদের সাক্ষাৎকার গ্রহণেও অংশ নেন তিনি। এবার বাংলাদেশ অধিকার পার্টির আহ্বায়ক হিসেবে শোনা যাচ্ছে তার নাম।

জানতে চাইলে ড. রেজা কিবরিয়া মানবজমিনকে বলেন, গত ৫০ বছরে বাংলাদেশের পুরো রাষ্ট্রের অবকাঠামোতে অনেক খুত আমরা ধরতে পেরেছি। আমার মনে হয় বড় ধরনের একটা পরিবর্তন দরকার। দেশটা পরিচালিত হচ্ছে গুটিকয়েকজনকে সুবিধা দেয়ার জন্য। কিন্তু সাধারণ মানুষকে এখানে চরমভাবে অবহেলা করা হচ্ছে। আর গণতন্ত্র থেকে আওয়ামী লীগ সরকার কতো দূরে চলে আসছে সেটা সবারই জানা। যে দল শুরু থেকেই গণতান্ত্রিক এখন সেই দলেরই প্রয়োজন। আর এই তরুণদের আদর্শ, নিষ্ঠা এবং সততা আমাকে আকৃষ্ট করেছে। আমি আশা করি- তাদের দ্বারাই এই দেশে পরিবর্তন আসতে পারে। তাই আমি ভবিষ্যতে তাদের সঙ্গে কাজ করতে চাই।

আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র বাইরে গিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন এই দল কতোটুকু কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারবে- এমন প্রশ্নে রেজা কিবরিয়া বলেন, দলের উত্থান-পতন হতেই পারে। এককালে মুসলিম লীগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ দল ছিল। আর এখন মুসলিম লীগের কোনো অস্তিত্বই খুঁজে পাই না। ইংল্যান্ডের লেবার পার্টি মাত্র ছয়জন দিয়ে শুরু করেছিল পরে তারা ক্ষমতায় গেল। আর বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারও এখন গণতান্ত্রিক পথ থেকে সরে এসেছে। আমি মনে করি জনগণ তাদের ইতিমধ্যে প্রত্যাখ্যান করেছে। আর একটা দলকে তো কোথাও না কোথাও থেকে শুরু করতে হয়। আমি মনে করি- এই দলে আদর্শবান ছেলেমেয়ে আছে। ওদেরকে নিয়ে আমি আশাবাদী।

২০১৮ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে আলোচনায় আসেন পটুয়াখালীর ছেলে নুরুল হক নুর। সে সময় ছিলেন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক। ২০১৯ সালে ডাকসু ভিপি নির্বাচিত হয়ে চমক সৃষ্টি করেন। এরপর থেকেই মাঠের রাজনীতিতে সক্রিয় নুর। বিভিন্ন ইস্যুতে সরকারের সমালোচনায় সরব তিনি। গত মাসে ঘোষণা দিয়েছেন নতুন একটি রাজনৈতিক দল করার।

জানতে চাইলে নুরুল হক নুর মানবজমিনকে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের যে আশা আকাঙ্ক্ষার রাষ্ট্র আমাদের প্রত্যাশা ছিল সে রাষ্ট্র আমরা বিনির্মাণ করতে পারিনি। মুক্তিযুদ্ধের সাম্য, মানবিক মর্যাদা এবং সামাজিক সুবিচার এর একটাও আমরা এই সমাজে কায়েম করতে পারিনি। আজ স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পরেও এসে দেখা যাচ্ছে এ দেশের মানুষের ভোটাধিকার হরণ করে সরকার গঠন করা হচ্ছে। মানুষ যে ন্যায়বিচার পাবে সেই আদালতকেও দলীয়করণ করা হয়েছে। এই অবস্থা থেকে এই দেশকে আমাদের মানবিক ও কল্যাণমুখী রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।

তিনি বলেন, বর্তমান সময়ে যে দলগুলো আছে তারা মুখে গণতন্ত্রের কথা বললেও মূলত তারা পরিবারকেন্দ্রিক বৃত্তের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। এই দলগুলোর অভ্যন্তরীণ গণতান্ত্রিক চর্চা না থাকায় যে দল যখন ক্ষমতায় যায় তারা চায়, বাংলাদেশে এক নায়কতন্ত্র কায়েম করতে। বাংলাদেশের মানুষ এটাকে ভালো চোখে দেখে না এবং সমর্থনও করে না। ঠিক একইভাবে আমাদের আন্তর্জাতিক মিত্ররাও বাংলাদেশকে ভালোভাবে দেখছে না। তাই সবাই বলছে, এই দেশকে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে নিয়ে যাওয়ার জন্য বিকল্প একটি নেতৃত্ব দরকার। এ কারণেই মূলত আমরা একটি রাজনৈতিক দল গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা গণমানুষের অধিকার নিয়ে লড়তে চাই। এ নিয়ে দেশ এবং বিদেশি বন্ধুদেরও আমরা ইতিবাচক সাড়া পাচ্ছি।

জাতীয় নির্বাচনকেন্দ্রিক কোনো চিন্তা করছেন কিনা- এমন প্রশ্নে নুর বলেন, রাজনৈতিক দলের সঙ্গে নির্বাচনটা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ২০১৪ সাল থেকেই দেশের মানুষ ভোট দিতে পারছে না। নির্বাচনের নামে এক প্রকার প্রহসন হচ্ছে। রাষ্ট্রীয় অর্থ খরচ করে পাতানো নির্বাচন করা হচ্ছে। সামনের নির্বাচন যাতে সকল দলের অংশগ্রহণ এবং কার্যকর করা যায় এ বিষয়ে আমাদের বিভিন্ন কর্মসূচি থাকবে। আর আমাদের দলের নিবন্ধনের বিষয়ে আমরা ইতিমধ্যে বেশ কিছু কাজ গুছিয়ে নিয়েছি। রাজনৈতিক দলের ঘোষণা না দিলেও আমরা ইতিমধ্যে ছাত্র, যুব, শ্রমিক, পেশাজীবী ও অঙ্গ সংগঠনের গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে কাজ করছি। দেশের বিভিন্ন জেলা পর্যায়েও আমরা আলাপ আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। আশা করছি, আমাদের দল আগামীতে গণমানুষের পক্ষেই কাজ করবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *