নগেন চন্দ্র বর্মণের বয়স এখন ৭০। স্ত্রী বিজয়া বালার বয়সও প্রায় ৬০। বয়সের ভাঁড়ে তেমন কোনো কাজ করতে পারেন না তারা। অনেক কষ্টে চার ছেলে ও এক মেয়েকে উচ্চশিক্ষিত করে তুলেছেন। শেষ সম্বল দুটি বড় পুকুরসহ ১৪ বিঘা জমি আদরের ছোট ছেলেকে দিয়েছেন। এত কিছুর পরও বৃদ্ধ নগেন ও তার স্ত্রীর দায়িত্ব নেয়নি কেউই। উল্টো ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছেন সন্তানেরা। জীবনের শেষ বেলায় তাই এই দম্পতির ঠাঁই হয়েছে গোয়াল ঘরে।
ঘটনাটি ঘটেছে ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের উত্তর বালুবাড়ি গ্রামে। বৃদ্ধ এই দম্পতির পাঁচ সন্তানের কেউই তাদের দায়িত্ব নেয়নি। এমনিক কিছুদিন দুবেলা বৃদ্ধ বাবা মাকে বাটখারা দিয়ে মেপে ভাত দিলেও গত এক সপ্তাহ থেকে তাও বন্ধ। এমন ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেছেন স্থানীয়রা।
জানা গেছে, বৃদ্ধ এ দম্পতি দুটি বড় পুকুরসহ ১৪ বিঘা জমি ছোট ছেলে স্কুল শিক্ষক গণেশকে লিখে দেন। কিন্তু ছোট ছেলে গণেশও বৃদ্ধ পিতা মাতার প্রতি অসৎ আচরণ করতে থাকেন। কিছুদিন খেতে দিলেও এখন তা বন্ধ করে দিয়েছেন গণেশ ও তার স্ত্রী। বাড়িতে থাকার জায়গাও দেননি। তাই বৃদ্ধ নগেন ও তা স্ত্রী বিজয়া বালা গোয়াল ঘরের বারান্দায় ঠাঁই নিয়েছেন।
নগেন চন্দ্র বর্মণের অভিযোগ, নিজের সর্বস্ব সন্তানদের দেওয়ার কারণে এই করুণ পরিণতি। কোনো সন্তানই তাদের দায়িত্ব নিচ্ছেন না। তাই যত দিন বেঁচে থাকবেন ততদিন ভরণ-পোষণ চান সন্তানদের কাছে। এ বিষয়ে স্থানীয় চেয়ারম্যানের কাছে গিয়েও কোনো সুফল পাচ্ছেন না তারা।
তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করেন ছোট ছেলে স্কুল শিক্ষক গণেশ। তিনি বলেন, ‘এটি তার একান্ত ব্যক্তিগত ও পারিবারিক বিষয়।’ স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জানান, বৃদ্ধ পিতা মাতার গোয়াল ঘরে থাকা অমানবিক। বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) জানান, বিষয়টি তিনি জেনেছেন। অভিযোগ পেলে তাৎক্ষণিক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।